কবি পরিচিতি
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরে। তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম চরিত্র টেনিদার স্রষ্টা। তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল সূর্যসারথী, দুঃশাসন, ভোগবতী প্রভৃতি। শিলালিপি, লালমাটি, পদসঞ্চার তাঁর রচিত জনপ্রিয় উপন্যাস।
সারাংশ
এই গল্পে মূল চারটি চরিত্র হল টেনিদা, ক্যাবলা, প্যালা ও হাবুল। তাঁরা একটি বনভোজনের পরিকল্পনা করেছে। সেই পিকনিক করতে গিয়ে কী কী সমস্যার মধ্যে তাদের পরতে হয়েছে এসব নিয়েই গল্পটি তৈরি হয়েছে। প্রথমেই হাবুল ও টেনিদা পিকনিকের খাবারের তালিকা তৈরি করছিল। প্যালা আবার মাঝখানে আলু ভাজা, শুক্তো, চচ্চড়ি, কুমড়োর ছক্কার মতো দেশি খাবারের কথা বলায় টেনিদা তাকে উল্লুক বলেন। টেনিদা রেগে চলে যেতে লাগলে হাবুল, প্যালা তাকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করে। এরপর বিরিয়ানি, কোর্মা, কোপ্তা প্রভৃতির একটি লিস্ট বানানো হলেও দশ-টাকা ছ-আনা চাঁদা ওঠায় কিছু আইটেম বাদ দিয়ে খিচুড়ি, আলুভাজা ও অন্যান্যর একটি লিস্ট বানানো হয়। টেনিদাকে খুসি করতে প্যালা ডিমের একটি আইটেম বাড়াতে বলে। তাই রাজহাঁসের ডিম আনার দায়িত্ব পরে প্যালার উপর। কিন্তু সেটাও ব্যর্থ হয় এবং শেষে মাদ্রাজি ডিম কেনা হয়। পরদিন বনভোজনের উদ্দেশ্যে তাঁরা চারজন রওনা দেয়। মাঝে টেনিদা লেডিকেনির স্বাদ নেওয়ার নামে পুরো হাঁড়িটাই একা শেষ করে দেয়। এরপর স্টেশন থেকে পিচ্ছিল কাঁচা রাস্তা পেরিয়ে ক্যাবলার মামারবাড়ির কাছে বাগানবাড়িতে পৌঁছতে গিয়ে ক্যবলা ছাড়া বাকি তিনজনই মাটিতে আছাড় খায় এবং ডিমের পুঁটলি, আমের আচার ও রসগোল্লা মাটিতে পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। আর শেষে দেখা যায় বাঁদরের দল চাল, ডাল, আলুর পুঁটলি নিয়ে কাঁঠাল গাছের মাথায় উঠে পড়ে। আর তাই তাদের শেষে জলপাই খেতে হয়। এইভাবেই বনভোজন ফলভোজনে পরিণত হয়।
হাতে কলমে
১.১ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের কোন বিখ্যাত চরিত্রের সৃষ্টিকর্তা?
উঃ- নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত চরিত্র “টেনিদা”-র সৃষ্টিকর্তা।
১.২ তাঁর লেখা দুটি উপন্যাসের নাম লেখো।
উঃ- তাঁর লেখা দুটি উপন্যাসের নাম হলো শিলালিপি, লালমাটি।
২. নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর দাও।
২.১ বনভোজনের উদ্যোগ কাদের মধ্যে দেখা দিয়েছিল?
উঃ- বনভোজনের উদ্যোগ দেখা দিয়েছিল টেনিদা, হাবুল, প্যালা ও ক্যাবলার মধ্যে।
২.২ বনভোজনের জায়গা কোথায় ঠিক হয়েছিল?
উঃ- বাগুইআটি ছাড়িয়ে চারটে স্টেশন পরে ক্যাবলার মামারবাড়ির বাগান বাড়িতে বনভোজন হবে ঠিক হয়েছিল।
২.৩ বনভোজনের জায়গায় কীভাবে যাওয়া যাবে?
উঃ- বাগুইআটি থেকে চারটে স্টেশন দূরে মার্টিন রেলে চাপতে হবে। তারপর ওখান থেকে কাঁচামাটির রাস্তায় হাঁটা পথে যেতে হবে।
২.৪ রাজহাঁসের ডিম আনার দায়িত্ব কে নিয়েছিল?
উঃ- রাজহাঁসের ডিম আনার দায়িত্ব প্যালা নিয়েছিল।
২.৫ বনভোজনের বেশিরভাগ সামগ্রী কারা সাবাড় করেছিল?
উঃ- টেনিদা লেডিকেনি ও বাকি সামগ্রী বাদড়ে সাবাড় করেছিল।
২.৬ কোন খাবারের কারণে বনভোজন ফলভোজনে পরিণত হলো?
উঃ- খিচুড়ি রান্নার সামগ্রী আলু বাঁদরের পেটে যাওয়ায় বনভোজন ফলভোজনে পরিণত হয়েছিল।
৩. নীচের শব্দগুলির সন্ধিবিচ্ছেদ করোঃ
মোগলাই = মোগল + আই
রান্না = রাঁধ্ + না
বৃষ্টি = বৃষ্ + তি
পরীক্ষা = পরি + ঈক্ষা
আবিষ্কার = আবিঃ + কার
৪. নীচের শব্দগুলির ধ্বনিতাত্ত্বিক বিচার করোঃ
বিচ্ছিরি = বিশ্রী > বিচ্ছিরি (সমীভবন)
প্ল্যান-ট্যান = অনুকার শব্দ
লিস্টি = লিস্ট > লিস্টি – ধ্বন্যাগম (‘ই’- স্বরধ্বনির আগমন)
ভদ্দর = ভদ্র > ভদ্দর (সমীভবন)
ইস্টুপিড = স্টুপিড > ইস্টুপিড – আদি স্বরাগম (‘ই’ ধ্বনির)
৫. নীচের বাক্যগুলি প্রত্যেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যযুক্ত। বৈশিষ্ট্যগুলি খুঁজে নিয়ে লেখোঃ
৫.১ আর সে গাট্টা, ঠাট্টার জিনিস নয় – জুতসই লাগলে স্রেফ গালপাট্টা উড়ে যাবে।
উঃ- গাট্টা, ঠাট্টা, পাট্টা শব্দ তিনটিতে অতিরিক্ত একটি ‘ট’ ধ্বনির আগমন ঘটেছে।
৫.২ দ্রাক্ষাফল অতিশয় খাট্টা।
উঃ- এখানে খাট্টা শব্দের সঙ্গে উচ্চারনে আর একটি ‘ট’ ধ্বনির আগমন ঘটেছে। দ্রাক্ষাফল এক অতিশয় তৎসম শব্দ এবং “খাট্টা” শব্দটি হিন্দি শব্দ। একই বাক্যে তৎসম শব্দ ও বিদেশি শব্দের সহাবস্থান হয়েছে।
৫.৩ আহা – হা চৈইত্যা যাইত্যাছ কেন?
উঃ- ‘চৈইত্যা যাইত্যাছ’ শব্দদুটি বাঙালি উপভাষায় ব্যবহৃত। এটি অপনিহিতিজনিত কারণে এমন উচ্চারিত হয়। রাঢ়ী উপভাষায় শব্দদুটির উচ্চারন হবে চটে যাচ্ছ।
৫.৪ এক চড়ে গালের বোম্বা উড়িয়ে দেব।
উঃ- ইংরেজি শব্দ “নড়সন” কথাটি থেকে বোম্বা কথাটি এসেছে। বোম অর্থে বারুদপূর্ন গোলক। এখানে গালের ফোলা উড়িয়ে দেওয়া অর্থে ব্যবহৃত।
৬. ব্যাসবাক্যসহ সমাসের নাম লেখোঃ
বনভোজন = বনে ভোজন (অধিকরণ তৎপুরুষ সমাস)
দলপতি = দলের পতি (সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস)
বেরসিক = নয় রসিক (নতৎপুরুষ সমাস)
দ্রাক্ষাফল = দ্রাক্ষা নামক ফল (মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস)
রেলগাড়ি = রেল বাহিত গাড়ি (মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস)
৭. নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করোঃ
৭.১ লাফিয়ে উঠে টেনিদা বাগানের দিকে ছুটল। (জটিল বাক্যে)
উঃ- লাফিয়ে উঠে টেনিদা যেদিকে ছুটল সেদিকে বাগান।
৭.২ চোখের পলকে বানরগুলো গাছের মাথায়। (জটিল বাক্যে)
উঃ- যেই-না চোখের পলক ফেলা, অমনি বানরগুলো গাছের মাথায়।
৭.৩ দুপুরবেলায় আসিস। বাবা-মেজদা অফিসে যাওয়ার পরে। (একটি সরল বাক্যে)
উঃ- দুপুর বেলায় বাবা-মেজদা অফিসে যাওয়ার পরে আসিস।
৭.৪ ইচ্ছে নয় নিজে বের করে নাও। (জটিল বাক্যে)
উঃ- যদি ইচ্ছে হয় তাহলে নিজে বের করে নাও।
৭.৫ টেনিদা আর বলতে দিলে না। গাঁক গাঁক করে চেঁচিয়ে উঠল। (একটি সরল বাক্যে)
উঃ- টেনিদা আর বলতে না দিয়ে গাঁক গাঁক করে চেঁচিয়ে উঠল।
৮. নীচের শব্দগুলির সমার্থক প্রবচনগুলি খুঁজে বের করো এবং তা দিয়ে বাক্যরচনা করোঃ
চুরি = (হাত সাফাই করা) – রাম ঠাকুমার ঘর থেকে আচার হাতসাফাই করেছিল।
নষ্ট হওয়া = (বারোটা বাজা) – টিয়া হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়ায় খাবারের বারোটা বাজাল।
পালানো = (হাওয়া হওয়া) – কালু চুরি করে ধরা পরার ভয়ে বাড়ি থেকে হাওয়া হয়ে গেল।
গোলমাল করে ফেলা = (তালগোল পাকানো) – শ্যামা অংক করতে গিয়ে সব তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে।
লোভ দেওয়া = (নজর দেওয়া) – অন্যের সম্পত্তিতে লোভ দেওয়া উচিৎ নয়।
চুপ থাকা = (মুখে কুলুপ আঁটা) – মার খাওয়ার ভয়ে সে মুখে কুলুপ এঁটে রইল।
৯. টীকা লেকোঃ
কলম্বাস = ক্রিস্টোফার কলম্বাস ছিলেন একজন প্রখ্যাত ইউরোপীয় নাবিক, ১৪৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ইটালির জানোয়ায় তাঁর জন্ম হয়। পঞ্চদশ শতকে ইনি আমেরিকা আবিষ্কার করেন। ১৪৯২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারতে আসার জন্য যাত্রা শুরু করেন। তিনি ভারতবর্ষে আসতে গিয়ে আমেরিকা মহাদেশের মধ্যভাগে পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে জাহাজ নিয়ে পৌঁছেছিলেন এবং সেখানকার অধিবাসীদের নাম দিয়েছিলেন রেড ইন্ডিয়ান।
লেডিকেনি = ছানা এবং ময়দা মেশানো একধরনের মিষ্টি হল লেডিকেনি। ছানা এবং ময়দা একসঙ্গে মিলিয়ে গোল আকৃতি করে ভেজে নিয়ে তা লাল বর্ণ ধারণ করলে সেটিকে চিনির রসে ডোবানো হয়। জানা যায় কলকাতার বিখ্যাত ময়রা নবীনচন্দ্র দাস লর্ড ক্যানিং -এর স্ত্রীকে খুশি করতে এই মিষ্টি তৈরি করেন এবং লেডি ক্যানিং -এর নাম থেকে এই মিষ্টি লেডিকেনি বলে প্রচারিত হয়।
বিরিয়ানি = এটি একটি বাদশাহী খাবার। মোগল বাদশাহরা এই খাবার খেতেন। সুগন্ধ চাল, মাংস, বিভিন্ন সুগন্ধি মশলা ও আতর সহযোগে এই রান্না করা হয়।
ইউরেকা = এটি একটি ইংরাজি শব্দ, এর অর্থ ‘পেয়েছি’। প্রসিদ্ধ গ্রিক গণিতবিদ আর্কিমিডিস বিভিন্ন সোনায় কতটা খাদ আছে তা পরীক্ষা করতে গিয়ে সফল হয়ে এই শব্দ ব্যবহার করে চিৎকার করে ওঠেন। সেই থেকে পৃথিবীর বহু দেশে ‘পেয়েছি’ অর্থে উল্লাস প্রকাশ করে “ইউরেকা” শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
১০. নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত ও যথাযথ উত্তর দাওঃ
১০.১ বনভোজনের প্রথম তালিকায় কী কী খাদ্যের উল্লেখ ছিল? তা বাতিল হলো কেন?
উঃ- বনভোজনের প্রথম তালিকায় ছিল – বিরিয়ানি, পোলাও, কোর্মা, কোপ্তা, কাবাব ও মাছের চপ।
বনভোজনের প্রথম তালিকায় যে সব খাবারের উল্লেখ করা হয়েছিল তার জন্য দুইশত টাকা ছাড়াও চাকর, লরি এসবের আয়োজন করতে হত। এত টাকা না থাকায় বনভোজনের প্রথম তালিকা বাতিল হয়েছিল।
১০.২ বনভোজনের দ্বিতীয় তালিকায় কী কী খাদ্যের উল্লেখ ছিল এবং কে কী কাজের দায়িত্ব নিয়েছিল?
উঃ- বনভোজনের দ্বিতীয় তালিকায় ছিল – খিচুড়ি, আলু ভাজা, আমের আচার, পোনামাছের কালিয়া, রসগোল্লা ও লেডিকেনি। পরে এই তালিকায় রাজহাঁসের ডিম যুক্ত হয়েছিল।
এইসব খাবারের মধ্যে পোনামাছের কালিয়া রান্নার দায়িত্ব পেয়েছিল প্যালা, রাজহাঁসের ডিম আনার দায়িত্ব ছিল প্যালার, আলুভাজা এনেছিল ক্যাবলা, আচার আনার দায়িত্ব পেয়েছিল হাবুল।
১০.৩ প্যালার রাজহাঁসের ডিম আনার ঘটনাটির বর্ণনা দাও।
উঃ- রাজহাঁসের ডিম আনার দায়িত্ব পেয়েছিল প্যালা। ভন্টাদের বাড়ি থেকে প্যালা রাজহাঁসের ডিম চুরি করে আনতে গিয়েছিল, তাকে সাহায্য করেছিল ভন্টা। দুপুরে ভন্টার বাবা ও মেজদা অফিসে যাওয়ার পরে প্যালা ডিম আনতে গিয়েছিল। উঠানে সারি সারি কাঠের বাক্সের ভিতর রাজহাঁস রাখা হয়। ডিম বার করার জন্য প্যালা সেই বাক্সের মধ্যে হাত ঢোকানো মাত্র রাজহাঁস তার শক্ত ঠোট দিয়ে প্যালার হাত কামড়ে ধরে। প্রচণ্ড চিৎকার করে প্যালা লাফ দিয়ে কোনোরকমে সেখান থেকে পালিয়ে আসে। ফলে রাজহাঁসের ডিম তাদের আর নেওয়া হল না।
১০.৪ ট্রেন থেকে নেমে হাঁটতে গিয়ে তাদের কী কী বিপদ ঘটেছিল?
উঃ- “বনভোজনের ব্যাপার” গল্পে যেখানে বনভোজনের আয়োজন করা হয়েছিল সেখানে যাওয়ার জন্য ট্রেন থেকে নেমে মাটির পথে হাঁটতে হত। আগের রাতে বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তা খুব পিছল হয়েছিল। হাবুল সেইপথে পিছলে পরে যাওয়ায় তার হাতে থাকা দিমের পুঁটলি থেকে হলুদ রস গড়াচ্ছিল। তারপর প্যালা আছড়ে পরলে তার সারা শরীরে আচার ছড়িয়ে পড়ল। শেষে টেনিদা রসগোল্লার হাঁড়ি নিয়ে মাটিতে আছড়ে পড়ল। এইভাবে তাদের যাত্রা সম্পূর্ন হয়েছিল।
১০.৫ ‘মাছের কালিয়ার তিনটি বেজে গেল’ – মাছের কালিয়া সম্পর্কে এ রকম বলার কারণ কী?
উঃ- বনভোজনে গিয়ে প্যালা মাছের কালিয়া রান্না করার দায়িত্ব পেয়েছিল। কিন্তু সে রান্নার কিছু জানত না। সে মাছগুলি কেটে নুন ও হলুদ মাখিয়ে কড়াইতে থাকা কাঁচা তেলে ফেলে দেয়। তেল গরম না হওয়ায় সব মাছ ভেঙে তালগোল পাকিয়ে যায়। ফলে মাছের কালিয়া শেষ পর্যন্ত মাছের হালুয়া হয়ে যায়।
১১. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখোঃ
১১.১ এই গল্পটির নাম ‘বনভোজন’ না হয়ে ‘বনভোজনের ব্যাপার’ হলো কেন?
উঃ- নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত ‘বনভোজনের ব্যাপার’ গল্পটি বনভোজনের পরিকল্পনা, বনভোজনের যাত্রাপথের বর্ণনা এবং মজাদার পরিবেশনে শেষ হয়েছে। নানারকমের খাবারের ব্যবস্থা করার আয়োজন এবং টেনিদা, প্যালা, হাবুল ও ক্যাবলা এই চারজনের ভাবনার বিষয় হল এই বনভোজন। টেনিদা পেটুক, অলস, ভীরু প্রকৃতির , কিন্তু সবার উপর খবরদারি করায় ওস্তাদ। ট্রেন থেকে নেমে জিনিসপত্র নিয়ে বনভোজনে যাওয়ার সময় নানা বিপদ ঘটে এবং ক্যাবলার মামার বাড়িতে পৌঁছে কীভাবে বনভোজন ফলভোজনে পরিণত হয় তার বর্ণনা গল্পে আছে। তাই গল্পের নাম বনভোজনের ব্যাপার হিসেবে সার্থক।
১১.২ এই গল্পে ক’টি চরিত্রের সঙ্গে তোমার দেখা হলো? প্রত্যেকটি চরিত্র নিয়ে আলোচনা করো।
উঃ- বনভোজনের ব্যাপার গল্পে চারটি চরিত্রের দেখা মেলে। তারা হলেন – টেনিদা, হাবুল সেন, ক্যাবলা ও প্যালা।
টেনিদাঃ- বনভোজনের ব্যাপার গল্পে টেনিদা হল মুখ্য চরিত্র। টেনিদা পটলডাঙার আড্ডার দলের দলপতি। তাঁর মেজাজের সঙ্গে বাস্তববুদ্ধি খাপ খায় না। দলের অন্য সদস্যদের উপর কর্তৃত্ব ফলানো তাঁর চরিত্রে দেখতে পাই। নিজে অলস হলেও নির্দেশদানে সে পটু।
হাবুল সেনঃ- হাবুল সেন ছিল ঢাকার বাঙাল। তাঁর উচ্চারনে তা স্পষ্ট বোঝা যায়। সে টেনিদাকে সন্তুষ্ট রাখতে চায়, আচরণে সে বন্ধুত্বপূর্ন ও খাদ্যরসিক।
ক্যাবলাঃ- বনভোজনের ব্যাপার গল্পে এক মজাদার চরিত্র ক্যাবলা। তাঁর উচ্চারনে হিন্দি ঝোঁক আছে। তাঁর বাস্তববোধ ও টেনিদার চরিত্র সম্পর্কে ধারণা অন্য সকলের চেয়ে বেশি।
প্যালাঃ- প্যালা অত্যন্ত সাধাসিধে ও নিরীহ ছেলে। সে সর্বদা পালাজ্বরে ভোগে ও শিঙি মাছের ঝোল খায়। মাঝে মধ্যে সে টেনিদার কাছে শাস্তি পেয়ে থাকে। দলে তার বিশেষ মর্যাদা ছিল না।
১১.৩ এই গল্পটিতে হাস্যরস সৃষ্টির জন্য ভাষার দিক থেকে লেখক নানারকম কৌশল অবলম্বন করেছেন। কী কী কৌশল তুমি খেয়াল করেছ লেখো।
উঃ- বনভোজনের ব্যাপার গল্পে নারায়ণ গঙ্গোপাধায় সুকৌশলে হাস্যরস সৃষ্টি করেছেন। চরিত্রগুলির কাজেকর্মে অসঙ্গতি ঘটিয়ে তিনি হাস্যরস সৃষ্টি করেছেন। আবার ভাষাগত বিভিন্নতার কারণে ও উপভাষার ব্যবহারে হাস্যরস তৈরি হয়েছে। রোয়াকে আড্ডা দেওয়া চারটি ছেলের কথায় হাসির উপাদান সৃষ্টি করেছেন।
১১.৪ শীতকালে পিকনিক নিয়ে তোমার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বন্ধুকে চিঠি লেখো / গল্প লেখো।
উঃ-
দক্ষিন ২৪ পরগণা
কলকাতা – ৭০০০৭৬
প্রিয় সুমন,
তুমি কেমন আছ? আমি ভালো আছি। আজ তোমার কাছে আমি একটি অভিজ্ঞতা নিয়ে পত্র লিখছি। ৫ই অক্টোবর আমরা আত্মীয়পরিজন ও পরিবারের সকলে বর্ধমানের নদীর তীরে বনভোজন করে এলাম। সকাল সকাল রওনা দিয়ে সাড়ে আটটায় পৌঁছে যাই। সকালে পাউরুটি, কলা আর মিষ্টি খেয়ে নদীর তীরে ঘুরতে বের হই, ছবি তুলি, নৌকোয় নদীতে ঘুরি। আশেপাশে আলু, সরষে ও সবজি খেতে কৃষকরা ব্যস্ত। দুপুরে আহারের পর আবার অন্যদিকে ঘুরতে যাই। অল্পসময়ের জন্য বেড়াতে এসে মনপ্রান ভরে যায়। এই অভিজ্ঞতার কথা তোমাকে জানাতে পেরে আমার ভাল লাগছে। ভালো থেকো। কাকু ও কাকিমাকে প্রনাম জানিও।
(ডাকটিকিট)
সুমন পাল
হাওড়া,
কলকাতা – ৭০০০৭০
১১.৫ টেনিদা’র মতো আরো কয়েকটি ‘দাদা’ চরিত্র বাংলা সাহিত্যে দেখতে পাওয়া যায়। এরকম তিনটি চরিত্র নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উঃ- টেনিদা’র মতো আরো কয়েকটি ‘দাদা’ চরিত্র বাংলা সাহিত্যে দেখতে পাওয়া যায়। সেগুলি হল – সত্যজিৎ রায়ের “ফেলুদা”, প্রেমেন্দ্র মিত্রের “ঘনাদা”, বুদ্ধদেব গুহর “ঋজুদা”
ফেলুদাঃ- সত্যজিৎ রায়ের এক অমর সৃষ্টি হল ফেলুদা। ফেলুদা একটি ধারালো মেধাসম্পন্ন, সাহসী চরিত্র। বিপদের মধ্যে ধৈর্য স্থির রাখা চরিত্রটির বৈশিষ্ট্য। নানা জটিল সমস্যা সমাধানে তিনি সিদ্ধহস্ত। কিশোরদের সাথে সাথে বয়স্কদের কাছেও চরিত্রটি খুব জনপ্রিয়। তীক্ষ্ণ বুদ্ধি না থাকলে যে গোয়েন্দা হওয়া যায় না এই চরিত্রটি তার প্রমাণ বহন করে।
ঘনাদাঃ– প্রেমেন্দ্র মিত্রের কিশোর সাহিত্যের এক মজাদার চরিত্র ঘনাদা। মজাদার কথা বলা এবং মাঝে মাঝে অদ্ভুত আচরণের জন্য চরিত্রটি একসময় কিশোর মনে খুব জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই চরিত্রটির প্রতি কিশোরদের তেমন আকর্ষন নেই।
ঋজুদাঃ- বুদ্ধদেব গুহর কিশোর সাহিত্যের এক বিশেষ চরিত্র ঋজুদা। কিশোর মনে সাহস, শুভ-অশুভ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াকু মনোভাব তৈরি করে এই চরিত্র। সাধারণ গ্রাম, পাহাড়, বনে বসবাসকারী মানুষের সম্পর্কে ভালবাসা তৈরির জন্যই এই চরিত্রটি নির্মিত।
অতিরিক্ত প্রশ্ন-উত্তর
১. হাবুল কী কী খাবারের কথা বলেছিল?
উঃ- হাবুল পোলাও, ডিমের ডালনা, রুই মাছের কালিয়া ও মাংসের কোর্মার কথা বলেছিল।
২. প্যালা কী কী খাবারের কথা বলেছিল?
উঃ- প্যালা আলু ভাজা, শুক্তো, বাটি চচ্চড়ি ও কুমড়োর ছক্কার কথা বলেছিল।
৩. টেনিদা ব্যঙ্গ করে কী কী খাবার জুড়েছিল?
উঃ- হিঞ্চে সিদ্ধ, গাঁদাল পাতা, শিঙি মাছের ঝোল।
৪. ক্যাবলা কোন খাবারের কথা বলেছিল?
উঃ- ক্যাবলা কুদরুর তরকারি দিয়ে ঠেকুয়া খাওয়ার কথা বলেছিল।
৫. আচার কে বানিয়েছিল ও কেমন ছিল?
উঃ- আচার হাবুলের দিদিমা বানিয়েছিল এবং খেতে ঝাল-ঝাল, টক-টক ছিল।
৬. হাবুল সেন কী আবিষ্কার করেছিল?
উঃ- হাবুল বাগানের গাছে জলপাই পেকেছে এটা আবিষ্কার করেছিল।
৭. পিকনিক করার জন্য কত টাকা চাঁদা উঠেছিল?
উঃ- পিকনিক করার জন্য দশ টাকা ছয় আনা চাঁদা উঠেছিল।
৮. লেখকের মতে টেনিদার গাট্টা কেমন?
উঃ- লেখকের মতে টেনিদার গাট্টা ঠাট্টার জিনিস নয়, জুতসই লাগলে গালপাট্টা উড়ে যাবে।
৯. ক্যাবলার মা কীভাবে বনভোজনে সাহায্য করেছিল?
উঃ- ক্যাবলার মা মাছ কেটে নুন মাখিয়ে দিয়েছিল।