সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো:
১. বংশগতিবিদ্যার জনক হলেন -চার্লস ডারউইন/ মেন্ডেল/ দ্য ভ্রিস /ল্যামার্ক ।
উত্তর – মেন্ডেল
২. জেনেটিক শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন – মেন্ডেল/ বেটসন/ ডারউইন/ মর্গান।
উত্তর – বেটসন
৩. মানুষের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিতগুলির মধ্যে কোনটি একজন স্বাভাবিক পুরুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ? – 44A+XX/ 44A+XY/ 44A+XXY/ 44A+XYY.
উত্তর – 44A+XY
৪. স্বাভাবিক স্ত্রীলোকের ক্ষেত্রে কোনটি সঠিক – 44A+X/ 44A+XX/ 44A+XY/ 23A+XX.
উত্তর – 44A+XX
৫. মটর গাছের দ্বিসংকর জননে F2 জনুর ফিনোটাইপগত অনুপাত হল : – 3:1/ 9:3:3:1/ 1:1/ 1:2:1.
উত্তর – 9:3:3:1
৬. একটি সংকর লম্বা মটর গাছের(Tt) সঙ্গে একটি বিশুদ্ধ লম্বা মটর গাছের(TT) সংকরায়ন করা হলে,F1 জনুতে লম্বা মটর গাছ পাওয়ার সম্ভবনা – 25%/ 50%/ 75%/ 100%.
উত্তর – 50%
৭. দুটি সংকর দীর্ঘ কান্ড বিশিষ্ট মটর গাছের মধ্যে সংকরায়ন ঘটানো কয় প্রকার জিনোটাইপ যুক্ত উদ্ভিদ পাওয়া যাবে ? এক প্রকার/ দুই প্রকার / তিন প্রকার/ চার প্রকার।
উত্তর – তিন প্রকার।
৮. একসংকর জনন পরীক্ষায় F 2 জনুর জিনোটাইপগত অনুপাত কত ? – 3:1/ 1:1/ 1:2:1/ 9:3:3:1.
উত্তর – 1:2:1.
৯. দুটি সংকর লম্বা মটর গাছের মধ্যে সংকরায়ন ঘটানো হলে F1 জনুতে সংকর লম্বা মটর গাছের পাওয়া যাবে : 25%/ 50%/ 75%/ 100% .
উত্তর – 50%
১০. একটি সংকর দীর্ঘ একটি বিশুদ্ধ খর্ব মটর গাছের পরাগমিলনে যে বীজ পাওয়া যায় তার থেকে উৎপন্ন মটর গাছ গুলি হবে : সমস্ত দীর্ঘ/ সমস্ত খর্ব/ ৫০% দীর্ঘ ও ৫০% খর্ব / ৭৫% দীর্ঘ ও ২৫% খর্ব ।
উত্তর – 50 % দীর্ঘ ও 50 % খর্ব ।
১১. হিমোফিলিয়া রোগের জন্য দায়ী হলো – অটোজোমাল প্রকট জিন / অটোজোমাল প্রচ্ছন্ন জিন/ লিঙ্গ সংযোজিত প্রচ্ছন্ন জিন/ লিঙ্গ সংযোজিত প্রকট জিন।
উত্তর – লিঙ্গ সংযোজিত প্রচ্ছন্ন জিন।
১২. যদিও উভয় জনি থ্যালাসেমিয়া বাহক হয় , তা হলে উৎপন্ন শিশুর থ্যালাসেমিয়ার সম্ভবনা কি হবে ? – ২৫%/ ৫০%/ ১০০%/ কোনো সম্ভবনা নেই ।
উত্তর – ২৫%
১৩. ক্রিসমাস রোগ হলো – বর্ণান্ধতা/ হিমোফিলিয়া B/ ডাউন সিনড্রোম / রাজকীয় হিমোফিলিয়া।
উত্তর – হিমোফিলিয়া B
১৪. ডালটনিজম রোগটি হলো- ডাউন সিনড্রোম / হিমোফিলিয়া A/ বর্ণান্ধতা/ হিমোফিলিয়া B।
উত্তর – বর্ণান্ধতা।
১৫. বর্ণান্ধ ব্যক্তিরা এ দুটি রং চিনতে পারে না তা হল- লাল ও সবুজ / সাদা ও নীল / কালো ও সাদা/ হলুদ ও নীল।
উত্তর – লাল ও সবুজ ।
১৬. একজন হিমোফিলিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি একজন স্বাভাবিক হোমোজাইগাস মহিলাকে বিবাহ করলে তাদের পুত্র হিমোফিলিক হবার সম্ভাবনা – ০%/ ৫০%/ ৭০%/ ১০০%।
উত্তর – ০%
১৭. সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ এ কোন ক্রোমোজোম ভূমিকা পালন করে – অটোজোম / সেক্স ক্রোমোজোম / X ক্রোমোজোম / Y ক্রোমোজোম।
উত্তর – Y ক্রোমোজোম ।
১৮. মেন্ডেল আবিষ্কৃত বংশগতির দ্বিতীয় সূত্রটি হল- পৃথকী ভবন সূত্র/ স্বাধীন বিন্যাস সূত্র / একক সূত্র/ প্রকটতর নীতি।
উত্তর – স্বাধীন বিন্যাস সূত্র।
১৯. বংশগতি ও প্রকরণ সংক্রান্ত আলোচনা ও অধ্যায়ন কে বলে- জেনেটিক্স / সাইটোলজি / মেন্ডেল বাদ / জেরেন্ট লজি ।
উত্তর – জেনেটিক্স
২০. TrRrBB জিনোটাইপ থেকে কত ধরনের জনন কোষ সৃষ্টি হবে ? ২/ ৪/ ৬/ ৮।
উত্তর – ৪
২১. পুরুষের দেহে অবস্থিত যৌন ক্রোমোজোম জোরটি হল – XY/ XO/ XX/ YO .
উত্তর – XY
২২. সবুজ বর্ণান্ধতা কে কি বলে ? – প্রোটনোপিয়া / ট্রাইটেনোপিয়া / ডিউটেরানোপিয়া / কোনোটিই সঠিক নয় ।
উত্তর – ডিউটেরানোপিয়া।
২৩. নিচের কোনটি প্রকরণের উদাহরণ – ফর্সা ত্বক/ রোলিং জিভ/ মসৃণ চুল / লম্বা মানুষ।
উত্তর – রোলিং জিভ ।
২৪. Tt জিনোটাইপ কে কিভাবে প্রকাশ করা হয় ? – বিশুদ্ধ লম্বা/ সংকর লম্বা/ মিশ্র লম্বা/ কোনটি সঠিক নয়।
উত্তর – সংকর লম্বা ।
২৫. ক্রোমোজোমে জিনের যে স্থানে নির্দিষ্ট থাকে তাকে বলে – অ্যালিল / অ্যালিনফর্ম / সংকর/ লোকাস ।
উত্তর – লোকাস।
২৬. মেন্ডেলের প্রথম সূত্রটি হল- প্রকটতার সূত্র/ স্বাধীন সঞ্চালনের সূত্র / পৃথকী ভবন এর সূত্র / কোনটি সঠিক নয়।
উত্তর – পৃথকীভবন এর সূত্র।
২৬. মিনড়িটি সাত জোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যের মধ্যে কোনটি প্রকট গুন ছিল – বেঁটে গাছ /হলুদ ফুল/ সাদা ফুল/ বেগুনি ফুল।
উত্তর – বেগুনি ফুল ।
২৭. মেন্ডেল নির্বাচিত মটর গাছের মোট কত জোড়া বৈশিষ্ট্য ছিল ? ৫ জোড়া / ৭ জোড়া / ৯ জোড়া / ১০ জোড়া ।
উত্তর – ৭ জোড়া ।
২৮. একটি বিশুদ্ধ লম্বা মটর গাছের সঙ্গে একটি বিশুদ্ধ বেটে মটর গাছের ইতর পরাগযোগ ঘটালে প্রথম জনুতে কি ধরনের মটর গাছ জন্মাবে ? বিশুদ্ধ লম্বা/ সংকর লম্বা/ বিশুদ্ধ বেঁটে / সংকর বেঁটে ।
উত্তর – সংকর লম্বা।
২৯. মেন্ডেলের স্বাধীন সঞ্চালনের সূত্রটি কোন পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত ? সংকর জনন/ দ্বিসংকর জনন/ ত্রিসংকর জনন / সম্পূর্ণ প্রকটতা।
উত্তর – দ্বি সংকর জনন।
৩০. স্ত্রীলোকের লিঙ্গ নির্ধারক ক্রোমোজোম হলো – XY/ XX/ yy/ Xy
উত্তর – XX
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন :
১. বংশগতি কাকে বলে ?
উত্তর – যে পদ্ধতিতে পিতা-মাতা বা জনিতৃর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গুলি প্রায় অপরিবর্তিত অবস্থায় বা সামান্য পরিবর্তিত হয়ে বংশপরম্পরায় সন্তান-সন্ততিতে সঞ্চারিত হয়, তাকে বংশগতি বলে।
২. মেন্ডেলিজম কাকে বলে ?
উত্তর – 1866 সালে মিষ্টি মটর গাছের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিজ্ঞানী গৃগর জোহান মেন্ডেল বংশগতি সংক্রান্ত যে সকল মৌলিক নিয়মাবলী রচনা করেন সে গুলি কে একত্রে মেন্ডেলবাদ বলে ।
৩. মেন্ডেলের মৌলিক সূত্র গুলি কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ?
উত্তর – মেন্ডেল তার মৌলিক সূত্র গুলি কে ‘ব্রান ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটি’ নামক পত্রিকায় 1866 সালে প্রকাশ করেন।
৪. প্রকরণ কাকে বলে ?
উত্তর – জিনের মাধ্যমে বা পরিবেশের প্রভাব জনিত কারণে একই প্রজাতিভুক্ত জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের যে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় ,তাকে ভেদ বা প্রকরণ বলে।
৫. রোলার বলতে কী বোঝো ?
উত্তর – আমাদের মধ্যে অনেকেই অতি সহজেই জীবকে দুপাশ থেকে গুটিয়ে নলের মতো বাইরে বের করতে পারে, এদের রোলার বলে। এটি অটোজোমাল জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত প্রকট বৈশিষ্ট্য যা হোমোজাইগাস বা হেটারোজাইগাস উভয় অবস্থাতেই প্রকাশিত হয়।
৬. প্রকট বৈশিষ্ট্য কাকে বলে ?
উত্তর – যে বৈশিষ্ট্য বিপরীতধর্মী অন্য কোন বৈশিষ্ট্যের প্রকাশে বাধা দেয় কিন্তু নিজে প্রকাশ পায় তাকেই প্রকট বৈশিষ্ট্য বলে। হেটারোজাইগাস অবস্থায় দিনের জন্য প্রকট বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় তাকে প্রকট জিন বলে।
৭. প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য কাকে বলে ?
উত্তর – যে বৈশিষ্ট্য প্রকট বৈশিষ্ট্য এর উপস্থিতিতে প্রকাশিত হয় না সুপ্ত অবস্থায় থাকে, তাকে প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য বলে ।হেটারোজাইগাস অবস্থায় যে জিনিস জন্য বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয় না তাকে প্রচ্ছন্ন জিন বলে।
৮. ফিনোটাইপ কাকে বলে?
উত্তর – কোন জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বাহ্যিক প্রকাশ কে ফিনোটাইপ বলে। ম্যাক্রো জীব দের ক্ষেত্রে খালি চোখে এবং মাইক্রোজীবদের ক্ষেত্রে সঠিক আণুবীক্ষণিক পর্যবেক্ষণের দরকার।
৯. জিনোটাইপ কাকে বলে?
উত্তর – কোন জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জিনগত সমাহার এর জন্য কোন চরিত্রের প্রকাশকে জিনোটাইপ বলে। কেবলমাত্র আণুবীক্ষণিক পর্যবেক্ষণের দাঁড়াই জিনোটাইপ নির্ধারণ করা যায়।
১০. অসম্পূর্ণ প্রকটতা কাকে বলে ?
উত্তর – জীবের বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যের মধ্যে প্রকট জিনের বহিঃপ্রকাশ ঘটলেও কিছু ক্ষেত্রে প্রকট ও প্রচ্ছন্ন জিন এর মধ্যবর্তী কোন বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটে অর্থাৎ অসম্পূর্ণ প্রকাশ ঘটে ,এই ঘটনা অসম্পূর্ণ প্রকটতা নামে পরিচিত। এটি মেন্ডেলের প্রথম সূত্রের একটি ব্যতিক্রম ঘটনা। সন্ধ্যামালতী উদ্ভিদে দেখা যায়।
১১. মেন্ডেলের সূত্রের ব্যতিক্রমী ঘটনা গুলি উল্লেখ করো ।
উত্তর – অসম্পূর্ণ প্রকটতা, সহপ্রকটতা, বহু অ্যালিলতা, লিংকেজ।
১২. মিউল্যাটো কাকে বলে ?
উত্তর – বিশুদ্ধ শ্বেতকায় ইউরোপীয় পুরুষ মানুষের সঙ্গে বিশুদ্ধ নিগ্রো কালো মানুষের বিবাহ হলে যে সন্তান জন্মায় তাঁর গাত্রবর্ণ ফর্সা ও কালোর মাঝামাঝি হয় একে মিউল্যাটো বলে।
১৩. ক্রিস ক্রস উত্তরাধিকার কাকে বলে ?
উত্তর – যদি পিতার বৈশিষ্ট্য কন্যার মাধ্যমে তার নাতনিতে প্রকাশ পায় ।আবার মাতার বৈশিষ্ট্য পুত্রের মধ্যে প্রকাশিত না হয় তার নাতির মধ্যে প্রকাশিত হলে তাকে ক্রিস ক্রস উত্তরাধিকার বলে।
১৪. মানুষের দুটি প্রকট বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
উত্তর – মুক্ত কানের লতি, সোজা কালো চুল।
১৫. মানুষের দুটি প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
উত্তর – যুক্ত কানের লতি এবং কোকড়ানো চুল।
১৬. সংকরায়ন পরীক্ষার জন্য মেন্ডেল কোন গাছ কে নির্বাচন করেন?
উত্তর – মটর গাছ।
১৭. মেন্ডেলের প্রথম সূত্র কে কি বলে?
উত্তর – পৃথকী ভবন এর সূত্র।
১৮. Tt×Tt সংকরায়নের ফলে কত ভাগ বেঁটে প্রলক্ষণ যুক্ত মটর গাছ পাওয়া যাবে?
উত্তর – শতকরা ২৫ ভাগ ।
১৯. দুটি সংকর লম্বা মটর উদ্ভিদের মধ্যে সংকরায়ন ঘটানো যেসকল মটর উদ্ভিদ পাওয়া যাবে তাদের ফিনোটাইপিক অনুপাত কি হবে ?
উত্তর – লম্বা : বেঁটে মটর গাছ উত্তর – ৩:১
২০. মানুষের দুটি জিনগত বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
উত্তর – টাক পড়া ,চোখের মনির রং।
২১. টেস্ট ক্রস কি?
উত্তর – সংকর F1 জনুর জীবের সঙ্গে প্রচ্ছন্ন হোমোজাইগাস জনিতৃ জনুর জীবের সংকরায়ন কে টেস্ট ক্রস বলে।
২২. ব্যাক ক্রস কি?
উত্তর – প্রথম অপত্য জনুতে সঙ্গে যে কোন জনিতৃর সংকরায়ন কে ব্যাক ক্রস বলে।
২৩. মানুষের দেহে বিটা গ্লোবিন জিন কোন ক্রোমোজোম এ অবস্থান করে ?
উত্তর – ১১ তম
২৪. মানুষের Y ক্রোমোজোম এ অবস্থিত জিন গুলি কে কি বলে ?
উত্তর – হোলানড্রিক জিন।
২৫. মানুষের অটোজোমাল জিন বাহিত দুটি বৈশিষ্ট্য লেখ ।
উত্তর – টাক পড়া ও জিহ্বা করার ক্ষমতা।
২৬. মানুষের X ক্রোমোজোমাল জিন বাহিত দুটি রোগের নাম লেখ।
উত্তর – বর্ণান্ধতা ও হিমোফিলিয়া।
২৭. মানুষের দেহে আলফা গ্লোবিন জিন কোন ক্রোমোজোম এ অবস্থান করে ?
উত্তর – ১৬ তম
২৮. একজন হিমোফিলিয়া রোগ আক্রান্ত পুরুষ একজন স্বাভাবিক মহিলাকে বিবাহ করলে তাদের কন্যা সন্তান কীরূপ উত্তরাধিকার লাভ করবে ?
উত্তর – স্বাভাবিক কিন্তু হিমোফিলিয়া বাহক।
২৯. কোন বংশগত রোগে কালচে রঙের মূত্র হয় ?
উত্তর – থ্যালাসেমিয়া।
৩০. বর্ণান্ধতার একটি কারণ লেখ।
উত্তর – X ক্রোমোজোম এ অবস্থিত মিউট্যান্ট প্রচ্ছন্ন জিন এর প্রভাবে বর্ণান্ধতা হয়।
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন :
১. বংশগতিবিদ্যা বা সুপ্রজনন বিদ্যা বা জেনেটিক্স কাকে বলে? কোন বিজ্ঞানী প্রথম জেনেটিক্স শব্দটি প্রবর্তন করেন ?
উত্তর – জীব বিজ্ঞানের যে শাখায় জনিতৃ জনু থেকে অপত্য জনুতে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের সঞ্চালন এর বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দেওয়া হয় তাকে জেনেটিক্স বলে।
বিজ্ঞানী বেটসন প্রথম জেনেটিক শব্দটি প্রবর্তন করেন।
২. বংশগতি বিদ্যার জনক কাকে বলা হয় এবং কেন ? অথবা মেন্ডেল কি কারনে বিখ্যাত হয়েছিলেন ?
উত্তর – অস্ফিয়া ধর্মযাজক গৃগর জোহান মেন্ডেল কে বলা হয় বংশগতিবিদ্যার জনক।
গৃগর জোহান মেন্ডেল বংশগতি সংক্রান্ত একসংকর ও দ্বি সংকর জননের পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম বংশগতি সংক্রান্ত প্রাথমিক মৌলিক ধারণা গুলি অবতরণ করেন এবং পৃথকীকরণ সূত্র ও স্বাধীন সঞ্চালনের সূত্র আবিষ্কার এর মাধ্যমে বংশগতির ভিত্তিস্থাপন করেন ।বংশগতি সংক্রান্ত এই অসামান্য কাজের জন্য তিনি বিখ্যাত হন।তাই বংশগতিবিদ্যার জনক মেন্ডেল কে বলা হয়।
৩. মিউটেশন বা পরিব্যক্তি কাকে বলে? মিউটেশন তত্ত্বের প্রবক্তা কে?
উত্তর – জীব কোষের প্রোটোপ্লাজম এর সংগঠনের অর্থাৎ জিনের আকস্মিক পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন প্রজাতির উৎপত্তি হওয়াকে মিউটেশন বা পরিব্যক্তি বলে।
মিউটেশন তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন হুগো দ্যা ভ্রীস্।
ভ্রিস্ সন্ধ্যামালতী ও 4 O’clock উদ্ভিদের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মিউটেশন তত্ত্ব প্রকাশ করেন।
৪. মানবদেহের মুক্ত ও সংযুক্ত কানের লতি সৃষ্টি হওয়ার কারণ কি ?
উত্তর – সাধারণ অবস্থায় বেশিরভাগ মানুষের কানের লতি মুক্ত অবস্থায় থাকে, তাই এটি মানুষের একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ।যুক্ত কানের লতি বা আকস্মিক পরিবর্তনে উৎপন্ন প্রকরণ কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে প্রকাশিত হয়। এই সাধারন প্রকট ও প্রচ্ছন্ন জিন ক্রিয়াশীলতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।এটি অটোজোম বাহিত প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য, ফলে এই বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রক প্রচ্ছন্ন জিন দুটি হোমোজাইগাস অবস্থায় থাকলেই বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়।
৫. জিন কাকে বলে ? মেন্ডেল জিনকে কি নামে অভিহিত করেছিলেন ?
উত্তর – বংশগতির গঠনগত বা কার্যগত একক হল জিন।
ক্রোমোজোমের উপর অবস্থিত জিন বলতে বোঝায় ডিএনএ ও আরএনএ এর এমন অংশ যা বংশগতির গঠনগত একক হিসাবে একটি পলিপেপটাইড আরএনএ উৎপাদনের মাধ্যমে জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে।
মেন্ডেল জিনকে ফ্যাক্টর নামে অভিহিত করেছিলেন।
৬. বিশুদ্ধ জীব এবং সংকর বা হাইব্রিড বলতে কী বোঝো।
উত্তর – দুটি সম বা একই ধরনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জীবের মিলনের ফলে যে জীবের সৃষ্টি হয়, তাকে বিশুদ্ধ জীব বলে। যেমন- পিতা-মাতা উভয়ই লম্বা হলে তাদের সন্তান বা অপত্য বিশুদ্ধ লম্বা হবে।
দুটি ভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জীবের মিলনের ফলে যে মিশ্র বৈশিষ্ট্যযুক্ত জীবের সৃষ্টি হয় তাকে সংকর বা হাইব্রিড বলে। যেমন- বিশুদ্ধ লম্বা মটর গাছের সাথে বিশুদ্ধ বেটে মটর গাছের মধ্যে সংকরায়ন ঘটানো হলে যে অপত্য উৎপন্ন হয় তা সংকর লম্বা হয়।
৭. বিশুদ্ধ এবং হাইব্রিড এর মধ্যে পার্থক্য লেখ।
উত্তর –
বিশুদ্ধ জীব | হাইব্রিড জীব |
i) কোন জীব যদি বংশপরম্পরায় তাদের পিতা-মাতার বৈশিষ্ট্যগুলোকে একই রকম বজায় রাখে তবে তারাই হল বিশুদ্ধ। | i) দুটি বিপরীত ধর্মী বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জীবের মধ্যে সংকরায়ন ঘটানো ফলে উভয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জীব হলো সংকর। |
ii) এই প্রকার জীব সর্বদা হোমোজাইগাস প্রকৃতির হয়। | ii) এই প্রকার জীব সর্বদা হেটারোজাইগাস প্রকৃতির হয়। |
iii) এই জীব সৃষ্টির জন্য দুটি সমধর্মী জিনের প্রয়োজন। | iii) এই জীব সৃষ্টির জন্য দুটি ভিন্ন ধর্মী জিনের প্রয়োজন। |
৮. প্রকট বৈশিষ্ট্য ও প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পার্থক্য লেখ।
উত্তর –
প্রকট বৈশিষ্ট্য | প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য |
i) প্রকট বৈশিষ্ট্য F1 জনুতে প্রকাশিত হয়। | i) প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য F1 জনুতে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। |
ii) হোমোজাইগাস বা হেটেরোজাইগাস অবস্থায় প্রকাশিত হয় । | ii) কেবলমাত্র হোমোজাইগাস অবস্থায় প্রকাশিত হয়। |
iii) প্রকাশিত হবার জন্য কেবলমাত্র একটি প্রকট জিন এর প্রয়োজন। | iii) প্রকাশিত হবার জন্য দুটি প্রচ্ছন্ন জিন এর প্রয়োজন |
৯. জিনোটাইপ ও ফিনোটাইপ এর মধ্যে পার্থক্য লেখ।
উত্তর –
জিনোটাইপ | ফিনোটাইপ |
i) জিন সংযুক্তি দ্বারা নির্ধারিত অভ্যন্তরীণ লক্ষণ। | i) বাহ্যিক প্রকাশিত বৈশিষ্ট্য হলো ফিনোটাইপ। |
ii) জিনোটাইপ ও ফিনোটাইপ এর উপর নির্ভরশীল নয়। | ii) ফিনোটাইপ জিনোটাইপ এর উপর নির্ভরশীল |
iii) একসংকর জননের ক্ষেত্রে অনুপাত 1:2:1 এবং দ্বিসংকর জননের ক্ষেত্রে অনুপাত 1:2:2:4:1:2:1:2:1 | iii) একসংকর জননের ক্ষেত্রে অনুপাত 3:1 এবং দ্বিসংকর জননের ক্ষেত্রে অনুপাত 9:3:3:1 |
iv) জিনোটাইপ এর প্রকাশ যোগ্যতা খালি চোখে দেখা যায় না। | iv) ফিনোটাইপ এর প্রকাশ যোগ্যতা খালি চোখে দেখা যায় |
১০. চেকার বোর্ড কাকে বলে? একে পানেট বর্গ বলে কেন ?
উত্তর – যে বর্গাকার বা আয়তাকার স্থানে একসংকর কিংবা দ্বিসংকর জননের ফলাফল লিপিবদ্ধ করা হয় ,তাদের চেকার বোর্ড বলে।
ব্রিটিশ বিজ্ঞানী R.C.Panet প্রথমে পদ্ধতিটি অনুসরণ করেন বলে চেকার বোর্ড এর অপর নাম পানেট বর্গ।
১১. থ্যালাসেমিয়া রোগীদের অ্যানিমিয়া হয় কেন ?
উত্তর – আলফা থ্যালাসেমিয়া তে আলফা পলিপেপটাইড শৃংখল এর গঠন ত্রুটিপূর্ণ হয় এবং বিটা থ্যালাসেমিয়া তে বিটা পলিপেপটাইড শৃংখল এর গঠন ত্রুটিপূর্ণ হয় । এই প্রকার ত্রুটি পূর্ণ হিমোগ্লোবিন যুক্ত RBC এর আয়ু মাত্র 50 থেকে 60 দিন হয় এবং এই হিমোগ্লোবিনের অক্সিজেন পরিবহন করতে পারে না, ফলে অ্যানিমিয়া হয়। তাই রোগীকে বারবার রক্ত দিতে হয়।
১২. মনোজেনিক রোগ কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।
উত্তর – মানুষের দেহে যে সমস্ত বংশগত রোগের জন্য একটি বিশেষ দিনের মিউটেশন দায়ী থাকে এবং যে অস্বাভাবিকতা গুলি মেন্ডলিয় নীতি দ্বারা সহজ ভাবে ব্যাখ্যা করা যায় তাদের মনোজেনিক রোগ বলে।
উদাহরণ – থ্যালাসেমিয়া হিমোফিলিয়া ইত্যাদি।
১৩. হিমোফিলিয়া রোগ পুরুষদের দেহে বেশি দেখা যায় কেন ?
উত্তর – পুরুষদের X ক্রোমোজমে একটি হিমোফিলিয়া জিন উপস্থিত থাকলেই রোগ ঘটে। কিন্তু স্ত্রীলোকের হিমোফিলিয়া রোগের জন্য দুটি প্রচ্ছন্ন জিনের প্রয়োজন হয় ।এই কারণে পুরুষদের এই রোগ বেশি হয়।
১৪. পৃথকীভবন সূত্রের সীমাবদ্ধতা গুলি উল্লেখ করো।
উত্তর – i) একাধিক জিন নিয়ন্ত্রিত বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে এই সূত্র সম্পূর্ণরূপে প্রযোজ্য নয়।
ii) প্লিওট্রপি জিন, এপিস্ট্যাটিক জিন ও কম্প্লিমেন্টারি জিনের ক্ষেত্রে এই সূত্র সর্বাত্মকভাবে প্রযোজ্য নয়।
১৫. অসম্পূর্ণ প্রকটতার গুরুত্ব কি ?
উত্তর – i) বংশগতিতে অসম্পূর্ণ প্রকটতার ঘটনা মেন্ডেল বাদের ভ্রম বা বিচ্যুতি রূপে গণ্য করা হয়।
ii) বংশ-পরম্পরা জীবের বৈশিষ্ট্য সংশোধনের ক্ষেত্রে মেন্ডেল যে প্রকটতার নীতি প্রয়োগ করেন অসম্পূর্ণ প্রকটতার ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হয় না ।অসম্পূর্ণ প্রকটতা প্রমাণ করে যে শুধুমাত্র প্রকৃত মেন্ডেল বাদের ভিত্তিতে সর্বপ্রকারের বংশগতি ও উত্তরাধিকার সংক্রান্ত ঘটনা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়।
১৬. জিনোম কি ?
উত্তর – কোন জীবের হ্যাপ্লয়েড ক্রোমোজোমের সেটে উপস্থিত সমস্ত জিনকে একত্রে জিনোম বলে। অর্থাৎ গ্যামেট এ অবস্থিত সমস্ত জিনকে একত্রে জিনোম বলে ।যেমন -মানুষের জিনোম হলো 23 টি ক্রোমোজোম এ অবস্থিত সমস্ত জিন।
১৭. জিন কাকে বলে ?
উত্তর – ডিএনএ খন্ডাংশ দ্বারা গঠিত ক্রোমোজোম এর নির্দিষ্ট লক্ষ্যে অবস্থিত পলিপেপটাইড বা RNA উৎপাদনের মাধ্যমে জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণকারী বংশগতির একক কে জিন বলে
১৮. Tt সংকেত দ্বারা মটর গাছের কোন বৈশিষ্ট্য কে বোঝানো হয় ?
উত্তর – Tt সংকেত দ্বারা সংকর বা হেটেরো জাইগাস মটর গাছকে বোঝানো হয় । দুটি বিপরীতধর্মী জিনের মধ্যে প্রকট লম্বা বৈশিষ্ট্যটি ‘T’ সংকর মটর গাছে প্রকাশ পায় অর্থাৎ এটি প্রকট জিন । অন্যদিকে t সংকেত দ্বারা মটর গাছের খর্ব বৈশিষ্ট্যটি নির্দেশ করা হয় । এটি প্রকট জিনের উপস্থিতিতে সুপ্ত থাকে ।
১৯. সহপ্রকটতা বলতে কী বোঝো ?.
উত্তর – সংকর বা হেটারোজাইগাস জীবে দুটি প্রকট জিনের পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলে উভয় জিনের বৈশিষ্ট্যই একসঙ্গে প্রকাশ পাওয়ার ঘটনাকে সহপ্রকটতা বলে। যেমন – মানুষের MN ও AB রক্ত শ্রেণী।
২০. জিনগত রোগ কাকে বলে ?
উত্তর – ক্রোমোজোমের সংখ্যাগত বা গঠনগত পরিবর্তনের ফলে যে সমস্ত অস্বাভাবিক লক্ষণযুক্ত বংশগত রোগ সৃষ্টি হয় তাদের জিনগত রোগ বলে। যেমন- থ্যালাসেমিয়া ,টার্নার সিনড্রোম, হিমোফিলিয়া ইত্যাদি।
দীর্ঘ উত্তর ভিত্তিক প্রশ্ন :
১. হোমোজাইগাস এবং হেটারোজাইগাস জীব বলতে কী বোঝো? এদের মধ্যে পার্থক্য লেখ।
উত্তর – হোমোজাইগাস : দুটি একই ধরনের অ্যালিল যুক্ত গ্যামেটের মিলনের ফলে যে জাইগোট উৎপন্ন হয়, তাকে হোমোজাইগাস বলে এবং হোমোজাইগোট থেকে উৎপন্ন জীবকে হোমোজাইগাস জীব বলে। যেমন – বিশুদ্ধ লম্বা মটর গাছ(TT), বিশুদ্ধ বেটে মটর গাছ(tt) ইত্যাদি হোমোজাইগাস জীব এর উদাহরণ।
হেটারোজাইগাস : দুটি ভিন্ন বা পৃথক ধরনের অ্যালিল যুক্ত গ্যামেটের মিলনের ফলে যে সংকর জাইগোট উৎপন্ন হয় তাদের হেটারোজাইগাস বলে এবং হেটেরো জাইগোট থেকে উৎপন্ন জীবকে হেটারোজাইগাস জীব বলে। যেমন- সংকর লম্বা মটর গাছ (Tt).
হোমোজাইগাস | হেটারোজাইগাস |
i) এই জীবের ক্রোমোজোম এর নির্দিষ্ট লোকাসে অবস্থিত জিন দুটি উভয় প্রকট ও প্রচ্ছন্ন প্রকৃতির। | i) এই জীবের ক্রোমোজোম এর নির্দিষ্ট লোকাস এ অবস্থিত জিন দুটি একটি প্রকট অন্যটি প্রচ্ছন্ন প্রকৃতির। |
ii) কেবলমাত্র এক প্রকারের গ্যামেট উৎপন্ন করে। | ii) একাধিক প্রকারের গ্যামেট উৎপন্ন করে। |
iii) এই প্রকারের জীব বিশুদ্ধ খাঁটি প্রকৃতির হয়। | iii) এই প্রকারের জীব সংকর প্রকৃতির হয়। |
২. লিঙ্গ নির্ধারণ কাকে বলে ?
উত্তর – প্রাণীর প্রাথমিক দশায় অর্থাৎ ভ্রুণ অবস্থায় থাকাকালীন প্রাণী পুরুষ হবে না স্ত্রী হবে তা যে পদ্ধতিতে নির্ধারণ করা যায় তাকে লিঙ্গ নির্ধারণ বলে।
মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণ XX-XY লিঙ্গ নির্ধারণ পদ্ধতি বা যৌন ক্রোমোজোম পদ্ধতিতে বা হেটেরো গ্যামেটিক মেল পদ্ধতি নামে পরিচিত।
যে সকল ক্রোমোজোম যৌন জনন কারি প্রাণীদেহে দেহজ বৈশিষ্ট্যকে নির্ধারণ করে এবং যে ক্রোমোজোম নারী ও পুরুষ দেহে সমানভাবে থাকে তাকে অটোজোম বলে ।মানুষের দেহকোষে মোট 23 জোড়া বা 46 টি ক্রোমোজোম থাকে ।তার মধ্যে 22 জোড়া বা 44 টি হলো অটোজোম ।
যৌন জনন কারি প্রাণীর দেহে যে সকল ক্রোমোজোম লিঙ্গ নির্ধারণ অংশগ্রহণ করে তাদেরকে সেক্স ক্রোমোজোম বা যৌন ক্রোমোজোম বলে। মানুষের দেহকোষে মোট ২৩ জোড়া বা ৪৬ টি ক্রোমোজোম থাকে। তার মধ্যে দুটি বা একজোড়া হল সেক্স ক্রোমোজোম। এর মধ্যে নারী দেহে থাকে XX ও পুরুষ দেহে তাকে XY.
৩. থ্যালাসেমিয়া কাকে বলে ? এর কারণ লেখ ।
উত্তর – থ্যালাসেমিয়া : থ্যালাসেমিয়া হলো মানুষের একটি অটোজোম বাহিত বংশগত রোগ জিন গত ত্রুটির ফলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গিয়ে এই রোগ হয় থ্যালাসেমিয়া রোগে মুখ্যত হৃদপিণ্ড, যকৃত, অন্তক্ষরা গ্রন্থি গুলি আক্রান্ত হয়।
যে অটোজোমাল প্রচ্ছন্ন জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বংশগত রোগে লোহিত রক্ত কণিকায় বিশৃঙ্খলা, লোহিত রক্ত কণিকার মধ্যে থাকা হিমোগ্লোবিনের শৃঙ্খলের অনুপস্থিতি ইত্যাদি কারণে মৃদু রক্তাল্পতা , পান্ডু রোগ সম্পন্ন হয় তাকে থ্যালাসেমিয়া বলে।
কারণ : থ্যালাসেমিয়া দুই রকমের হয় । যথা – আলফা থালাসেমিয়া ও বিটা থ্যালাসেমিয়া।
i) আলফা থ্যালাসেমিয়া : যেই থ্যালাসেমিয়া তে আলফা গ্লোবিন জিন দুটির মধ্যে একটি বা কখনও কখনও দুটি জিন অনু উপস্থিত থাকে , ফলে আলফা পলিপেপটাইড এর সংশ্লেষ হয় না, তাদের আলফা থালাসেমিয়া বলে। যদি একটি গ্লোব ইঞ্জিন নষ্ট হয় তাহলে হিমোগ্লোবিনে একটি পলিপেপটাইড তৈরি হয় ও মৃদু রক্তাল্পতা হয়। একে মাইনর থ্যালাসেমিয়া বলে। যদি দুটি আলফা জিন তৈরি না হয় তাহলে দুটি আলফা পলিপেপটাইড তৈরি হয় না থাকে, তাহলে মেজর থ্যালাসিমিয়া বলে।
ii) বিটা থ্যালাসেমিয়া : হিমোগ্লোবিনের পলিপেপটাইড গঠনকারী বিটা গ্লোবিন জিনের অনুপস্থিতির জন্য যদি বিটা পলিপেপটাইড শৃংখল তৈরি না হয় ,তাহলে যে থ্যালাসেমিয়া হয় তাকে বিটা থ্যালাসেমিয়া বলে।
৪. উপযুক্ত উদাহরণের সাহায্যে পৃথকী ভবন সূত্রটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – গৃগর জোহান মেন্ডেল একসংকর জনন পরীক্ষার ফলাফল থেকে পৃথকী ভবন সূত্রটি স্থাপন করেন। তার মতে এক জোড়া বিপরীত ধর্মি বৈশিষ্ট্যের যুক্ত একই প্রজাতিভুক্ত দুটি জীবের মধ্যে সংকরায়ন ঘটানো প্রথম অপত্য জনুতে উৎপন্ন দুটি বিপরীত ধর্মী একত্রে অবস্থান করলেও গঠনকালে তারা পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে যায়।
উদাহরণসহ ব্যাখ্যা :
i) মেন্ডেল বিশুদ্ধ লম্বা মটর গাছের (TT) সঙ্গে বিশুদ্ধ খর্ব মটর গাছের (Tt) ইতর পরাগযোগ ঘটান ।
ii) প্রথম অপত্য জনুতে (F1 জনূ) উৎপন্ন সমস্ত উদ্ভিদের লম্বা (সংকর) হয়।
iii) জনুতে উৎপন্ন দুটি লম্বা উদ্ভিদের মধ্যে স্বপড়াগযোগ ঘটানো হলে দেখা যাবে উৎপন্ন গাছ গুলির মধ্যে তিন ভাগ হয় লম্বা এবং একভাগ হয় খর্ব বা বেঁটে ।
iv) বিপরীত ধর্মী জিন বা অ্যালিল দুটি পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে পৃথক গ্যামেট এ প্রবেশ করে বলেই F2 জনুতে পুনরায় খর্ব প্রকৃতির উদ্ভিদ সৃষ্টি হয়।
৫. পরিব্যক্তি বা মিউটেশন এর টীকা লেখ ।
উত্তর – জিনের উপাদানগত বা গঠনগত যে পরিবর্তন বংশপরম্পরায় সঞ্চারিত হয় যার ফলে জিনের একটি পরিবর্তিত কাজ সংঘটিত হয় এবং ভিন্ন জিনোটাইপ প্রকাশিত হয় তাকে পরিব্যক্তি বা মিউটেশন বলে।
মিউটেশনের ফলে স্বাভাবিক জিনটি পরিবর্তিত হয়ে মিউট্যান্ট জিনে পরিণত হয়।
মিউটেশন এর প্রকারভেদ :
i) প্রকৃতিতে স্বাভাবিকভাবে যে মিউটেশন ঘটে, তাকে স্বতঃস্ফূর্ত মিউটেশন বলে।
ii) কৃত্রিমভাবে ভৌত বা রাসায়নিক পদার্থের প্রভাবে যে মিউটেশন ঘটে তাকে আবিষ্ট মিউটেশন বলে । আবিষ্ট মিউটেশন সৃষ্টিকারী পদার্থ গুলিকে মিউটাজেন বলে। যেমন- এক্স রশ্মি, ইউভি রশ্মি, নাইট্রাস অ্যাসিড ইত্যাদি।
গুরুত্ব :
i) ভেদ বা প্রকরণ সৃষ্টিতে মিউটেশন অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কারণ – মিউটেশনের ফলে চীনের একাধিক অ্যালিল সৃষ্টি হয় বা বাদ চলে যায়। প্রতিটি অ্যালিল থেকে নির্দিষ্ট ফিনোটাইপের দ্বারা তার বৈশিষ্ট্য প্রকাশ ঘটে।
ii) মিউটেশন দ্বারা সৃষ্ট প্রকরণ এর মাধ্যমেই জীব তার বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন ঘটিয়ে পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে অভিযোজিত করে। মিউটেশন দ্বারা সৃষ্ট প্রকরণের মাধ্যমে জীবের বিবর্তন ঘটে।
৬. হিমোফিলিয়া কি ? এর কারণ ও লক্ষণ গুলি লেখ ।
উত্তর – হিমোফিলিয়া : মানুষের যে লিঙ্গ সংযোজিত বংশগত রোগে ক্ষত স্থানে রক্ত স্বাভাবিকভাবে তঞ্চিত হয় না বা রক্ত তঞ্চন বিলম্বিত হয়, ফলে অবিরাম রক্তক্ষরণ হতে থাকে, তাকে হিমোফিলিয়া বলে।
হিমোফিলিয়ার কারণ :
i) মানুষের এক্স ক্রোমোজোম এ অবস্থিত জিন মিউটেশন এর ফলে ফ্যাক্টর VIII উৎপন্ন হয় না ফলে হিমোফিলিয়া – A ঘটে।
ii) X- ক্রোমোজোম এ অবস্থিত জিন মিউটেশন এর ফলে ফ্যাক্টর ix উৎপন্ন হয় না ফলে হিমোফিলিয়া B ঘটে ।
হিমোফিলিয়ার লক্ষণ :
i) সাধারণত ক্ষতস্থানে তিন থেকে সাত মিনিটের মধ্যে রক্ত দূষিত হয়ে যায় কিন্তু ফ্যাক্টর এইট নাইন এর অভাব ঘটলে রক্ত তঞ্চন ব্যাহত হয় ফলে ক্ষতস্থান থেকে অবিরাম রক্তক্ষরণ ঘটে।
ii) অতিরিক্ত রক্ত বেরিয়ে যাওয়ার ফলে দেহের রক্তচাপ কমে যায় এবং বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় ভৌত প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
৭. জিনগত পরামর্শ বা জেনেটিক কাউন্সেলিং বলতে কী বোঝো ? এর গুরুত্ব লেখ।
উত্তর –
জেনেটিক কাউন্সেলিং :
যে নির্দিষ্ট পদ্ধতির দ্বারা বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন বংশগত রোগের কারণ নির্ণয় এবং পরবর্তী বংশধরদের দেহে রোগ গুলির নির্দিষ্ট সঞ্চালনের সম্ভাবনা নির্দেশ করা হয় ,তাকে জিনগত পরামর্শ বা জেনেটিক কাউন্সেলিং বলে।
জেনেটিক কাউন্সেলিং এর গুরুত্ব :
i) রোগ নির্ণয় ও রোগের কারণ বিশ্লেষণ : রোগীর অতীত বংশ বিবরণী বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে এ রোগের কারণ অনুসন্ধানে সাহায্য করে। রোগ সৃষ্টিকারী জিনটি প্রকট না প্রচ্ছন্ন ধর্মী তা বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়। থ্যালাসেমিয়া, সিকেল সেল অ্যানিমিয়া প্রভৃতি রোগ ডিএনএ টেস্ট ও প্রোটিন টেস্ট এর সাহায্যে নির্ণয় করা হয়।
ii) পরবর্তী প্রজন্মে রোগের সম্ভাবনা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি:
রোগের জিনগত কারণ বিশ্লেষণের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মে রোগের সঞ্চালন ও সম্ভাবনা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হয়। এর দ্বারা পিতা-মাতা রোগাক্রান্ত সন্তান জন্মানোর ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হোন।
৮. বর্ণান্ধতা কাকে বলে ? এর কারণ ও লক্ষণ গুলি লেখ।
উত্তর –
বর্ণান্ধতা : লিঙ্গ সংযোজিত যে বংশগত রোগে মিউট্যানট প্রচ্ছন্ন জিন এর প্রভাবে মানুষ বিভিন্ন রঙের বিশেষত লাল ও সবুজ রঙের পার্থক্য বুঝতে পারে না তাকে বর্ণান্ধতা বলে।
বর্ণান্ধতার কারণ :
i) X ক্রোমোজোম এ অবস্থিত একটি জিনের মিউটেশনের ফলে বর্ণান্ধতা ঘটে।
ii) তিন প্রকার দর্শন রঞ্জক যথা ক্লোরোলেব , এরিথ্রোলেব এবং সায়ানোলেব এর অনুপস্থিতি বা ঘাটতি হলে মানুষের রঙের প্রভেদ বুঝতে সুবিধা হয়।
বর্ণান্ধতার লক্ষণ :
মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের বেশি বর্ণান্ধতা হয় কারণ মহিলাদের ক্ষেত্রে দুটি এক্স ক্রোমোজোম থাকে এই দুটি এক্স ক্রোমোজমে বর্ণান্ধ কিংবা হিমোফিলিয়ার জন্য দায়ী প্রচ্ছন্ন জিন থাকলে মহিলারা এই রোগে আক্রান্ত হবে কিন্তু একটি এক্স ক্রোমোজমে একটি প্রকট জিন অন্যটিতে প্রচ্ছন্ন জিন থাকলে মহিলারা বাহক হবেন।
পক্ষান্তরে পুরুষদের একটি এক্স ক্রোমোজোম থাকে সেখানেই প্রচ্ছন্ন জিন থাকলে পুরুষরা রোগের শিকার হবে। তাই সেক্স ক্রোমোজোমের উত্তরাধিকার নারীদের তুলনায় পুরুষদের বেশি হয়।