কবি পরিচিতি
বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ২৫ নভেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। হে প্রেম, হে নৈঃশব্দ্য তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ। এছাড়াও তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলি হলো ধর্মে আছি জিরাফেও আছি, হেমন্তের অরণ্যে আমি পোস্টম্যান, সোনার মাছি খুন করেছি, যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো। তাঁর লেখা দুটি উপন্যাস হলো অবনী বাড়ি আছো?, কুয়োতলা। তিনি আনন্দ পুরস্কার ও সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন।
কবিতার সারাংশ
দাঁড়াও কবিতায় কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় মানুষের বিপদের সময় আমাদের একে অপরের পাশে এসে দাঁড়াতে আহ্বব|ন জানিয়েছেন| বর্তমান জীবনে মানুষ যখন অসহায় হয়ে যায় তখন তার পাশে দাঁড়াবার মত কাউকে পায় না তখন মানুষ অনেকেই ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলে সেই সময় সে যদি কাউকে তার পাশে পাই তাহলে সে সঠিকভাবে তার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে সে অসহায় অনুভব করবে না| মানুষের বিপদে তুমি যদি তার পাশে গিয়ে না দাঁড়াও তোমার মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটবে না| কবি আমাদের আহ্বব|ন জানিয়েছেন আমাদের যখনই একে অপরের প্রয়োজন হবে সুখে হোক দুঃখে হোক সবসময় সকলে সকলের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে|
হাতেকলমে
১.১ শক্তি চট্টোপাধ্যায় কোথায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন?
উত্তর। শক্তি চট্টোপাধ্যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বহডু গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
১.২ তাঁর লেখা একটি উপন্যাসের নাম লেখো।
উত্তর। তাঁর লেখা একটি বিখ্যাত উপন্যাস হলো ‘অবনী বাড়ি আছো?
২. নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও :
২.১ মতো’ শব্দ ব্যবহার করা হয় কখন? তোমার যুক্তির পক্ষে দুটি উদাহরণ দাও।
উত্তর। দুটি পৃথক ব্যক্তি বা বস্তুর মধ্যে তুলনা করার জন্য ‘মতো’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। এটি একটি সাদৃশ্যবাচক শব্দ। যেমন—মেঘের মতো চুল।
২.২ কবি পাখির মতো পাশে দাঁড়াতে বলছেন কেন?
উত্তর। মানুষ লালসার বশবর্তী হয়ে মানুষকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করছে। পাখি আকাশে ডানা মেলে ওড়ে। সে ওপর থেকে সবকিছু লক্ষ করতে পারে। তাই কবি পাখির মতো পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে বলেছেন।
২.৩ ‘মানুষই ফাঁদ পাতছে – কবি একথা কেন বলেছেন? ‘মানুষ’ শব্দের সঙ্গে ই’ ধ্বনি যোগ করেছেন কেন— তোমার কী মনে হয়?
উত্তর। কবি মানুষের জন্য মানুষের ফাঁদ পাতার কথা বলেছেন। অর্থাৎ, আমাদের সমাজে একশ্রেণির মানুষ লোভের বশবর্তী হয়ে অন্য মানুষকে শোষণ করে এবং বিপদে ফেলার চেষ্টা করে।‘মানুষ মানুষের জন্য’ এই আপ্তবাক্যকে মানুষ ভুলে গেছে। কবির আশ্চর্য লাগে যে হিংস্র জন্তু যারা মানুষের শত্রু তারা মানুষকে আক্রমণ করলে তা স্বাভাবিক বলে প্রতিপন্ন হয়। কিন্তু মানুষ মানুষকে তাদের আচরণের দ্বারা বিপন্ন করে তোলে।
২.৪ ‘তোমার মতো মনে পড়ছে’— এই পক্তির অন্তর্নিহিত অর্থ কী?
উত্তর। পঙ্ক্তিটির অর্ন্তর্নিহিত অর্থ হলো পরোপকারী মানুষ যিনি সর্বদা বিপন্ন মানুষের দিকে সাহায্যের হাত প্রসারিত করেন। অর্থাৎ, এই পৃথিবীতে বিপন্ন মানুষের উদ্ধার কল্পে এক শ্রেণির মানুষ সদা তৎপর। এখানে সেই জাতীয় মানুষকে স্থগিত করে বলা হয়েছে যার তুলনা সে নিজেই।
২.৫ ‘এসে দাঁড়াও ভেসে দাঁড়াও এবং ভালোবেসে দাঁড়াও’ এই পঙক্তিটির বিশেষত্ব কোথায়? এই ধরনের দুটি বাক্য তুমি তৈরি করো।
উত্তর। সংকলিত পঙক্তিটিতে ‘দাঁড়াও’ কথাটি তিনবার ব্যবহৃত হয়েছে, বিপন্ন মানুষের উদ্ধারকারীর ভূমিকাকে নির্দেশ করতে। প্রথম ‘দাঁড়াও’ ক্রিয়াটির দ্বারা বিপন্ন মানুষের পাশে উপস্থিতির কথা বলা হয়েছে। ‘ভেসে দাঁড়াও’ কথাটির মাধ্যমে সমস্ত বাধা-বিপত্তিকে উপেক্ষা করে দ্রুত অসহায় মানুষকে বিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্য তার পাশে এসে দাঁড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
৩. “মানুষ বড়ো কাঁদছে” —কী কারণে কবি এই কথা বলেছেন?
উত্তর। মানুষে মানুষে ভেদাভেদের জন্য এক শ্রেণির মানুষ শোষণ ও বর্ণনার শিকার হচ্ছে। শোষিত ও বঞ্চিত মানুষ দুঃখবেদনায় জর্জরিত হচ্ছে। তাই তারা কান্নায় ভেঙে পড়ছে। কবির একথা বলার কারণ হলো কবি মানুষের দুঃখ বেদনার সমব্যথি।
৪. ‘মানুষ বড়ো একলা, তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও’—এই পক্তিটিকে তিনবার ব্যবহার করার কারণ কী হতে পারে বলে তোমার মনে হয়?
উত্তর। কবিতার তিনটি স্তবকে এই পঙ্ক্তিটি তিনবার ব্যবহৃত হয়েছে। এই বহুল ব্যবহারের কারণ হলো কবির মানবের দুঃখে সমব্যথি হবার আকুতি। অর্থাৎ কবি বলতে চাইছেন যে অসহায় মানুষ অত্যন্ত একলা তাকে সাহায্য করার কেউ নেই। আবার সাহায্য না পেলে তাদের কাউকে দূর করা যাবে না। দুঃখী মানুষের জন্য কবিচিত্তের আকুলতা প্রকাশ করতে এই পড়ক্তিটিকে তিনটি স্তবকে তিনবার ব্যবহার করা হয়েছে।
৫. কবিতাটির নাম ‘দাঁড়াও’ কতটা সার্থক? কবিতাটির নাম ‘মানুষ বড়ো কাঁদছে’ হতে পারে কি তোমাদের উত্তরের ক্ষেত্রে যুক্তি দাও।
উত্তর। কবিতাটির নামকরণ করা হয়েছে ‘দাঁড়াও’। এখানে দাঁড়াও কথাটির দ্বারা সাহায্য করার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ, দাঁড়াও মানে সাহায্যের হাত বাড়াও বিপন্ন মানুষের সেবায়। তাই কবিতার নামকরণ ‘দাঁড়াও’ সার্থক।
৬. কবি কাকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে অনুরোধ করছেন বলে তোমার মনে হয়?
উত্তর। কবি পরোপকারী মানুষকে বিপন্ন অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে বলেছেন বলে আমি মনে করি। যে ব্যক্তি আর্ত মানুষের সেবায় নিজের জীবন তুচ্ছ করে আত্মনিয়োগ করেন তিনি শ্রদ্ধেয় এবং অনুকরণীয়, তাঁর আদর্শে বহু মানুষ উদ্বুদ্ধ হল এবং সমাজের উপকারে এগিয়ে আসেন। কবি এইরূপ মানুষকেই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন।
৭. কবিতাটি চলিত বাংলায় লেখা, শুধু একটা শব্দ সাধু ভাষার শব্দটি খুঁজে বার করো এবং শব্দটিকে এভাবে ব্যবহার করেছেন কেন কবি?
উত্তর। কবিতাটিতে সাধুভাষায় লেখা একটি শব্দ হলো ‘তাহার’। পরোপকারী ব্যক্তির মহানুভবতাকে চিহ্নিত করতে শব্দটি সাধুভাষায় ব্যবহৃত হয়েছে।
৮. প্রথম স্তবকের তিনটি পক্তির প্রত্যেকটির দলসংখ্যা কত? প্রতিটি পক্তি কটি রুদ্ধদল ও মুক্তদল নিয়ে তৈরি?
উত্তর।
প্রথম স্তবকের প্রতিটি পক্তির প্রত্যেকটির দলসংখ্যা—১৬
প্রথম পঙ্ক্তি– রুদ্ধদল = ৪ মুক্তদল = ১২
দ্বিতীয় পত্তি – রুদ্ধদল = ৫ মুক্তদল = ১১
তৃতীয় পক্তি – রুদ্ধদল = ৪ মুক্তদল = ১২
৯. কী ঘটেছে লেখো :
উত্তর।
সন্ধ্যা > সইন্ধা > সন্ধে—অভিশ্রুতি।
ফাদ > ফাঁদ – স্বতঃনাসিক্যীভবন।
অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর
১. দাঁড়াও কবিতায় কবি আমাদের কি বার্তা দিতে চেয়েছেন ?
উত্তর। কবি তাঁর কবিতায় বর্তমান জীবনের আমাদের ভুল ত্রুটি তুলে ধরেছেন যখন কোন মানুষ বিপদে পড়ে তখনই আমরা তার পাশে না দাঁড়িয়ে তাকে সাহায্য না করে অন্যত্র চলে যায় কবিতার মাধ্যমে আমাদের সেই ভুলটি শুধরে নিতে বলেছেন|
২. বিশেষ করে কখন আমাদের একে অপরের পাশে থাকা উচিৎ?
উত্তর। আমরা আমাদের সবসময় একে অপরের পাশে থাকা উচিত কিন্তু বিশেষ করে বিপদের সময় আমাদের একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে মনোবল বৃদ্ধি করা ভীষণ প্রয়োজন |
৩. মানুষ কাঁদছে কেন?
উত্তর। মানুষ যখন ভীষণ অসহায় হয়ে পড়ে এবং তার পাশে দাঁড়ানোর মত কাউকে খুঁজে পায় না তখন বাধ্য হয়ে তার দুঃখ প্রকাশের জন্য কেঁদে ফেলে|