Table of Contents
কবি পরিচিতি
১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে ২৪ মে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁর পিতার নাম ছিল কাজী ফকির আহমেদ, তিনি ছিলেন মসজিদের ইমাম ও মাযারের খাদেম। কাজী নজরুল ইসলামের ছেলেবেলার ডাক নাম ছিল দুখু মিয়া। ১৯০৮ সালে তাঁর পিতার মৃত্যুর পর পরিবারের দায়িত্ব তাঁর কাধে এসে পরে। তারপর থেকে পেটের দায়ে জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে চাকরের কাজ থেকে শুরু করে আরও নানা রকম পেশার সাথে যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয় কাজী নজরুল ইসলামের লেখা প্রথম কবিতা মুক্তি। কবিতার পাশাপাশি তাঁর লেখা গল্প গুলিও পাঠক দের কাছে সমান ভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গল্প হল- হেনা, ব্যাথার দান, বাউন্ডুলের আত্মকাহিনি ইত্যাদি। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে ধুমকেতু পত্রিকা প্রকাশিত হয় কাজী নজরুল ইসলামের সম্পাদনায়। সেই বছরেই প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ অগ্নিবীণা। তাঁর এই সব লড়াকু লেখা দেশবাসীর মধ্যে প্রবল উন্মাদনা সৃষ্টি করেছিল। ধুমকেতু পত্রিকায় আনন্দময়ীর আগমনে লেখার জন্য কবি কে গ্রেফতার ও করা হয়েছিল। তাঁর লেখা গান ও জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। যেমন- ঠুমরি, ভাটিয়ালি, কীর্তন, গাজল ইত্যাদি। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগস্ট ঢাকায় কবির মৃত্যু হয়।
সারাংশ
ব্রিটিশ শক্তির অত্যাচার শাসন নিপীড়িরনে ফলে পরাধীন ভারত বাসীর মনে জেগে উঠেছিল স্বাধীনতার স্বপ্ন। ভারতবাসী স্বপ্ন দেখেছিলো স্বাধীন ভারতবর্ষের । আর স্বয়ং নজরুল ইসলাম যেন তার লেখনীর মাধ্যমে দেশবাসীর মনে জাগিয়ে তুলেছিলো ই বিপ্লবের আগুন। ব্রিটিশ শক্তির উপরে তীব্র আক্রোশ, ঘৃণা, ক্রোধ আর ভারত মাতা কে মুক্ত করার অদম্য বাসনা লেখক তার লেখনীর মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে চাইতেন। কবিতার নামের মধ্যে যে প্রলয়ের ইঙ্গিত করেছেন আছে তা আসলে পরাধীনতা থেকে মুক্তির জন্য স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লব কে বোঝানো হয়েছে। তিনি সেই সময় কালীন সমস্ত তরুণ,যুবক অথবা আপামর ভারতবাসী কে উৎসাহ জুগিয়েছিলেন এই কঠোর সংগ্রাম এর মাধ্যমে ভারত মাতা কে শিকল মুক্ত করতে। তিনি ভারত মাতার বীর সন্তান দের উৎসাহিত করেছিলেন এই কঠোর সংগ্রামের মহাব্রত পালন করতে, তবেই তারা দেখতে পাবে ভারত মাতার বুকে স্বাধীনতার সূর্যোদয়। কবি পরাধীনতার বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতার শীর্ষে পৌঁছানোর জন্য বিপ্লবের ওপর সম্পূর্ন আস্থা রেখেছিলেন তা এই কবিতা তে স্পষ্টতই প্রকাশ পেয়েছে। তিনি মনে করেছেন যে কালবৈশাখীর ঝড়ে পরাধীনতার ঠুনকো বাঁধন উড়ে যাবে। সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতা, অর্থানৈতিক বৈষম্য এসবের পতন দেখতে চেয়েছেন কবি। আর এই সবের পতন ঘটা সম্ভব একমাত্র প্রচন্ড প্রলয়ের মাধ্যমে। তাই তিনি দেশবাসী কে ধ্বংস দেখে ভয় না পেতে বলেছেন, কারণ ধ্বংসের মাঝেই সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি। ভারত মাতার বুকে নবীন বিপ্লবী দের আগমন হয়েছে অসুন্দর কে দূর করার জন্য। আর এই শুভ কাজকেই স্বাগত জানানোর জন্য কবি সকল কে জয়ধ্বনি দিতে বলেছেন।
বহু–বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর
১) ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতাটি যে কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত –
(ক) অগ্নিবীণা
(খ) ধুমকেতু
(গ) বিজলি
(ঘ) বিষের বাঁশি
উত্তর : (ক) অগ্নিবীণা
২) কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত একটি পত্রিকা হল –
(ক) বিজলী
(খ) ভারতী
(গ) ধুমকেতু
(ঘ) চক্রবাক
উত্তর : (গ) ধুমকেতু
৩) ” ঐ নূতনের কেতন ওড়ে ” – কেতন কেমন ভাবে ওরে ?
(ক) বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে
(খ) কালবৈশাখী ঝড়ের মত
(গ) লেলিহান শিখার মত
(ঘ) হঠাৎ ধূমকেতুর দেখা দেওয়ার মতো
উত্তর – (খ) কালবৈশাখী ঝড়ের মত
৪) ” তোরা সব জয়ধ্বনি কর ” – কবি কাকে উদ্দেশ্য করে জয়ধ্বনী করতে বলেছেন ?
(ক) মানুষ
(খ) প্রকৃতি
(গ) দেশমাতা
(ঘ) ধ্বংস ও সৃষ্টির দেবতা শিব
উত্তর – (ঘ) ধ্বংস ও সৃষ্টির দেবতা শিবের
৫) ” সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ধমক হেনে ভাঙলো আগল ” – কে ভেঙেছিল আগল?
(ক) দেশের সাধারণ মানুষ
(খ) বিপ্লবীরা
(গ) প্রলয় নেশায় নৃত্য পাগল শিব
(ঘ) দেশমাতা
উত্তর – (গ) প্রলয় নেশায় নৃত্য পাগল শিব
৬) ” মৃত্যু্-গহন অন্ধকূপে ” – বলতে বোঝানো হয়েছে –
(ক) ভীতিজনক স্থান
(খ) পরাধীন ভারত
(গ) কুসংস্কার গ্রস্থ সমাজ
(ঘ) রাত্রির অন্ধকার
উত্তর : (গ) কুসংস্কার গ্রস্ত সমাজ
৭) ” আসছে এবার… ” – কার আসার কথা বলা হয়েছে?
(ক) প্রলয়ংকর শিব
(খ) সাধারণ মানুষ
(গ) রাজনৈতিক নেতা
(ঘ) সবকটি
উত্তর : (ক) প্রলয়ংকর শিব
৮) ” ওরে ওই হাসছে ভয়ংকর ” – ভয়ংকরের হাসির কারণ কি ?
(ক) দীর্ঘকালের আগল ভাঙ্গার আনন্দ
(খ) চারিদিকে নিস্তব্ধতা আনন্দ
(গ) মৃত্যুঞ্জয়ী হওয়ার আনন্দ
(ঘ) সবকটি
উত্তর : (ক) দীর্ঘকালের আগল ভাঙ্গার আনন্দ
৯) কবিতায় ব্যবহৃত ‘কেতন’ শব্দটির অর্থ কী? –
(ক) পতাকা
(খ) ঘর
(গ) নিবাস
(ঘ) ব্যজন
উত্তর : (ক) পতাকা
১০) বিশ্বপিতার বক্ষ-কোলে ঝোলে –
(ক) ফল
(খ) ফুল
(গ) কৃপাণ
(ঘ) মুণ্ডু
উত্তর : (গ) কৃপাণ
১১) ” তোরা সব জয়ধ্বনি কর ” – কার জয়ধ্বনী করার কথা বলা হয়েছে?
(ক) দেশমাতা
(খ) ধ্বংসের দেবতা
(গ) সাম্রাজ্যবাদী শাসক
(ঘ) সবকটি
উত্তর : (খ) ধ্বংসের দেবতা
১২) ” বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে_____” শূন্যস্থান পূরণ করো –
(ক) ভয়ঙ্কর
(খ) ধুমকেতু
(গ) মহাকাল
(ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর : (ক) ভয়ঙ্কর
১৩) অট্টরোলের হট্টগোলে কি স্তব্ধ হয়ে গেছে ?
(ক) গোটা বিশ্ব
(খ) ভারতমাতা
(গ) চরাচর
(ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর : (গ) চরাচর
১৪) ‘কপোল’ শব্দটির অর্থ ? –
(ক) কপাল
(খ) গণ্ডদেশ
(গ) কাঠের পোল
(ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর : (খ) গণ্ডদেশ
১৫) ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কোন ঝড়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে?
(ক) টর্নেডো
(খ) আইলা
(গ) কালবৈশাখী
(ঘ) সবকটি
উত্তর : (গ) কালবৈশাখী
১৬) জীবনহারা অ-সুন্দরকে ছেদন করতে কে আসছে?
(ক) নবীন
(খ) প্রবীণ
(গ) যুবা
(ঘ) শিশু
উত্তর : (ক) নবীন
১৭) ” আসবে ঊষা অরুণ হেসে ______” –
(ক) দারুণ বেশে
(খ) মোহন বেশে
(গ) করুণ বেশে
(ঘ) নবীন বেশে
উত্তর : (গ) করুণ বেশে
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
১। ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতাটির লেখক কে ছিলেন?
উত্তর- প্রলয়োল্লাস কবিতাটির লেখক ছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
২। ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের অংশ?
উত্তর- প্রলয়োল্লাস কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলাম এর লেখা অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের অংশ।
৩। “হাঁকে ওই…”–কার হাঁক শোনা যাচ্ছে?
উত্তর- বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর লেখা প্রলয়োল্লাস কবিতা থেকে উদ্ধৃতাংশটি নেওয়া হয়েছে। উদ্ধৃতাংশে মহাকাল শিব ঠাকুরের হাঁক শোনা যাচ্ছে।
৪। ” দিগম্বরের জটায় হাসে শিশু চাঁদের কর”– লাইন টির অর্থ বিশ্লেষণ করো?
উত্তর- উদ্ধৃতাংশটি কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা প্রলয়োল্লাস কবিতার অংশ। মহাকাল মহাদেবের জটায় অবস্থিত শিশু চাঁদের নরম শান্ত আলোয় সকলের ঘর ভোরে উঠবে কবি এই ইচ্ছাই প্রকাশ করেছেন।
৫। ” মাভৈঃ মাভৈঃ!”–এই “মাভৈঃ” শব্দের অর্থ কি?
উত্তর- উদ্ধৃত অংশটি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা প্রলয়োল্লাস কবিতা থেকে গৃহীত। মাভৈঃ কথার অর্থ ভয় করো না।
৬।”তোরা সব জয়ধ্বনি কর”– কে, কাদের জয়ধ্বনি করতে বলেছেন?
উত্তর- উদ্ধৃতাংশটি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা প্রলয়োল্লাস কবিতাটির অংশ। এখানে কবি স্বাধীনতা কামী সকল দেশবাসীকে জয়ধ্বনি করতে বলেছেন।
৭। রক্ত মাখা কৃপান কোথায় ঝোলে?
উত্তর- কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা প্রলয়োল্লাস কবিতায় রক্ত মাখা কৃপান বিশ্বপাতার বক্ষ কোলে ঝোলে।
৮। কালবৈশাখী ঝড় কী রূপে আসে?
উত্তর- কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা প্রলয়োল্লাস কবিতায় কালবৈশাখী ঝড় মহাকালের চন্ড রূপে আসে।
৯। দিগন্তরের কাঁদন কোথায় লুটায়?
উত্তর- বিদ্রোহী কবি কাজী ইসলামের লেখা প্রলয়োল্লাস কবিতায় দিগন্তরের কাঁদন পিঙ্গল ত্রস্ত জটায় লুটায়।
১০। ” বন্ধুরা প্রদীপ তুলে ধর।”– কিসের জন্য বন্ধুদের প্রদীপ তুলে ধরতে বলা হয়েছে?
উত্তর- উদ্ধৃতাংশটি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা প্রলয়োল্লাস কবিতার অংশ। মহাকাল প্রলয়ের বেশে অসুন্দর কে নাশ করে সুন্দর কে প্রতিষ্ঠা করতে আসছেন তাই তাকে বরণ করে নেওয়ার জন্য বন্ধুদের হাতে প্রদীপ তুলে নেওয়ার কথা বলেছেন কবি।
১১। “আসবে উষা অরুন হেসে”–উষা কখন আসবে?
উত্তর- উদ্ধৃতাংশটি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা প্রলয়োল্লাস কবিতার অংশ। এখানে বলা হয়েছে অরুন হেসে উষা আবে মহারাত্রির শেষে।
১২। জীবনহারা অ-সুন্দরকে ছেদন করতে কে আসছে?
উত্তর- কাজী নজরুল ইসলামের লেখা প্রলয়োল্লাস কবিতায় নবীনরা জীবনহারা অ-সুন্দরকে চ্ছেদ করতে আসছে।
১৩। কিসের দোলায় ঝামর ঝাপটা মেরে গগন দুলায়?
উত্তর- কাজী নজরুল ইসলামের লেখা প্রলয়োল্লাস কবিতায় কেশের দোলায় ঝামর ঝাপটা মেরে গগন দুলায়।
ব্যাখ্যাভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
১। “বিশ্ব মায়ের আসন তারই বিপুল বাহুর পর।”– বিশ্ব মা কে? কার বাহুর উপরে কেনো তার আসন?
উত্তর- উদ্ধৃতাংশটি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা প্রলয়োল্লাস কবিতা থেকে গৃহীত। কবি এখানে “বিশ্ব মা” বলতে ই সুবিশাল পৃথিবীকেই বোঝানো হয়েছে।
প্রলয়ংকর মহাকাল শিব ঠাকুর বজ্র শিখার মিশাল জ্বালিয়ে অসুন্দরকে ধ্বংস করে সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করবেন। তার হাত ধরেই পৃথিবীতে আসবে শান্তির বার্তা। তার মস্ত দুই বাহুর উপরে হবে পরম যত্নে লালিত বিশ্ব মাতার স্থান। কারণ স্বয়ং মহাকাল ই হলেন ই বিশ্বের স্রষ্টা ও রক্ষাকর্তা। তিনি ই যাবতীয় দুঃখ দুর্দশার হাত থেকে বিশ্ব কে ক্রমাগত সন্তান স্নেহে রক্ষা করে চলেছেন প্রতিমুহূর্তে। এই কারণেই কবি মনে করেছেন যে এই মহাকাল এর হাতের উপরেই জগজ্জননির অবস্থান।
২। “এই তো রে তার আসার সময় ওই রথঘর্ঘর–“–মন্তব্যটির বিশ্লেষন করো।
উত্তর- উদ্ধৃতাংশটি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা প্রলয়োল্লাস কবিতা থেকে গৃহীত। যা কিছু প্রগতির বিরুদ্ধে, জরাজীর্ণ, স্বাধীনতার বিপক্ষে সেই সব কিছুরই অবসান ঘটাতে চেয়েছেন কবি।
মানুষের দেবতাকে যেমন এখানে অন্ধকার কারাগারে বেঁধে রাখা হয়েছে তেমনি তাদের পুনরায় মুক্তির সময় ও হয়ে এসেছে। মহাকাল শিব ঠাকুরের রথের সারথী বিদ্যুৎ রুপী চাবুক দিয়ে ক্রমাগত জরাজীর্ন পুরাতন এর উপরে আঘাত হেনে চলেছে। আর এই ঝরে ও গর্জনের মধ্যেও যেন তার রথের অশ্বের ক্ষুরধ্বনি ও শোনা যাচ্ছে। ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে প্রবল আঘাত হানার পূর্বাভাস এগুলো তার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
৩। ” ক্ষুরের দাপট তারায় লেগে উল্কা ছুটায় নীল খিলানে!”–এই লাইনটির অন্তর্নিহিত অর্থ বিশ্লেষণ করো।
উত্তর- উদ্ধৃতাংশটি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতা থেকে গৃহীত। মহাকাল শিব ঠাকুরের আগমন ও তার স্বরূপ নিয়ে এই বর্ণনা উপস্থাপিত করা হয়েছে ।
এখানে কবি মনে করেছেন প্রলয়ঙ্কর শিব ঠাকুরের রথের ঘোড়া ছুটে চলেছে প্রবল গতিতে । তার খুরের আঘাতে যেন আকাশের তারা থেকে উল্কা খসে পড়ছে । কবিতায় কবি গম্বুজাকৃতির আকাশটাকে অট্টালিকার খিলানের সঙ্গে তুলনা করেছেন । সেখানে রক্ত তড়িৎ চাবুক দিয়ে আঘাত করে প্রলয়ংকর মহাকালের রথের সারথি প্রবল বেগে এগিয়ে আসছেন । এক অপূর্ব বর্ণনার মাধ্যমে কবি স্বয়ং প্রলয়ঙ্কর-এর আগমনকে চিত্রায়িত করে তুলেছেন ।
৪ । ” কাল ভয়ংকরের বেশ এবার ওই আসে সুন্দর ” – কাল ভয়ংকরের পরিচয় দাও । কিভাবে তিনি সুন্দরের প্রতিষ্ঠা করবেন বলে কবির ধারণা?
উত্তর – উদ্ধৃতাংশটি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতার অংশবিশেষ । এখানে কাল ভয়ঙ্কর বলতে প্রলয়ংকর মহাদেবের কথা বলা হয়েছে। তিনি যখন আসেন তখন কালবৈশাখী রূপ ধরে আসেন। তার হাতে থাকে বজ্রশিখার মশাল। সর্বনাশী জ্বালামুখী ধূমকেতুর নয় তার আগমন হয়। রক্তমাখা কৃপণ হাতে অট্টহাসি হেসে তিনি সমস্ত অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটান। জীবনহারা অসুন্দরকে তিনিই বিনাশ করেন তাই তার আগমন ধ্বংসাত্মক। তার রথের ঘোড়ার খুরের দাপটে আকাশের তারা থেকে উল্কা খসে পড়ে। এভাবেই মহাবিশ্বের সকল অসুন্দরের সমাপ্তি ঘটে তিনি।
প্রলয়ংকর মহাদেবের আগমনের আহ্বানের মধ্যে দিয়ে কবি নতুন স্বাধীনতার সূর্যোদয় প্রার্থনা করেছেন। মহাকাল সমাজের যা কিছু জরাজীর্ণ পুরাতন তাদের ধ্বংস করে নতুনের আগমনের বার্তা প্রতিষ্ঠা করেন, কারণ মহাকাল স্বয়ং নিজেই এই সুন্দরের প্রতীক। তার প্রলয়ংকর রূপ যেমন প্রলয় কে আহ্বান করে,তেমনি তাঁর সৃষ্টি সুন্দরের প্রতিষ্ঠা করে। এই কারণেই কবি সমাজের সমস্ত জীর্ণ অসুন্দরের প্রাচীর গুলিকে গুড়িয়ে দিয়ে সুন্দরের প্রতিষ্ঠা করার তাগিদে মহাকালকে আহ্বান করেছেন এবং তাকে বরণ করে নেওয়ার জন্য সকলকে জয়ধ্বনী করতে বলেছেন।
৫। ” আসছে এবার অনাগত প্রলয় নেশায় নৃত্য-পাগল ” – অনাগত কে ? সে প্রলয় নেশার নৃত্য-পাগল কেন?
উত্তর – প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতার অংশ। কবিতায় ‘অনাগত’ শব্দটি সেই ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে যে অনাগত অর্থাৎ যা এখনো আসেনি,এই অর্থে। কবি নিশ্চিত ছিলেন পরাধীন ভারতে এমন শক্তির আগমন ঘটবে যা পরাধীনতা থেকে দেশকে মুক্ত করতে পারবে । কবি সেই রুদ্ররূপ মহাশক্তি আহ্বান করেছিলেন।
ভগবান শিবের প্রলয়ংকর বিধ্বংসী নটরাজ রূপের কথা স্মরণ করেই কবি কবিতায় প্রলয় ও নৃত্য-পাগল শব্দ দুটি উল্লেখ করেছেন । কবি যে অনাগত শক্তির অপেক্ষায় রয়েছেন সেই শক্তি তার বিধ্বংসী প্রলয় এর মাধ্যমে দেশের ওপর কাজ করে থাকা ব্রিটিশ শাসন বা অসুন্দরকে উৎখাত করে গোটা দেশে দেশে সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করবেন । অর্থাৎ ভারতকে স্বাধীনতার সুখ এনে দেবে দেবেন।