দশম শ্রেনী বাংলা সাহিত্য সঞ্চয়ন ১২. হারিয়ে যাওয়া কালি কলম - শ্রীপান্থ

হারিয়ে যাওয়া কালি কলম – শ্রীপান্থ

লেখক পরিচিতি

১৯৩২  সালে নিখিল সরকার জন্ম গ্রহণ করেন ময়মনসিংহ জেলার গ্রামের  গৌরীপুর গ্রামে | ময়মনসিংহ  তেই নিখিল সরকার এর শিক্ষা জীবনের সূচনা হয় | পরে অবশ্য তিনি উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য কলকাতা আসেন | কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ইতিহাস বিষয়ের ওপর স্নাতক হন | তাঁর কর্মজীবনের হাতেখড়ি হয় সাংবাদিকতার মাধ্যমে | কর্মজীবনের শুরুর দিকে তিনি যুগান্তর পত্রিকার সাথেও যুক্ত ছিলেন | সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত থাকার সময়কালেই তার মধ্যে সাহিত্য প্রতিভার বিকাশ ঘটে | তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ গুলির মধ্যে কয়েকটি হলো – শ্রীপান্থের কলকাতা,আজব নগরী,মেটিয়াবুরুজের নবাব,ঠগি,দেবদাসী ইত্যাদি | আজব নগরী হলো শ্রীপান্থের লেখা প্রথম গ্রন্থ ,  এবং বটতলা তাঁর লেখা শেষ গ্রন্থ | নিখিল সরকার ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে আনন্দ পুরস্কার পেয়েছিলেন | ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে ৭৩ বছর বয়সে নিখিল সরকার-এর মৃত হয় | কঠিন ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান |

 

সারাংশ

আজকের এই আধুনিক যুগে কালি কলমের ব্যবহার নিতান্তই সীমিত;প্রায় সবই “চৌকো আয়নার মত একটা কাচের স্ক্রিন বা পর্দা | আর তাঁর নিচে টাইপ রাইটার দের মতন কিবোর্ড |” লেখালেখির অফিস হলেও,লেখক ছাড়া আর কারোর কাছে কালি কলম খুঁজে পাওয়ার জো নেই | কালক্রমে লেখকদের অবস্থা সেই প্রবাদের মত, “কালি নেই,কলম নেই,বলে আমি মুন্সি” | প্রবন্ধকার গ্রামের ছেলে, তারা কলম তৈরি করতেন বাঁশের কঞ্চি কেটে; ‘ লেখার পাত ‘ বলতে ছিল কলাপাতা |  সেটাকেই কাটছাঁট করে ‘ কাগজের  মত সাইজ ‘  করে তাতেই করতেন হোমটাস্ক |  স্কুলের মাস্টার মশাই তা দেখা হয়ে গেলে ছিঁড়ে  ফেরত দিতেন পড়ুয়াদের -তারা সেটা ফেলে দিতেন পুকুরে | বাইরে ফেললে, গরু  খেয়ে নিলে আবার অমঙ্গল | গরুকে অক্ষর  খাওয়ানো নাকি পাপ ! “ বাঁশের কলম, মাটির দোয়াত, ঘরে তৈরি কালি আর কলাপাতা “ – এই নিয়েই তাদের প্রথম লেখালেখি |  তাই লেখক দের সাথে কালিকলম-এর সম্পর্ক খুবই গভীর |  ফিনিশীয় হলে  লেখক হয়তো কোন  হার কুড়িয়ে নিয়ে কলম হিসেবে ব্যবহার করতে ন | কিংবা তিনি যদি হতেল স্বয়ং জুলিয়াস সিজার, তাও তার কারিগর বড় একটা স্টাইলাস বানিয়ে দিত, যা  হত  তার সম্বল |  আজকাল তো বাঁশের কলম খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর !  খাগের কলম তো কেবল  সরস্বতী পুজোর সময় নজরে আসে |  পালকের কলম ও নেই আর | দোয়াত কলম তো কেবল  সাজানোর উপকরণ আজ | এককালে পন্ডিত মশাই এর কলম খ্যাত ছিল কানে গুঁজে রাখার জন্য | যদিও কলমের দুনিয়ায় সত্তিকারের বিপ্লব ঘটায় ফাউন্টেন পেন যার আগের কালের নাম ছিল ‘ রিজার্ভার পেন ‘ |  লেখক এর অবশ্য এই ফাউন্টেন পেন কেনার সুযোগ আসে বহু পরে, বাঁশ-এর পেন আর বাহারি নামের কালি বড়ি ঘরের বানানো কালি ছিল তার সম্বল | শেষ বয়স অবধি নিবের কলম কলমে লেখালেখি করতেন একমাত্র সত্যজিৎ রায় |  লিপি শিল্প ছিল তার নেশা | তবে প্রবন্ধকার আজ বলপেনের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন  নিজে, “তুমি সবল,আমি দুর্বল | তুমি সাহসী, আমি  ভীরু | তবু যদি আমাকে হত্যা করতে চাও, আচ্ছা, তবে তাই হোক | ধরে নাও, আমি মৃত | “

 

1. সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখ:

1.1) ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ রচনাটি কোন গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে ?
(ক) পত্রপুট 
(খ) কালি আছে কাগজ নেই, কলম আছে মন নেই
(গ) বটতলা 
(ঘ)  চিত্রা

 উত্তর(খ) কালি আছে কাগজ নেই, কলম আছে মন নেই

1.2) শ্রীপান্থের আসল নাম কি ?
(ক) সুবোধ ঘোষ
(খ) অন্নদাশঙ্কর রায়
(গ) নিখিল সরকার
(ঘ) জীবনানন্দ দাশ

  উত্তর (গ) নিখিল সরকার

1.3) নিখিল সরকার রচিত একটি গ্রন্থ হল –
(ক) কঙ্কাবতী
(খ) মেটিয়াবুরুজের নবাব
(গ) মানসী
(ঘ) সবকটি

 উত্তর (খ) মেটিয়াবুরুজের নবাব

1.4) “ কালি  কলম  মন,  লেখে  তিনজন | “- এটি একটি
(ক) ধাঁধা
(খ) উপকথা
(গ)  প্রবাদ
(ঘ)  কোনোটিই নয়

 উত্তর(গ)  প্রবাদ

1.5) লেখক যে অফিসে কাজ করেন, সেটি –
(ক) লেখালেখির অফিস
(খ) পুঁথি লেখার অফিস
(গ) গল্প  খানা 
(ঘ) ট্যুরিজম অফিস

 উত্তর (ক) লেখালেখির অফিস

1.6) “ কালি নেই, কলম নেই, বলে আমি ______”|
(ক) লেখক
(খ) খেলোয়াড়
(গ) পন্ডিত
(ঘ) মুন্সি

  উত্তর –  (ঘ) মুন্সি

1.7) হারিয়ে যাওয়া কালি কলম রচনায় লেখক-এর বয়স কত বলে ধারণা করা হয়েছিল ?
(ক) ৩০-৪০
(খ) ৪০-৫০
(গ) ৫০-৬০
(ঘ) ৬০-৭০

  উত্তর –  (গ) ৫০-৬০

1.8) লেখার পাতা হিসেবে শৈশবে লেখকদের ছিল –
(ক) বট পাতা
(খ) কলাপাতা
(গ) শাল পাতা
(ঘ) খাতা

  উত্তর(খ) কলাপাতা

1.9) কলাপাতায় হোমটাস্ক করে লেখক নিয়ে যেতেন –
(ক) টোলে
(খ) স্কুলে
(গ) গুরু মশাইয়ের কাছে
(ঘ) কোনোটিই নয়

  উত্তর (খ) স্কুলে

1.10) অক্ষরজ্ঞানহীন লোককে বলে –
(ক) ওর  অক্ষরজ্ঞান শূন্য
(খ)  ও একটা গরু
(গ) ও একটা গাধা
(ঘ) ওর কাছে ক অক্ষর গোমাংস

  উত্তর (ঘ) ওর কাছে ক অক্ষর গোমাংস

1.11) “ ছিড়ে পত্র  না ছারে মসি “- ‘মসি’ শব্দের অর্থ কি ?
(ক) কালি
(খ) কলম
(গ) পৃষ্ঠা
(ঘ) কলমের নিব

 উত্তর (ক) কালি

1.12) লেখক যখন ছোট ছিলেন, তখন তাদের বাড়িতে কিসে রান্না করা হতো ?
(ক) LPG তে
(খ) স্টোভে
(গ) উনুনে
(ঘ) কোনোটিই নয়

  উত্তর (গ) উনুনে

1.13) কালি তৈরি করতে লাগে –
(ক) চুন
(খ) রং
(গ) ত্রিফলা
(ঘ) ফিটকিরি

  উত্তর – (গ) ত্রিফলা

1.14) কড়াইয়ের তলায় কালি জমলে, তা কি দিয়ে  ঘষে তোলা হতো ?
(ক) লাউ পাতা
(খ) শাল পাতা
(গ) তেতুল পাতা
(ঘ) লেবু  পাতা

  উত্তর (ক)  লাউ পাতা

1.15) লেখক নীলনদের তীর থেকে কি নিয়ে আসতেন ?
(ক) শলাকা
(খ) পাথর
(গ) নলখাগড়া
(ঘ) সবকটি

   উত্তর –  (গ) নলখাগড়া

1.16) ব্রোঞ্জের শলাকার পোশাকি নামটি কি ?
(ক) স্টাইলাস
(খ) স্টাইলিশ
(গ) ফাইলস
(ঘ) সবকটি

   উত্তর(ক) স্টাইলাস

1.17) সিজার স্টাইলাস দিয়ে আঘাত করেছিলেন –
(ক) কাসকাকে
(খ) ম্যাকবেথকে
(গ) জুলিয়াস কে
(ঘ)  কোনাটিই নয়

  উত্তর – (ক) কাসকাকে 

1.18) ‘ফাউন্টেন পেনের এক বিপদ’ – কোন বিপদের কথা বলা হয়েছে ?
(ক) লেখককে নেশাগ্রস্ত করা
(খ) যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যায় না  
(গ) লিখতে লিখতে পেনের নিব ভোঁতা হয়ে যাওয়া
(ঘ) কোনোটিই নয়

উত্তর (ক) লেখককে নেশাগ্রস্ত করা

1.19) যারা ওস্তাদ কলমবাজ, তাদেরকে এককথায় কি বলা হয় ?
(ক) পন্ডিত 
(খ) শিক্ষক 
(গ) খোশনবিশ 
(ঘ) লিপিকুশলী

 উত্তর (ঘ) লিপিকুশলী

1.20) “আমাদের মধ্যে যারা ওস্তাদ কলমবাজ তারা ওই কালো জলে ________ ঘষত | “ কি ঘষত ?
(ক) চক
(খ) চন্দন 
(গ) হরিতকী 
(ঘ) আমলকি 

  উত্তর – (গ) হরিতকী

 

2. সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর :

2.1) নিখিল সরকারের ছদ্মনাম কি ?

 উত্তর – নিখিল সরকার-এর ছদ্মনাম ছিল শ্রীপান্থ |

2.2) “লেখে তিনজন |”-এই ‘তিনজন’ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে ?

উত্তর –  শ্রীপান্থের লেখা হারিয়ে যাওয়া কালি কলম গল্পে তিনজন বলতে  কালি,কলম এবং মনকে বোঝানো হয়েছে |

2.3) “গরুকে অক্ষর খাওয়ানো ও নাকি পাপ |”-  লেখকরা শৈশবে তাই কি করতেন ?

 উত্তর –  উদ্ধৃতাংশটি শ্রীপান্থের লেখা ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ থেকে নেওয়া হয়েছে | শৈশবে লেখকরা মাস্টারমশাইয়ের ফেরত দেওয়া কলাপাতার অংশটি পুকুরের জলে ফেলে  আসতেন,যাতে গরু সেই পাতা খেতে না পারে  এবং অমঙ্গল না হয় |

2.4) গল্পের লেখক একদিন অফিসে কলম নিয়ে যেতে ভুলে গেলে ‘তবেই বিপদ’ কেন বলেছিলেন ?

উত্তর –  শ্রীপান্থের লেখা ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ গল্পে লেখক বলেছেন যে তার অফিসে তিনি ছাড়া আর কেউ কলম ব্যবহার করেন না |আর তাছাড়া কারোর কাছে যদি তিনি কলম পানও, সেইসব ভোতা মুখের কলম দিয়ে লিখে লেখক সুখ পান না |

2.5) লেখক এর অফিসে একমাত্র লেখক ছাড়া সবার সামনে কি থাকে ?

 উত্তর – শ্রীপান্থের লেখা ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ গল্পে লেখক এর অফিসে লেখক ছাড়া বাকি সবার সামনে থাকে চৌকো আয়নার মত একটা কাচের স্ক্রিন বা পর্দা অর্থাৎ কম্পিউটার |

2.6) “ বলতে গেলে তাই নিয়ে আমাদের প্রথম লেখালেখি “- কি কি নিয়ে তারা প্রথম লেখালেখি শুরু করেন

উত্তর – শ্রীপান্থের লেখা ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ গল্পে লেখকরা মাটির দোয়াত,বাঁশের কলম, ঘরে তৈরি কালি এবং লেখার জন্য কলাপাতা এসব ব্যাবহার করতেন লেখার জন্য |

2.7) স্টাইলাস কি ?

 উত্তর –  ব্রোঞ্জের তৈরি সরু কাঠি যার নাম স্টাইলাস | প্রাচীনকালে এই ব্রোঞ্জের তৈরি সরুকাঠি লেখার জন্য কলম হিসেবে ব্যবহার করা হতো |

2.8) যদি লেখক-এর জন্ম মিশর-এ হত তবে তিনি কি করতেন বলেছেন ?

উত্তর –  শ্রীপান্থের লেখা ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ গল্পের লেখকের জন্ম যদি মিশর-এ হতো, তবে তিনি নীলনদের তীর থেকে নলখাগড়া ভেঙে নিয়ে তা কলম হিসেবে ব্যবহার করতেন |

2.9) লেখক যদি ফিনিশীয় হতেন তবে তিনি কি করতেন ?

 উত্তর –  শ্রীপান্থের লেখা হারিয়ে যাওয়া কালি কলম গল্পে লেখক বলেছেন তিনি ফিনিশীয় হলে প্রান্ত থেকে হাড় কুড়িয়ে সেগুলিকে কলম হিসেবে ব্যবহার করতেন |

2.10) হারিয়ে যাওয়া কালি কলম গল্পটি কোন গ্রন্থের অন্তর্গত ?

উত্তর – আমাদের পাঠ্য ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ গল্পটি শ্রীপান্থ রচিত ‘কালি আছে কাগজ নেই , কলম আছে মন নেই’ গ্রন্থের অন্তর্গত |

2.11) পালকের কলম বর্তমানে দেখার জন্য কিসের উপর নির্ভর করে থাকতে হয় ?

 উত্তর – শ্রীপান্থের লেখা ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ গল্পের লেখক বলেছেন বর্তমানে পালকের কলম দেখার জন্য তৈলচিত্র বা ফটোগ্রাফারের ওপর নির্ভর করে থাকতে হয় |

2.12) পাখির পালকের কলম-এর ইংরেজি নাম কি ?

 উত্তর – পাখির পালকের কলম-এর ইংরেজি নাম হল কুইল | এটি মূলত পাখির পালক থেকে তৈরি হত |

2.13) “এমনকি আমি যদি রোম সাম্রাজ্যের অধীশ্বর হতাম” – এখানে কোন রোমান অধীশ্বর এর কথা জানা গিয়েছে ?

 উত্তর – শ্রীপান্থের লেখা ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ গল্পের লেখক রোমান সাম্রাজ্যের অধীশ্বর জুলিয়াস সিজারের কথা উল্লেখ করেছেন |

2.14) স্টাইলাস কে নিয়ে রোমের কোন ইতিহাসের কথা লেখক উল্লেখ করেছেন ?

 উত্তর – শ্রীপান্থের লেখা ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ গল্পের লেখক রোমের এক ইতিহাসের কথা উল্লেখ করেছেন স্টাইলাস কে নিয়ে | সেখানে স্টাইলাস দিয়ে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার কাসকা  কে আঘাত করেছিলেন |

2.15) বাঙালি সাংবাদিকদের ইংরেজি দেখে কে কি বলতেন ?

উত্তর – শ্রীপান্থের লেখা হারিয়ে যাওয়া কালি কলম গল্পে লেখক বলেছেন যে বাঙালি সাংবাদিকদের  ইংরেজি দেখে লর্ড কার্জন বলতেন ‘বাবু কুইল ড্রাইভারস’ |

2.16) ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় কিভাবে মারা গিয়েছিলেন ?

 উত্তর –  তৈলক্যনাথ মুখোপাধ্যায় নিজের হাতের কলমের আঘাতে মারা গিয়েছিলেন |

2.17)  খাগের কলম ও দোয়াত-এর ব্যবহার কেমন লক্ষ্য করা যায় ?

 উত্তর –  শ্রীপান্থের লেখা হারিয়ে যাওয়া কালি কলম গল্পে লেখক বলেছেন যে খাগের কলম ও দোয়াত -এর ব্যবহার বর্তমানে একমাত্র সরস্বতী পুজোর সময় লক্ষ্য করা যায় |

2.18) “এই নেশা আমি পেয়েছি একমাত্র শরৎ দার কাছ থেকে “ –  এখানে কোন নেশার কথা বলা হয়েছে ?

 উত্তর – শ্রীপান্থের লেখা ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ গল্প থেকে নেওয়া উদ্ধৃতাংশটি | এখানে লেখকের নিজের কথা বলেছেন, তিনি শরৎচন্দ্রের কাছ থেকে ফাউন্টেনপেন সংগ্রহের নেশা পেয়েছিলেন |

2.19) হারিয়ে যাওয়া কালি কলম গল্পে সবচেয়ে দামি কলমটির মূল্য কত ছিল ?

 উত্তর – ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ গল্পের সবচেয়ে দামি কলমটির মূল্য বলা হয়েছিল আড়াই হাজার পাউন্ড , যা ভারতীয় মুদ্রায় ১ লক্ষ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা |

2.20) দোয়াত কত প্রকারের হয় ?

 উত্তর –  শ্রীপান্থের লেখা হারিয়ে যাওয়া কালি কলম গল্পে  লেখক নানা রকমের দোয়াত এর কথা উল্লেখ করেছেন |  যেমন- মাটির দোয়াত, কাচের দোয়াত, শ্বেত পাথরের দোয়াত ,পিতলের দোয়াত, ব্রোঞ্জের দোয়াত, ভেড়ার সিং এবং সোনার দোয়াত এর কথাও বলেছেন |

 

3. ব্যাখ্যাভিত্তিক প্রশ্নোত্তর :

3.1) প্রাচীনকালে গ্রামের ছেলেরা কিভাবে কলম তৈরি করত ?

 উত্তর – শ্রীপান্থ রচিত হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধে  তিনি খুব নিপুণভাবে আগেকার দিনে কিভাবে গ্রামের ছেলেরা কলম তৈরি করত তার কথা উল্লেখ করেছেন |  সেই সময়ে বিদ্যাচর্চার অথবা এসব লেখালেখি ব্যাপার এত সরল ছিল না |  যে সময় ছাত্ররা ঘরোয়া পদ্ধতিতে বাড়িতেই কালি ও কলম তৈরি করত | সে সময়ে মূলত তাদের কলম তৈরির মূল উপাদান ছিল বাঁশের কঞ্চি | কাঁচা বাঁশের কঞ্চি কেটে নিয়ে তারপরে তার  আগার অংশ প্রথমে সূচালো করে কেটে নিতে হতো |  তারপরে  কঞ্চির  সেই  সূচালো করে কাটামুখের অংশটি একটু চিরে দিতে হতো |  লেখালেখি সময় কালি যেন বেশি পরিমাণে বেরিয়ে না পরে তাই মুখটা চিরে দিতে হতো | সে সময় তারা লেখালেখি করত কলা পাতার উপরে |

3.2)  ফাউন্টেন পেনের জন্ম কিভাবে হয়েছিল তা আলোচনা করো |

উত্তর –  শ্রীপান্থ রচিত হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধের লেখক উল্লেখ করেছেন, লুইস এডসন ওয়াটারম্যান ফাউন্টেন পেনের আবিষ্কারক ছিলেন |  তারপরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেই ফাউন্টেন পেনের বাংলায় নামকরণ করেছিলেন ঝরনা কলম |  লুইস এডসন ওয়াটারম্যান এর এই ফাউন্টেন পেন আবিষ্কার করার  পেছনেও রয়েছে এক কাহিনী |  লুইস এডসন ওয়াটারম্যান ছিলেন পেশায় একজন ব্যবসায়ী |  একদিন তিনি তার ব্যবসার জন্য চুক্তিপত্র তৈরি করার কাজে গিয়েছিলেন এবং সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন দোয়াত এবং কলম |  চুক্তিপত্র লিখতে লিখতে দোয়াত টি  কালি সমেত উল্টে যায় তার ওপর | তৎক্ষণাৎ তিনি কালি খুঁজতে বেরিয়ে পড়েন, এবং কালি নিয়ে ফিরে এসে তিনি জানতে পারেন যে ওই সময়ে অন্য কোন ব্যবসায়ী সেই চুক্তি পাকা করে ফেলেছেন |  ফলে এই ঘটনায় বিমর্ষ হয়ে এই দোয়াত ও কলমের বিহিত করতে তিনি আবিষ্কার করেছিলেন এই ফাউন্টেন পেন |

3.3) “ ভাবি, আচ্ছা আমি যদি যিশুখ্রিস্টের আগে জন্মাতাম ! “ –  কোন প্রসঙ্গে লেখোকের মনে হয়েছে এমন ?  যিশুখ্রিস্টের জন্মের আগে জন্মালে তিনি কি করতেন ?

 উত্তর –  শ্রীপান্থ রচিত হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধের লেখকের নিজের ছোটবেলায় যেমন  দোয়াত, কালি তৈরি করে, কলম তৈরি করে তারপর  লিখতেন | তিনি তার এই  অতীতের স্মৃতি মনে করতে করতে এমন ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন বলা চলে |

                   লেখক কল্পনাপ্রবণ হয়ে মনে করেছেন যে তিনি যদি যিশুখ্রিস্টের জন্মের আগে জন্মাতেন,প্রাচীন মিশরে যদি তার জন্ম হতো, তবে তিনি নীল নদের তীরে গিয়ে সেখান থেকে নলখাগড়া ভেঙে  নিয়ে আসতেন |  তারপরে তা ভোঁতা করে  তুলির মত করে নিয়ে লিখতেন |  আবার যদি তার সুমেরীয় বা ফিনিশীয় সভ্যতায় জন্ম হত তাহলে তিনি প্রান্ত থেকে হাড়  কুড়িয়ে নিয়ে এসে তা দিয়ে কলম বানাতেন | আবার তিনিই এই কল্পনা করেছেন যে যদি তিনি রোমান সাম্রাজ্যের অধীশ্বর হতেন তবে জুলিয়াস সিজারের মত  স্টাইলাস ব্যবহার করতে পারতেন | এমন ভাবনার মধ্যে দিয়েই লেখক পূর্বের যুগে ফিরে যেতে চেয়েছে |

3.4) “ পালকের কলম তো দূরস্থান,দোয়াত কলমই বা আজ কোথায় ? – গল্পের লেখকের পালকের পেন সম্পর্কে কি কি বলেছেন ? দোয়াত কলম সম্পর্কে লেখ কি কি তথ্য তুলে ধরেছেন ?

 উত্তর –  শ্রীপান্থ এর লেখা হারিয়ে যাওয়া কালি কলম রচনা থেকে  উদ্ধৃত অংশটি নেয়া হয়েছে |  এই রচনায় লেখক বিভিন্ন ধরনের কলম সম্পর্কে আমাদের ধারণা দিয়েছেন |

                  পালকের কলম গুলিকে বলা হয় কুইল | এই কলম গুলি মূলত পাখি-র পালক দিয়ে তৈরি হতো | এবং পাখির পালকের এর ইংরেজি  নাম ছিল কুইল | লেখক গল্পে বলেছেন খাগের কলম, বাঁশের কলম ইত্যাদি চলে যাওয়ার  পরে  এক সময় পুরো পালকের কলম এর আধিপত্য ছিল |  এছাড়া ও তিনি  আক্ষেপ প্রকাশ করে এই নিয়ে যে আজকে যদি কারো পালকের কলম দেখার  ইচ্ছে হয়, তবে তাকে নির্ভর করে থাকতে হবে ফটোগ্রাফারের উপরে |  কারণ এখন কার সময়ে আর আর ওসব  মেলা দুঃসাধ্য |  উনবিংশ শতকেও  পালকের কলম এর প্রচলন ছিল |

       লেখক তাঁর শৈশবকালে কঞ্চির কলম ও  দোয়াত ব্যবহার করতেন | তিনি কালি তৈরি করে তা কাচের দোয়াতে রাখতেন | কাঁচের পোর্সেলিনের, শ্বেতপাথর এর,পিতলের আরো যে কত ধরনের দোয়াত পাওয়া যেত তার হিসেব মেলা ভার |  এছাড়াও সোনার দোয়াত ও পাওয়া যেত |একসময় পরীক্ষায় ভালো ভাবে উত্তীর্ণ হলে বয়স্করা  আশীর্বাদ করতেন –  “তোমার সোনার দোয়াত কলম হোক | “ এই বলে | এক কালে যে দোয়াত কলমের এত ব্যবহার ছিল তা আজ উধাও, এই নিয়ে লেখক আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন |

About The Author

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top