সৃষ্টির আদিলগ্নে পৃথিবীর উত্তপ্ত তরল অবস্থা থেকে তাপ বিকিরণ করে শীতল ও কঠিন ভূপৃষ্ঠ গড়ে ওঠার সময় বিভিন্ন কারণে ভূপৃষ্ঠের বেশ কিছু অংশ অবনমিত হয়। পরে ওই অবনমিত স্থানগুলি অবিশ্রান্ত বারিধারার দ্বারা ভরাট হয়ে বিশাল জলভাঙার সৃষ্টি করে। এই বিশাল জলভাণ্ডারের ভৌগোলিক নাম বারিমণ্ডল। অনুমান করা হয়, পৃথিবীর মোট জলরাশির শতকরা 97 ভাগই আছে সাগর, মহাসাগর রূপে। আর বাকি ও ভাগ জল আছে নদী, জলাশয়, হ্রদ, হিমবাহ এবং মাটির নীচের জল বা ভৌমজলরাশি।
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো:
১. পৃথিবীর মোট জলরাশির শতকরা কত শতাংশ সাগর-মহাসাগর রূপে আছে।
1. ৯৭
2. ৯৮
3. ১০০
4. ৯৬
উত্তর: 1. ৯৭
২. নিরক্ষীয় অঞ্চলে সমুদ্র স্রোত হল –
1. শীতল স্রোত
2. নাতিশীতোষ্ণ স্রোত
3. পৃষ্ঠ স্রোত
4. অন্ত স্রোত
উত্তর: 3. পৃষ্ঠ স্রোত
৩. গ্র্যান্ড ব্যাংক একটি –
1. মগ্নচড়া
2. নদী চড়া
3. সমুদ্রদ্বীপ
4. মরুভূমি
উত্তর: 1. মগ্নচড়া
৪. কতদিনে চাঁদ পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করে।
1. 15 দিন
2. 30 দিন
3. 25 দিন
4. 27 ⅓ দিন
উত্তর: 4. 27 ⅓ দিন
৫. কোন স্থানে জোয়ার ও ভাটার মধ্যে সময়ের ব্যবধান কত?
1. 6 ঘন্টা 23 মিনিট
2. 6 ঘণ্টা 31 মিনিট
3. 6 ঘন্টা 13 মিনিট
4. 6 ঘন্টা
উত্তর: 3. 6 ঘন্টা 13 মিনিট
৬. উষ্ণ ও হালকা জলরাশি সমুদ্র তলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে একে কি বলে?
1. উষ্ণ স্রোত
2. বহি স্রোত
3. অন্ত স্রোত
4. শীতল স্রোত
উত্তর: 1. বহি স্রোত
৭. ল্যাব্রাডর স্রোত একটি –
1. উষ্ণ স্রোত
2. বহি স্রোত
3. নাতিশীতোষ্ণ স্রোত
4. অন্তঃ স্রোত
উত্তর: 4. অন্তঃ স্রোত
৮. ঋতুভিত্তিক স্রোত দেখা যায় –
1. আটলান্টিক মহাসাগরে
2. ভারত মহাসাগরে
3. প্রশান্ত মহাসাগরে
4. কুমেরু মহাসাগর
উত্তর: 2. ভারত মহাসাগরে
৯. সূর্য ও চন্দ্রের আকর্ষণ স্থানের প্রতিপাদ স্থানে জোয়ার সৃষ্টি হয় তাকে বলে –
1. মুখ্য জোয়ার
2. গৌণজোয়ার
3. মরা জোয়ার
4. ভরা জোয়ার
উত্তর: 2. গৌণজোয়ার
১০. জোয়ার-ভাটা সৃষ্টির প্রধান কারণ –
1. উষ্ণতার তারতম্য
2. চন্দ্র সূর্যের আকর্ষণ শক্তি
3. পৃথিবীর আবর্তন
4. মেরু রেখার হেলে অবস্থান
উত্তর: 2. চন্দ্র সূর্যের আকর্ষণ শক্তি
১১. কোন স্থানে 24 ঘন্টায় জোয়ার হয় –
1. 2 বার
2. 3 বার
3. 1 বার
4. 5 বার
উত্তর: 1. 2 বার
১২. পশ্চিমবঙ্গের কোন নদীতে বান ডাকে?
1. হুগলি
2. তিস্তা
3. তোরসা
4. জলঙ্গি
উত্তর: 1. হুগলি
১৩. সূর্য চন্দ্র পৃথিবী একই সরলরেখায় অবস্থান করলে তাকে বলে –
1. আপেগী
2. সিজিগি
3. পেরেগি
4. কোনোটিই নয়
উত্তর: 2. সিজিগি
১৪. ভরা জোয়ার কত দিন অন্তর দেখা যায় –
1. 10
2. 12
3. 15
4. 20
উত্তর: 3. 15
১৫. পৃথিবীর উপর চন্দ্র ও সূর্যের আকর্ষনের আনুপাতিক হার –
1. 4:9
2. 6:3
3. 3:6
4. 9:4
উত্তর: 4. 9:4
১৬. মরা কোটাল বা মরা জোয়ার ঘটে –
1. অষ্টমী তিথিতে
2. অমাবস্যা তিথিতে
3. পূর্ণিমা তিথিতে
4. ত্রয়োদশী তিথিতে
উত্তর: 2. অমাবস্যা তিথিতে
১৭. জোয়ার ভাটা দেখা যায় না –
1. ভারত মহাসাগরে
2. প্রশান্ত মহাসাগরে
3. আটলান্টিক মহাসাগরে
4. আরব সাগরে
উত্তর: 4. আরব সাগরে
১৮. জোয়ার স্রোত প্রবাহিত হয় –
1. পূর্ব থেকে পশ্চিমে
2. দক্ষিণ থেকে পূর্বে
3. উত্তর থেকে পশ্চিমে
4. পশ্চিম থেকে পূর্বে
উত্তর: 1. পূর্ব থেকে পশ্চিমে
১৯. ষাড়াষাড়ির বান দেখা যায় –
1. হুগলি নদীতে
2. গঙ্গা নদীতে
3. যমুনা নদীতে
4. তিস্তা নদীতে
উত্তর: 1. হুগলি নদীতে
20. শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথি জোয়ারকে বলে –
1. ভরা জোয়ার
2. মরা জোয়ার
3. মুখ্য জোয়ার
4. গৌণ জোয়ার
উত্তর: 2. মরা জোয়ার
২১. পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব কত –
1. 15 কোটি কিমি
2. 20 কোটি কিমি
3. 10 কোটি কিমি
4. 18 কোটি কিমি
উত্তর: 1. 15 কোটি কিমি
২২. গৌণ জোয়ার অপেক্ষা মুখ্য জোয়ারের প্রাবল্য –
1. কম
2. বেশি
3.সময়ের উপর নির্ভরশীল
4. কোনোটিই নয়
উত্তর: 2. বেশি
২৩. নিজ কক্ষপথে পরিবহনকালে চাঁদ যখন পৃথিবীর সবথেকে কাছে আসে সেই অবস্থান কে বলা হয় –
1. পেরিগি
2. আপেগি
3. সিজিগি
4. কোনোটিই নয়
উত্তর: 1. পেরিগি
২৪. অমাবস্যার দিন পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে চন্দ্র একই সরলরেখায় অবস্থান করলে তাকে বলে –
1. প্রতিযোগ অবস্থান
2. সংযোগ অবস্থান
3. পেরিগি অবস্থান
4. অ্যাপেগি অবস্থান
উত্তর: সংযোগ অবস্থান
২৫. মরা জোয়ারের সময় পৃথিবীর সাপেক্ষে চাঁদ ও সূর্যের পারস্পারিক অবস্থান থাকে –
1. 90°
2. 60°
3. 45°
4. 180°
উত্তর: 1. 90°
শূন্যস্থান পূরণ করো:
১. মহাকর্ষীয় শক্তি এবং পৃথিবীর _____ সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির জন্য দায়ী।
উত্তর : আবর্তনজনিত বল
২. মৌসুমি স্রোত দেখা যায় ___ মহাসাগরে।
উত্তর: ভারত
৩. চন্দ্র জোয়ারের তুলনায় সৌর জোয়ার____ তীব্র হয়।
উত্তর: কম
৪. পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের সামনে আসে, সেই অংশে তখন _____ হয়।
উত্তর: মুখ্য চন্দ্র জোয়ার
৫. _____ ও পূর্ণিমা তিথির জোয়ারকে ভরা জোয়ার বা ভরা কোটাল বলে।
উত্তর: অমাবস্যা
৬. _____ নদীতে বর্ষাকালে অনেক সময় ষাঁড়াষাঁড়ির বান দেখা যায়।
উত্তর: হুগলি
৭. ___ জোয়ারের সময় 180° ডিগ্রি কোণে অবস্থিত স্থানে গৌণ জোয়ারের সৃষ্টি হয়।
উত্তর: মুখ্য
৮. চন্দ্র, সূর্য ও পৃথিবী একই সরলরেখায় অবস্থান করলে পৃথিবীপৃষ্ঠে জোয়ারের প্রাবল্য ___ হয়।
উত্তর: বেশি
৯. পৃথিবীর ওপর সূর্যের চেয়ে চাঁদের আকর্ষণশক্তি প্রায় ____ কার্যকরী হয়।
উত্তর: দ্বিগুণ
১০. পশ্চিমাবায়ু প্রবাহিত অঞ্চলে সমুদ্রস্রোত ___ দিক থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়।
উত্তর: পশ্চিম
১১. পৃথিবী, চন্দ্র এবং সূর্যের কেন্দ্রের একই সরলরেখায় অবস্থানকে বলা হয়____।
উত্তর: সিজিগি
১২. বাঁড়াষাড়ির বানের জল____ মিটার উঁচু হয়।
উত্তর: ৬ – ৯
১৩. সমুদ্রস্রোতের গতি প্রতি ঘণ্টায় গড়ে 3 থেকে___ কিমি পর্যন্ত হয়।
উত্তর: ৯
১৪. চন্দ্রের পেরিগি অবস্থানের জোয়ারকে বলা হয় ______জোয়ার।
উত্তর: মুখ্য
১৫. সমুদ্রজলের ঘনত্বের পার্থক্যে ____সৃষ্টি হয়।
উত্তর: সমুদ্রস্রত
১৬. সর্পিল (Spiralling) সমুদ্রস্রোত ____ নামে পরিচিত।
উত্তর: একম্যান স্পাইরাল
১৭. ভূপৃষ্ঠের স্থলভাগ অপেক্ষা জলভাগে _____ শক্তির প্রভাব বেশি।
উত্তর: আবর্তন গতিজনিত বিকর্ষণ
১৮. পৃথিবীতে জোয়ারভাটা সৃষ্টিতে ____ জ্যোতিষ্কের প্রভাব বেশি।
উত্তর: চাঁদ
১৯. ভরা জোয়ার সৃষ্টির মূল কারণ হল_____।
উত্তর: চাঁদ ও সূর্যের পরস্পর বিপরীতমুখী টান
২০. বিপুল পরিমাণে সামুদ্রিক জলরাশির প্রায় নিয়মিতভাবে একস্থান থেকে নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হওয়াকে ______বলা হয়।
উত্তর: সমুদ্রস্রোত
শুদ্ধ অশুদ্ধ নির্বাচন করো:
১. সমুদ্রস্রোত সৃষ্টিতে বায়ুপ্রবাহের ভূমিকা মুখ্য নেই।
উত্তর: অশুদ্ধ
২. প্রধানত চাঁদের বিকর্ষণজনিত শক্তির প্রভাবেই পৃথিবীতে জোয়ারভাটার সৃষ্টি হয়।
উত্তর: অশুদ্ধ
৩. পূর্ণিমা তিথিতে চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ বল পৃথিবীর একই দিকে ক্রিয়া করে।
উত্তর: অশুদ্ধ
৪. জোয়ারের প্রভাবে শীতপ্রধান অঞ্চলের বন্দরগুলি বরফমুক্ত থাকে।
উত্তর: শুদ্ধ
৫. জোয়ারভাটার প্রবল শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব ।
উত্তর: শুদ্ধ
৬. পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে চন্দ্রের অবস্থান হল সংযোগ অবস্থান।
উত্তর: শুদ্ধ
৭. চন্দ্র ও সূর্যের মধ্যে পৃথিবীর অবস্থান হল প্রতিযোগ অবস্থান।
উত্তর: শুদ্ধ
৮. অষ্টমী তিথিতে চন্দ্র ও সূর্যের পৃথিবীর সঙ্গে সমকৌনিক অবস্থান করে না।
উত্তর: অশুদ্ধ
৯. হুগলি নদীতে বর্ষাকালে অনেক সময় বাড়াবাড়ির বান দেখা যায়।
উত্তর: অশুদ্ধ
১০. চন্দ্রের অ্যাপোগি অবস্থানের জোয়ারকে বলা হয় পেরিজিয়ান জোয়ার।
উত্তর: অশুদ্ধ
১১. পৃথিবীর আবর্তনের জন্য সমুদ্রস্রোত উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে বেঁকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে সমুদ্রস্রোত বামদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়।
উত্তর: শুদ্ধ
১২. গ্রান্ড ব্যাংক একটি মগ্নচরা।
উত্তর: শুদ্ধ
১৩. ঋতুভিত্তিক স্রোেত দেখা যায় ভারত মহাসাগরে।
উত্তর: শুদ্ধ
১৪. পৃথিবী থেকে চাঁদের গড় দূরত্ব 4.84 লক্ষ কিমি।
উত্তর: অশুদ্ধ
১৫. জোয়ারভাটা সৃষ্টির প্রধান কারণ উষ্ণতার তারতম্য।
উত্তর: অশুদ্ধ
স্তম্ভ মেলাও:
বামস্তম্ভ | ডানস্তম্ভ |
i. সপিল (Spiralling) সমুদ্রস্রোত | a. তরঙ্গশীর্ষ |
ii. অন্তঃস্রোত | b. দ্রোণীতল |
iii. বহিঃস্রোত | c. শীতলস্রোত |
iv. সমুদ্রতরঙ্গের পর্যায়ক্রমিক উচ্চতর অংশ | d. উন্নস্রোত |
v. সমুদ্রতরঙ্গের পর্যায়ক্রমিক নিম্নতম অংশ | e. বায়ুপ্রবাহ |
vi. সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণ | f. একম্যান স্পাইরাল |
উত্তর: I – f, ii – c, iii – d, iv – a, v – b, vi – e
একটি বা দুটি শব্দে উত্তর দাও:
১. উষ্ণ স্রোত কাকে বলে?
উত্তর: নিরক্ষীয় তথা ক্রান্তীয় অঞ্চলের উষ্ণ সমুদ্রের উষ্ণ ও হালকা জলরাশি সমুদ্রজলের উপরিভাগ দিয়ে পৃষ্ঠপ্রবাহরূপে শীতল মেরু অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। একে ঊষু স্রোত বলে।
২. চান্দ্রমাস কী?
উত্তর: পৃথিবীকে একবার পরিক্রমণ করতে চাঁদের প্রায় 27 1/3, দিন সময় লাগে, একে বলা হয় চান্দ্রমাস।
৩. জোয়ারের স্রোত পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয় কেন?
উত্তর: পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তন করে বলে জোয়ারের স্রোত পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়।
৪. কোন ঋতুতে কোন নদীতে প্রবল বান ডাকা লক্ষ করা যায়?
উত্তর: বর্ষাকালে, হুগলি
৫. কোন ভিথিতে মরা কোটাল হয়?
উত্তর: অমাবস্যা, শুক্লপক্ষ এবং কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে।
৬. কোনো স্থানে জোয়ার ও ভাটা কত সময়ের ব্যবধানে হয়?
উত্তর: 6 ঘণ্টা 13 মিনিট
৭. পৃথিবী থেকে চাঁদের গড় দূরত্ব কত?
উত্তর: 3.84 লক্ষ কিমি
৮. সমুদ্রের একই জায়গায় দিনে ক-বার জোয়ার ও ক-বার ভাটা হয়?
উত্তর: দু-বার জোয়ার, দু-বার ভাটা
৯. পেরিগি কাকে বলে?
উত্তর: পৃথিবীর কেন্দ্র ও চন্দ্রের কেন্দ্রের দূরত্ব সবথেকে কম হলে তাকে পেরিগি বলা হয়। এই সময় দূরত্ব থাকে ৩ লক্ষ্ ৫৬ হাজার কিমি।
১০. সমুদ্রজলে ভাসমান বরফের স্তুপকে কি বলে?
উত্তর: হিমসৈল
১১. গায়র কী?
উত্তর: মহাসাগরের সমুদ্রস্রোত চক্রাকারে ঘুরে যে জলাবর্ত সৃষ্টি করে, তাকে সমুদ্রস্রোতের চক্রগতি বা গায়ব বলে।
১২. গভীর সমুদ্রের তুলনায় অগভীর সমুদ্রে সমুদ্রস্রোতের গতি কিরূপ থাকে?
উত্তর: বেশি
১৩. সমুদ্রের বেশি লবণযুত্ব ভারী জন্য সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে কম লবণযুক্ত হালকা জলের দিকে প্রবাহিত হয় কি হিসাবে?
উত্তর: অন্তঃস্রোত হিসেবে
দুটি তিনটি বাক্যে উত্তর দাও: ( প্রশ্ন মান-২/৩)
১. সমুদ্রস্রোত ও সমুদ্র তরঙ্গের পার্থক্য লেখ।
উত্তর:
সমুদ্রস্রোত:
১. সমুদ্রের জলরাশি একটি নির্দিষ্ট স্থান/অঞ্চল থেকে নির্দিষ্ট পথে সর্বদা স্থানান্তরিত হয়, অর্থাৎ সমুদ্রস্রোত অগ্রগতিসম্পন্ন।
২. নিয়ত/মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ, জলের উয়তা, লবণতা, তটরেখার অবস্থান ইত্যাদি।
৩. সমুদ্রস্রোত উপকূলের সমান্তরালে বয়ে চলে বলে উপকূলের গঠনগত কোনোরূপ পরিবর্তন হয় না।
৪. উষু ও শীতল সমুদ্রস্রোত উপকূলীয় জলবায়ুকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে।
সমুদ্র তরঙ্গ:
১.সমুদ্র জলরাশির কোনো স্থান পরিবর্তন হয় না। একই স্থানে আবদ্ধ থাকে। শুধু তরঙ্গের অবয়ব এগিয়ে চলে।
২.বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ, ভূমিকম্প (সুনামি)।
৩.সমুদ্রতরঙ্গ ক্ষয়কার্য ও সঞ্চয় কার্যের মাধ্যমে উপকূলভাগে গঠনগত পরিবর্তন ঘটায়।
৪.সমুদ্রতরঙ্গ উপকূলীয় জলবায়ুর ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না।
২. শীতল স্রোত কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর:
শীতল স্রোত (Cold currents) : উচ্চ অক্ষাংশে তথা মেরু অঞ্চলের শীতল ও ভারী জলরাশি সমুদ্রজলের নীচের অংশ দিয়ে অন্তঃস্রোতরূপে নিম্ন অক্ষাংশ তথা উয়ুমণ্ডলের দিকে প্রবাহিত হয়। একে শীতল স্রোত বলে। শীতল ও ভারী জলরাশি সমুদ্রজলের নীচের অংশ দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে একে অন্তঃস্রোত বলে। বায়ু যেমন—ল্যাব্রাডর স্রোত।
৩. মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ার কাকে বলে?
উত্তর:
মুখ্য জোয়ার : আবর্তনের সময় পৃথিবীর যে অংশ চন্দ্রের সর্বাপেক্ষা নিকটবর্তী হয়, সেই স্থানে চন্দ্রের মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাব সর্বাধিক হয়। ফলে ওই স্থানে যে প্রবল জোয়ারের সৃষ্টি হয় তাকে মুখ্য জোয়ার বলে। মূলত চন্দ্রের আকর্ষণে মুখ্য জোয়ার সৃষ্টি হয় বলে একে চান্দ্র জোয়ারও বলে।
গৌণ জোয়ার : পৃথিবীর যে অংশে চন্দ্রের আকর্ষণ বল অধিক কার্যকরী তার ঠিক বিপরীত দিকে (প্রতিপাদ স্থানে) কেন্দ্রাতিগ শক্তির প্রভাবে যে জোয়ারের সৃষ্টি হয়, তাকে গৌণ জোয়ার বলে। অর্থাৎ মুখ্য জোয়ার যে স্থানে সংঘটিত হয় তার প্রতিপাদ স্থানে গৌণ জোয়ার হয়। গৌণ জোয়ার অপেক্ষা মুখ্য জোয়ারের প্রাবল্য বেশি।
৪. পৃথিবীর উপর চাঁদ সূর্যের মিলিত মহাকর্ষ বলের প্রভাবে জোয়ার ভাটা সৃষ্টির কারণ লেখ।
উত্তর: নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রানুসারে এই মহাবিশ্বে প্রতিটি বস্তুকণা প্রতিটি বস্তুকণাকে আকর্ষণ করে। সুতরাং, এই নিয়মেই পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য পরস্পর পরস্পরকে আকর্ষণ করে। পৃথিবী থেকে সূর্য গড়ে 15 কোটি কিমি দূরে অবস্থিত এবং চাঁদ 3 লক্ষ 84 হাজার 400 কিমি দূরে অবস্থিত। তাই পৃথিবীর ওপর চাঁদের আকর্ষণ বল (2.2 গুণ) বেশি। প্রধানত চাঁদের আকর্ষণেই সমুদ্রের জলস্ফীতিহয়ে জোয়ারের সৃষ্টি হয়। জোয়ারের সমকোণসস্থ অঞ্চলের জলতল নেমে গিয়ে বা অবনমিত হয়ে ভাটার সৃষ্টি হয়। সূর্য চন্দ্রের চেয়ে প্রায় 255 লক্ষ গুণ ভারী হলেও বহু দূরে (পৃথিবী থেক সূর্যের দূরত্ব চন্দ্রের দূরত্ব অপেক্ষা 391 গুণ বেশি) অবস্থিত হওয়ার জন্য সূর্যের আকর্ষণে সৃষ্ট জোয়ারের প্রাবল্য কম থাকে। পৃথিবীর ওপর চন্দ্র ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণ বল একটি স্থানের ওপর একসঙ্গে কার্যকর হলে প্রবল জোয়ার হয়।
সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও: ( প্রশ্ন মান- ৫)
১. সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণ গুলি বর্ণনা কর।
উত্তর:বিভিন্ন কারণে সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি হয় :
1. পৃথিবীর আবর্তন:
(a) পৃথিবীর আবর্তনের কারণে কোরিওলিস বল বা দিক বিক্ষেপক শক্তির সৃষ্টি হয়। এর প্রভাবে সমুদ্রস্রোত সরাসরি উত্তর-দক্ষিণে প্রবাহিত না হয়ে ফেরেল সূত্রানুসারে উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়।
(b) পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তন করে এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলে আবর্তন বেগ সর্বাধিক। ফলস্বরূপ মহাসাগরগুলির নিরক্ষীয় অঞ্চলে নিরক্ষরেখার উভয়পাশে পূর্ব থেকে পশ্চিমগামী উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের সৃষ্টি হয়।
২. বায়ুপ্রবাহ : আধুনিক সমুদ্রবিজ্ঞানীদের (পিটারসন, একম্যান) ধারণা বায়ুপ্রবাহ, বিশেষ করে নিয়ত বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণ। নিয়ত বায়ুপ্রবাহ (আয়ন, পশ্চিমা ও মেরু বায়ু) সমুদ্রের উপরিভাগের জলরাশিকে ঘর্ষণ বলের মাধ্যমে তার গতিপথের দিকে তাড়িত করে সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি করে। যেমন–উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত, পশ্চিমাবায়ু উত্তর আটলান্টিক ও মেরুবায়ু কুমেরু ও সুমেরু শোত সৃষ্টি করেছে।
3. সমুদ্রজলের উন্নতার তারতম্য : সূর্যরশ্মির পতন কোণের (লম্ব/তির্যক) পার্থক্যের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের সমুদ্রজলে উন্নতার তারতম্য লক্ষ করা যায়। সমুদ্রজলের উন্নতার সমতা বজায় রাখার জন্যই সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয়। নিরক্ষীয় তথা ক্রান্তীয় অঞ্চলে লম্ব সূর্য কিরণে সমুদ্রের জল অধিক উত্তপ্ত ও হালকা হয়। এই উষ্ণ ও হালকা সমুদ্রজল বহিঃস্রোত বা পৃষ্ঠ স্রোতরূপে শীতল মেরু অভিমুখী হয়। জলের এই শূন্যতা পূরণের জন্য মেরু অঞ্চলের শীতল ও ভারী জল (তির্যক কিরণের কারণে)অন্তঃস্রোতরূপে নিরক্ষীয় তথা উন্ন অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়।
4. সমুদ্রজলের লবণতা ও ঘনত্বের পার্থক্য: সমুদ্রজলের লবণতার পরিমাণ সর্বত্র সমান নয়।আবার লবণতার তারতম্যে ঘনত্বের তারতম্য হয় এবং তা সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি করে। যেমন—অধিক লবণাক্ত ও ঘন জল ভারী হওয়ায়সমুদ্রজলের তলদেশ দিয়ে অন্তঃস্রোতরূপে কম লবণাক্ত হালকা জলের দিকে প্রবাহিত হয়। জলের এই শূন্যতা পূরণের জন্য কম লবণাক্ত ও হালকা জল বহিঃস্রোতরূপে অধিক লবণাক্ত জলের দিকে প্রবাহিত হয়। যেমন—আটলান্টিকের কম লবণাক্ত হালকা জল বহিঃস্রোত- রূপে ভূমধ্যসাগরের দিকে এবং ভূমধ্যসাগরের অধিক লবণাক্ত ভারী জল অন্তঃ বা পৃষ্ঠস্রোতরূপে আটলান্টিকের দিকে প্রবাহিত হয়।
5. বরফের গলন: সমুদ্রের কোনো অঞ্চলে যেমন মেরু অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে বরফ বা হিমবাহ গলে গেলে মিষ্টি জলের জোগান বেড়ে গিয়ে জলস্ফীতি ঘটায় এবং লবণতা হ্রাস পায়। ফলে এই অঞ্চল থেকে জলরাশি নিম্ন জলতলবিশিষ্ট অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়ে সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি করে। যেমন—আটলান্টিকের পূর্ব গ্রিনল্যান্ড স্রোত।
6. উপকূলের আকৃতি: সমুদ্রস্রোতের প্রবাহপথে মহাদেশের উপকূলভাগ ও দ্বীপপুঞ্জের অবস্থানের জন্য সমুদ্রস্রোত প্রতিহত হয়ে গতিপথ পরিবর্তিত হয় এবং একাধিক শাখায় বিভক্ত হয়ে প্রবাহিত হয়। যেমন—দক্ষিণ আটলান্টিকের দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত ব্রাজিলের সাও রক অন্তরীপে বাধা পেয়ে ব্রাজিল স্রোত সৃষ্টি হয়।
7. ঋতুভেদ : ঋতু অনুসারে বায়ুপ্রবাহের দিক পরিবর্তন হলে, সেই পরিবর্তন অনুযায়ী সমুদ্রস্রোতেরও গতিপথ পরিবর্তিত হয়। যেমন—ভারত মহাসাগরে গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি স্রোত এবং শীতকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি (বিপরীতমুখী) বায়ুর প্রভাবে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি স্রোত প্রবাহিত হয়।