কবি পরিচিতি
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১৯ শে জুলাই নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জন্মেছিলেন। তাঁর বাবার নাম কার্তিকেয় চন্দ্র রায় ও মায়ের নাম প্রসন্নময়ী দেবী। তিনি একাধিক নাটক রচনা করেছিলেন যেমন চন্দ্রগুপ্ত, সাজাহান, মেবার পতন। পাঠ্য নাট্যাংশটি তাঁর চন্দ্রগুপ্ত নাটকের প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্য থেকে নেওয়া হয়েছে।
গল্পের সারাংশ
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের চন্দ্রগুপ্ত নাট্যাংশটি পুরোপুরি ঐতিহাসিক। সুদূর ম্যাসিডন থেকে সমগ্র এশিয়াকে পদানত করার বাসনা নিয়ে গ্রিক সম্রাট এবং গ্রিক সেনাপতি দুজনে দিকবিজয় করতে বেড়িয়েছিলেন। নাটকের প্রথমেই সেকেন্দার ও সেলুকসের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষের বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। দিগবিজয়ে বেরিয়ে বিনা বাধায় অর্ধেক এশিয়া জয় করার পর সম্রাট প্রথম ভারতবর্ষে এসে রাজা পুরুর কাছে বাঁধা পান। তখন আলেকজান্ডার রাজা পুরুকে পরাজিত করে বন্দি করেন। সম্রাট তাঁর সাহস ও আত্মমর্যাদাবোধ দেখে মুগ্ধ হন এবং রাজা পুরুকে মুক্তি দিয়ে তাঁর রাজ্য ফিরিয়ে দেন। এরপর দেখা যায় চন্দ্রগুপ্তের বৈমাত্রেয় ভাই নন্দ সিংহাসন অধিকার করে তাঁকে বিতারিত করেছে। তিনি তাঁর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সেনাপতি সেলুকসের কাছে গ্রিক সম্রাটের ন্যায় অশ্ব চালনা, ব্যুহপ্রণালী রচনা ও সামরিক নিয়ম শিখছিলেন। তা একটি পত্রে লেখার সময় গুপ্তচর ভেবে সেনাপতি অ্যান্টিগোনসের হাতে ধরা পরেন। তাঁকে সেকেন্দারের কাছে আনা হলে তিনি তাঁর পরিচয় জানতে চাইলেন। তাঁর উত্তরে সম্রাট সেকেন্দার বীরত্বের পরিচয় পান এবং পরে তাঁকে মুক্তিও দেন। সবমিলিয়ে নাটকটিতে সুন্দর ঐতিহাসিক চরিত্রগুলিকে উপস্থাপন করেছেন লেখক।
হাতে কলমে
১.১ দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কৃষিবিদ্যা শেখার জন্য কোথায় গিয়েছিলেন?
উঃ- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কৃষিবিদ্যা শেখার জন্য বিলেত গিয়েছিলেন।
১.২ তাঁর রচিত দুটি নাটকের নাম লেখো।
উঃ- তাঁর রচিত দুটি নাটকের নাম হলো সাজাহান ও মেবার পতন।
২. নীচের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর একটি বাক্যে লেখোঃ
২.১ নাট্যাংশটির ঘটনাস্থল ও সময় নির্দেশ করো।
উঃ- নাট্যাংশটির ঘটনাস্থল হলো সিন্ধু নদতট এবং সময় সন্ধ্যাকাল।
২.২ নাট্যাংশে উল্লিখিত ‘হেলেন’ চরিত্রের পরিচয় দাও।
উঃ- ‘হেলেন’ হলেন গ্রিক সেনাপতি সেলুকসের কন্যা।
২.৩ ‘রাজার প্রতি রাজার আচরণ’। – উদ্ধৃতাংশের বক্তা কে?
উঃ- উদ্ধৃতাংশের বক্তা বীর ভারতীয় রাজা পুরু।
২.৪ ‘জগতে একটা কীর্তি রেখে যেতে চাই’। – বক্তা কীভাবে এই কীর্তি রেখে যেতে চান?
উঃ- বক্তা সম্রাট সেকেন্দার শৌখিন দিগবিজয় করে জগতে একটা কীর্তি রেখে যেতে চান।
২.৫ ‘সম্রাট, আমায় বধ না করে বন্দি করতে পারবেন না’। – বক্তাকে ‘বন্দি’ করার প্রসঙ্গ এসেছে কেন?
উঃ- বক্তাকে যেহেতু সম্রাটের কাছে গুপ্তচর বলে ধরে আনা হয়েছে এবং সম্রাট তাকে বন্দি করতে চেয়েছেন।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাওঃ
৩.১ ‘কী বিচিত্র এই দেশ!’ – বক্তার চোখে এই দেশের বৈচিত্র্য কীভাবে ধরা পড়েছে?
উঃ- আলোচ্য অংশে বক্তা গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার শাহ ভারতের অসাধারণ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি সেনাপতি সেলুকসের কাছে ভারতের সৌন্দর্য বর্ণনা করে বলেন যে, দিনে প্রচণ্ড সূর্যতাপে এখানে আকাশ দগ্ধ হয়ে যায় আর রাতে জ্যোৎস্নার আলো স্নিগ্ধ মায়াময় করে তোলে। বর্ষার ঘন কালো মেঘ গুরুগম্ভীর গর্জনে আকাশ ছেয়ে ফেলে। এই দেশে আকাশ ভেদ করা তুষার শুভ্র হিমালয় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কোথাও সর্বোপরি সাহসী, তেজস্বী, নির্ভীক এক জাতি যার নাম ‘ভারতবাসী’ তারাই দেশ শাসন করছে এই রকম পরাক্রমী জাতিকে পরাজিত করাও গৌরবের।
৩.২ ভাবলাম – এ একটা জাতি বটে!’ – বক্তা কে? তাঁর এমন ভাবনার কারণ কী?
উঃ- বক্তা হলেন সেকেন্দার অর্থাৎ আলেকজান্ডার।
তাঁর এমন ভাবনার কারণ রাজা পুরু যখন সেকেন্দার শাহের কাছে পরাজিত ও বন্দি হন, তখন গ্রিক সম্রাট পুরুরাজকে প্রশ্ন করেছিলেন যে, তাঁর কাছে পুরু কীরূপ আচরণ আশা করেন। পুরু তখন নির্ভয়ে জানিয়েছিলেন “রাজার প্রতি রাজার আচরণ”। এরূপ বন্দি অবস্থায় পুরুর বীরত্ব ও সাহস দেখে সম্রাট ভেবেছিলেন এটা একটা জাতি বটে।
৩.৩ ‘এ দিগবিজয় অসম্পূর্ণ রেখে যাচ্ছেন কেন সম্রাট?’ – এ প্রশ্নের উত্তরে সম্রাট কী জানালেন?
উঃ- আলোচ্য উক্তির উত্তরে সম্রাট সেকেন্দার জানালেন যে, তাঁর দিগবিজয় সম্পূর্ণ করার জন্য উপযুক্ত সৈন্যদল দরকার। কেননা তাঁর সৈন্যদল সুদূর ম্যাসিডন থেকে বিজয়ী হয়ে এসে এখানে প্রথম বাঁধা পেল। তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ায় তিনি বিজয় অসম্পূর্ন রেখে ফিরে যাচ্ছেন।
৩.৪ ‘ভারতবাসী মিথ্যা কথা বলতে এখনও শিখে নাই’। – বক্তা কে? কোন সত্য সে উচ্চারণ করেছে?
উঃ- আলোচ্য উক্তিটির বক্তা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য।
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য জানিয়েছিলেন যে তিনি গুপ্তচর নন। তিনি দীর্ঘদিন সেলুকসের কাছে অশ্ব চালনা, ব্যুহপ্রণালী রচনা, সামরিক নিয়ম শিখছিলেন। গ্রিক সৈন্য সেই স্থান ত্যাগ করে যাবে শুনে তিনি সেগুলি একটি পত্রে লিখে নিচ্ছিলেন। সেকেন্দার শাহের সঙ্গে যুদ্ধের ইচ্ছায় নয়, তিনি বৈমাত্রেয় ভাই নন্দের দ্বারা অন্যায়ভাবে রাজ্য থেকে নির্বাসিত। তাই তিনি তার প্রতিশোধ নিতে চান। এটাই তাঁর উচ্চারিত সত্য।
৩.৫ ‘আমার ইচ্ছা হলো যে দেখে আসি…’ – বক্তার মনে কোন ইচ্ছে জেগে উঠেছিল? তার পরিণতিই বা কী হয়েছিল?
উঃ- বক্তা অর্থাৎ চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের মনে ইচ্ছা জেগেছিল সেকেন্দার শাহকে দেখার, কারণ তিনি শুনেছিলেন ম্যাসিডনরাজ বীর ও পরাক্রমী। চন্দ্রগুপ্ত দেখতে চেয়েছিলেন যে কী সেই পরাক্রম যার বীরত্বে সমগ্র এশিয়া তাঁর পদতলে। আর্য জাতির বীরত্বও যার যুদ্ধে বিচলিত হয়েছে। সেই ইচ্ছা থেকেই তিনি তা দেখতে এসেছিলেন।
কিন্তু এই ইচ্ছা পূরন করতে এসে অ্যান্টিগোনসের হাতে চন্দ্রগুপ্ত ধরা পড়ে যান এবং পরে সম্রাটের ইচ্ছায় তিনি মুক্ত হন।
৪. নীচের উদ্ধৃত অংশগুলির প্রসঙ্গ ও তাৎপর্য আলোচনা করোঃ
৪.১ ‘এ শৌর্য পরাজয় করে আনন্দ আছে’।
উঃ- সম্রাট সেকেন্দার শাহ এক সন্ধ্যায় সিন্ধু নদের তীরে দাঁড়িয়ে ভারতবর্ষের অপরূপ সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে সেলুকসের উদ্দেশ্যে এই কথাটি বলেছিলেন।
উক্ত কথাটির মাধ্যমে সম্রাট বলতে চেয়েছেন যে, যে আনন্দ কোনো শক্তিশালী সাহসী জাতিকে যুদ্ধে পরাজিত করে পাওয়া যায়, সেই আনন্দ কোনো দুর্বল রাজ্যকে জয় করে পাওয়া যায় না।
৪.২ ‘সম্রাট মহানুভব’।
উঃ- উদ্ধৃত কথাটি গ্রিক সেনাপতি সেলুকস, সম্রাট সেকেন্দার শাহকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন।
দিগবিজয়ে বেরিয়ে বিনা বাধায় অর্ধেক এশিয়া জয় করার পর সম্রাট প্রথম ভারতবর্ষে এসে রাজা পুরুর কাছে বাঁধা পান। তখন আলেকজান্ডার রাজা পুরুকে পরাজিত করে বন্দি করেন। সম্রাট তাঁর সাহস ও আত্মমর্যাদাবোধ দেখে মুগ্ধ হন এবং রাজা পুরুকে মুক্তি দিয়ে তাঁর রাজ্য ফিরিয়ে দেন। এই ঘটনা জানতে পেরে সেনাপতি সেলুকস গ্রিক সম্রাট সেকেন্দারকে মহানুভব বলেছেন।
৪.৩ ‘বাধা পেলাম প্রথম – সেই শতদ্রুতীরে’।
উঃ- উদ্ধৃত কথাটি গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার শাহ দিগবিজয়ে বেরিয়ে প্রথম রাজা পুরুর কাছে বাধা পাওয়ায় সেনাপতি সেলকসকে বলেছেন।
সুদূর ম্যাসিডন থেকে তিনি প্রায় অর্ধেক এশিয়া জয় করে এসেছেন। কিন্তু তিনি ভারতবর্ষে এসে শতদ্রুর তীরে পুরু রজার কাছে প্রথম বাধা পান। রাজা পুরু অল্প সেনাবাহিনী নিয়ে প্রবল প্রতিরোধ তৈরি করেছিলেন যা সেকেন্দারকে মুগ্ধ করেছিল। তাই সম্রাট সেকেন্দার এই কথাটি বলেছেন।
৪.৪ ‘আমি তারই প্রতিশোধ নিতে বেরিয়েছি’।
উঃ- উক্ত কথাটি চন্দ্রগুপ্ত সম্রাট সেকেন্দারকে বলেছেন।
চন্দ্রগুপ্তের বৈমাত্রেয় ভাই নন্দ সিংহাসন অধিকার করে তাঁকে বিতারিত করেছে। তিনি তাঁর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সেনাপতি সেলকসের কাছে গ্রিক সম্রাটের ন্যায় অশ্ব চালনা, ব্যুহপ্রণালী রচনা ও সামরিক নিয়ম শিখছিলেন। তা একটি পত্রে লেখার সময় গুপ্তচর ভেবে সেনাপতি অ্যান্টিগোনসের হাতে ধরা পরেন। তাঁকে সেকেন্দারের কাছে আনা হলে তিনি তাঁর পরিচয় জানতে চাইলেন। চন্দ্রগুপ্ত তার পরিচয় দেওয়ার সময় উপরের কথাটি বলেছিলেন।
৪.৫ ‘যাও বীর ! মুক্ত তুমি’।
উঃ- উক্ত কথাটি গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার চন্দ্রগুপ্তকে বলেছিল।
চন্দ্রগুপ্ত নিজের রাজ্য ফিরে পেতে গোপনে গ্রিক সেনাপতি সেলুকসের কাছে সম্রাটের রণকৌশল শিখছিলেন। ঐ সময় তিনি গুপ্তচর সন্দেহে অ্যান্টিগোনসের কাছে ধরা পড়েন। সম্রাট তাঁকে বন্দি করার নির্দেশ দিলে চন্দ্রগুপ্ত তখনই তরবারি বার করে দৃঢ় কণ্ঠে বলে ওঠেন “আমাকে বধ না করে বন্দি করা যাবেনা”। তিনি চন্দ্রগুপ্তের এই সাহস ও বীরত্বকে সম্মান না করে পারলেন না। তাই সম্রাট সেকেন্দার শাহ চন্দ্রগুপ্তকে মুক্তি দেওয়ার সময় উপরের কথাগুলি বলেছিলেন।
৫. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখোঃ
৫.১ নাট্যাংশটি অবলম্বনে ঐতিহাসিক নাটকের পরিবেশ সৃষ্টিতে নাট্যকারের দক্ষতার পরিচয় দাও।
উঃ- দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখা “চন্দ্রগুপ্ত” একটি ঐতিহাসিক নাটক। ঐতিহাসিক নাটকের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো যে ইতিহাস কাহিনি অবলম্বনে নাটক রচিত হবে। চন্দ্রগুপ্ত নাটকে চন্দ্রগুপ্ত, গ্রিক সম্রাট আলেকজান্ডার, গ্রিক সেনাপতি সেলুকাস এই যে চরিত্রগুলি এসেছে সবই ইতিহাসিক চরিত্র এবং ঐতিহাসিক কাহিনিকে এই নাটকে কথোপকথনের ভঙ্গিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এই নাটকের মূল চরিত্র চন্দ্রগুপ্ত তাঁর বীরত্বময় কাহিনী নিপুনভাবে ফুটে উঠেছে। যে সব চরিত্র এই নাটকে পাই সবই ইতিহাসিক আবার একইসঙ্গে ইতিহাসের সত্যকেও লঙ্ঘন করেননি নাট্যকার। আলেকজান্ডারের এশিয়া আক্রমণ, রাজা পুরুর সাথে তাঁর দ্বন্দ্ব এবং পুরুকে মুক্ত করা এসবই ঐতিহাসিক সত্য ঘটনা। তাই ঐতিহাসিক নাটকের পরিবেশ সৃষ্টিতে তাঁর দক্ষতা অনস্বীকার্য।
৫.২ নাট্যাংশে ‘সেকেন্দার’ ও ‘সেলুকস’ -এর পরিচয় দাও। সেকেন্দারের সংলাপে ভারত-প্রকৃতির বৈচিত্র্যপূর্ণ রূপ কীভাবে ধরা দিয়েছে, তা বিশ্লেষণ করো।
উঃ- দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখা “চন্দ্রগুপ্ত” নাটকে ‘সেকেন্দার’ হলেন গ্রিক সম্রাট এবং ‘সেলুকস’ হলেন গ্রিক সেনাপতি।
সুদূর ম্যাসিডন থেকে সমগ্র এশিয়াকে পদানত করার বাসনা নিয়ে গ্রিক সম্রাট এবং গ্রিক সেনাপতি দুজনে দিকবিজয় করতে বেড়িয়েছিলেন। নাটকের প্রথমেই সেকেন্দার ও সেলুকসের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষের বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। ভারতবর্ষে দিনের বেলাতে সূর্যের তাপে আকাশ যেন পুড়ে যায় আর রাতে জ্যোৎস্নার আলোতে পৃথিবী মায়াময় হয়ে ওঠে। বর্ষাকালে যখন কালো মেঘ আকাশ ছেয়ে যায় তখন তিনি অবাক হয়ে কালো মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকে। উত্তরে হিমালয় যেন বরফের মুকুট পড়ে আছে এবং দক্ষিণে নীল জলরাশি সম্রাটের হৃদয়কে স্পর্শ করে যায়। ভারতবর্ষের একদিকে রয়েছে সুবিশাল মরুভূমি এবং অন্যদিকে বটগাছের ছায়াতে উত্তপ্ত পৃথিবী যেন শান্ত ও শীতল হয়। এভাবেই গ্রিক সম্রাট আলেকজান্ডার ভারতবর্ষের বৈচিত্র্যপূর্ণ রূপ ব্যাখ্যা করেছে।
৫.৩ ‘চমকিত হলাম’। – কার কথায় বক্তা চমকিত হয়েছিলেন? তাঁর চমকিত হওয়ার কারণ কী?
উঃ- দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখা ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশে গ্রিক সম্রাট আলেকজান্ডার রাজা পুরুর কথায় চমকিত হয়েছিলেন।
আলেকজান্ডার দিকবিজয়ের ইচ্ছা নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন এবং বহু রাজ্য জয় করলেও কোনো শক্তিমান রাজার সঙ্গে তাঁর যুদ্ধ হয়নি। এশিয়াতে এসে রাজা পুরুর সঙ্গে যুদ্ধে প্রথম বাধার সম্মুখীন হলেন। রাজা পুরুর বীরত্বে তিনি মুগ্ধ হলেন যদিও পুরুকে তিনি পরাজিত এবং বন্দি করেছিলেন। বন্দি পুরুকে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন যে, তিনি কীরূপ আচরণ প্রত্যাশা করেন। পুরু নির্ভীকতার পরিচয় দিয়ে বলেছিলেন যে তিনি রাজার কাছ থেকে রাজার মতনই আচরণ প্রত্যাশা করেন। পুরুর এই সাহসিকতা সম্রাটকে মুগ্ধ করেছিল তাই তিনি বলেছেন যে “চমকিত হলাম”।
৫.৪ ‘সম্রাট মহানুভব’। – বক্তা কে? সম্রাটের ‘মহানুভবতা’-র কীরূপ পরিচয় নাট্যাংশে পাওয়া যায়?
উঃ- দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখা ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশে উক্ত কথাটির বক্তা হলেন গ্রিক সেনাপতি সেলকাস।
আলেকজান্ডার এবং পুরুর সাথে যুদ্ধে পুরু পরাজিত ও বন্দি হয়েছিলেন। রাজা পুরুকে যখন বন্দি অবস্থায় আনা হয় ও জিজ্ঞেস করা হয় কীরকম আচরণ তিনি প্রত্যাশা করেন, তখন তিনি নির্ভয়ে বলেছিলেন যে রাজার কাছ থেকে রাজার মতনই আচরণ প্রত্যাশা করেন। তাঁর এই বীরত্ব বা সাহস দেখে আলেকজান্ডার মুগ্ধ হয়েছিলেন। তখন আলেকজান্ডার পুরুকে বন্দি না করে তাঁকে মুক্ত করেছিলেন। একজন বীর অপর এক বীরের প্রতি যে সম্মান প্রদর্শন করেছিলেন তাই দেখে গ্রিক সেনাপতি সেলুকাস প্রশ্নে উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছিলেন।
৫.৫ ইতিহাসের নানান অনুষঙ্গ কীভাবে নাট্যকলেবরে বিধৃত রয়েছে তা ঘটনাধারা বিশ্লেষণ করে আলোচনা করো।
উঃ- চন্দ্রগুপ্ত নাটকে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় এক ঐতিহাসিক ঘটনা বর্ণনা করেছেন। ভারত ও গ্রিসের ইতিহাসের বিভিন্ন প্রসঙ্গ এই নাটকে উপস্থাপন করেছেন তিনি। এখানে যে সমস্ত চরিত্র উল্লেখ করা হয়েছে যেমন আলেকজান্ডার, পুরু বা চন্দ্রগুপ্ত এসমস্ত চরিত্র ইতিহাস থেকে তুলে আনা হয়েছে। আবার যে পরিবেশ সম্পর্কে বর্ননা করেছেন সেটিও ঐতিহাসিক। আলেকজান্ডারের যে পুরুকে পরাজিত করে বন্দি করেন এবং পরে মুক্তও করে দেন এসবই ঐতিহাসিকভাবে বর্নিত হয়েছে। আবার চন্দ্রগুপ্তের রাজ্য থেকে বিতারিত হওয়া এবং সেই রাজ্য ফিরে পাওয়ার জন্য আলেকজান্ডারের কাছ থেকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়া সবই ইতিহাস থেকে নেওয়া হয়েছে। এইভাবেই ইতিহাস কাহিনি এই নাটককে সমৃদ্ধ করেছে।
৫.৬ ‘গুপ্তচর’। – কাকে ‘গুপ্তচর’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে? সে কি প্রকৃতই গুপ্তচর?
উঃ- এখানে চন্দ্রগুপ্তকে ‘গুপ্তচর’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
না, চন্দ্রগুপ্ত প্রকৃত অর্থে গুপ্তচর ছিলেন না। তিনি তাঁর পিতার রাজ্য উদ্ধার করার জন্য ছদ্মদেশ ধারণ করেছিলেন। তিনি প্রত্যক্ষভাবে গ্রিক সেনাপতি এবং গ্রিক সম্রাটের কাছ থেকে যুদ্ধ কৌশল না শিখে গোপনে তাদের কাছ থেকে শিখছিলেন। তিনি জানতেন যে, আলেকজান্ডার বিখ্যাত বীর, তাঁর বীরত্বে সমগ্র এশিয়া তাঁর পদানত হয়েছে। এরকম একজন বীরের কাছ থেকে যুদ্ধ বিদ্যা শেখা স্বপ্ন ছিল, তিনি ভেবেছিলেন যে আলেকজান্ডার এবং তাঁর সৈন্যদের কাছ থেকে যুদ্ধকৌশল শিখে তাঁর পিতার রাজ্যকে উদ্ধার করবেন।
৫.৭ ‘সেকেন্দার একবার সেলুকসের প্রতি চাহিলেন…’ – তাঁর এই ক্ষণেক দৃষ্টিপাতের কারণ কী?
উঃ- চন্দ্রগুপ্ত নাটকে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। শতদ্রু নদীর তীরে সন্ধ্যেবেলায় গ্রিক সেনাপতি এবং গ্রিক সম্রাট যখন নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন ভারতবর্ষের অপরূপ বৈচিত্র্য নিয়ে সেই সময় অ্যান্টিগোনস চন্দ্রগুপ্তকে গুপ্তচর সন্দেহে ধরে নিয়ে আসেন। এরপর চন্দ্রগুপ্ত নিজের পরিচয় দেন এবং বলেন তিনি গুপ্তচর নন, তিনি ছদ্মবেশ ধারণ করে গোপনে যুদ্ধের কৌশল শিখতে চেয়েছিলেন তাঁর পিতার রাজ্য উদ্ধার করার জন্য। চন্দ্রগুপ্তের এই আত্মবিশ্বাস ও সাহসিকতা দেখে গ্রিক সম্রাট মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তখন তিনি সেনাপতি সেলুকসের দিকে একবার তাকালেন, তিনি যেন বোঝাতে চাইলেন যে ভারতীয় রাজাদের বীরত্বের পরিচয় তিনি আগেও পেয়েছেন এবং চন্দ্রগুপ্ত ও তেমনই বীর।
৫.৮ চন্দ্রগুপ্ত সেলুকসের কীরূপ সম্বন্ধের পরিচয় নাট্যাংশে মেলে?
উঃ- চন্দ্রগুপ্ত নাটকে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় চন্দ্রগুপ্ত এবং সেলুকস নামে দুই ঐতিহাসিক চরিত্রের উপস্থাপন করেছেন। চন্দ্রগুপ্ত ছিলেন মগধের রাজকুমার, তাঁর বৈমাত্রেয় ভাই নন্দ তাঁকে রাজ্য থেকে বিতাড়িত করেছিলেন। তখন তিনি সেলুকসের কাছে যুদ্ধবিদ্যা শিখেছিলেন। চন্দ্রগুপ্ত বীর বলেই সেলুকস তাঁকে শিক্ষা দিতে সম্মত হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে যুদ্ধ প্রণালী নিয়ে অনেক আলোচনা হত। সেই অর্থে দেখতে গেলে সেলুকস চন্দ্রগুপ্তের গুরুস্থানীয় ছিলেন। চন্দ্রগুপ্তকে সাহায্য করার মধ্য দিয়ে সেলুকসের উদার ও সৎ মনের পরিচয় পাওয়া যায়। আবার অ্যান্টিগোনস যখন সেলুকসকে হত্যা করতে উদ্যত হয় তখন চন্দ্রগুপ্ত তাঁর প্রাণ রক্ষা করেছিলেন এবং এইভাবেই তিনি তাঁর গুরুদক্ষিণা প্রদান করেছিলেন।
৫.৯ ‘তা এই পত্রে লিখে নিচ্ছিলাম’। – কার উক্তি? সে কী লিখে নিচ্ছিল? তাঁর এই লিখে নেওয়ার উদ্দেশ্য কী?
উঃ- উদ্ধৃত উক্তিটি চন্দ্রগুপ্তের।
চন্দ্রগুপ্ত গ্রিক সেনাপতি সেলুকসের কাছে যুদ্ধের কৌশল, যুদ্ধপ্রণালী শিখেছিলেন, সেগুলোই তিনি শুকনো তালপাতায় লিখে নিচ্ছিলেন।
চন্দ্রগুপ্তের বৈমাত্রেয় ভাই নন্দ তাঁকে তাঁর পিতার রাজ্য থেকে বিতাড়িত করেছিলেন এবং রাজ সিংহাসন দখল করে নিয়েছিলেন। চন্দ্রগুপ্ত চেয়েছিলেন তাঁর পিতার রাজ্য পুনরুদ্ধার করতে তাই তিনি গ্রিক সেনাপতি সেলুকসের কাছ থেকে রণকৌশল শিখেছিলেন এবং তা লিখে রাখছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল এই কৌশল প্রয়োগ করে পরবর্তীকালে তিনি নন্দের সাথে যুদ্ধ করবেন এবং নন্দকে পরাজিত করে পিতৃরাজ্যকে উদ্ধার করবেন।
৫.১০ অ্যান্টিগোনস নাটকের এই দৃশ্যে সেলুকসকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলেছে। তোমার কি সেলুকসকে সত্যিই ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে মনে হয়? যুক্তিসহ আলোচনা করো।
উঃ- নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় চন্দ্রগুপ্ত নাটকটিকে এক ঐতিহাসিক পরিবেশের প্রেক্ষাপটে রচনা করেছেন। এখানে সেলুকসকে বিশ্বাসঘাতক বলেছেন অ্যান্টিগোনস, যদিও আমি সেলুকসকে বিশ্বাসঘাতক মানতে রাজি নই। সামরিক নিয়ম অনুযায়ী যুদ্ধের কৌশল অন্য কাউকে শেখানো ঠিক নয় কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁকে বিশ্বাসঘাতক বলতে পারিনা। চন্দ্রগুপ্তের কথা শুনে ভালো লেগেছিল বলেই সেলুকস তাঁকে যুদ্ধকৌশল শেখাতে উদ্যত হয়েছিল। চন্দ্রগুপ্ত যে ভালো মানুষ সেলুকস তা যথার্থভাবেই উপলব্ধি করেছিল। তিনি একজন উদার মনের মানুষ। তাই জন্যই তিনি একজন রাজাকে সাহায্য করেছিলেন তাঁর রাজ্য ফিরে পাওয়ার জন্য। তাই তিনি কখনই বিশ্বাসঘাতক ছিলেন না।
৫.১১ ‘নিরস্ত হও’। – কে এই নির্দেশ দিয়েছেন? কোন পরিস্থিতিতে তিনি এমন নির্দেশ দানে বাধ্য হলেন?
উঃ- দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখা চন্দ্রগুপ্ত নাটকে গ্রিক সম্রাট আলেকজান্ডার গ্রিক সেনাধ্যক্ষ অ্যান্টিগোনসকে নিরস্ত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
অ্যান্টিগোনস চন্দ্রগুপ্তকে গুপ্তচর সন্দেহে ধরে নিয়ে এসেছিলেন এবং সেকেন্দারের কাছে উপস্থিত করেছিলেন। চন্দ্রগুপ্ত জানান যে তিনি গুপ্তচর নন এবং তাঁর ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য নেই। তিনি পিতৃরাজ্যকে উদ্ধার করতে সেনাপতি সেলুকসের কাছে যুদ্ধবিদ্যা শিক্ষা করছিলেন। একথা শোনার পরে অ্যান্টিগোনস সেলুকসকে বিশ্বাসঘাতক বলে মন্তব্য করেছিলেন এবং তরবারি বার করে সেলুকসকে লক্ষ্য করে তা নিক্ষেপ করেছিলেন। চন্দ্রগুপ্ত তা বাধা দেন, তখন অ্যান্টিগোনস সেলুকসকে বাদ দিয়ে চন্দ্রগুপ্তকে আক্রমণ করে বসেন। এমনই একটা ঘটনার সময় গ্রিক সম্রাট আলেকজান্ডার তাঁকে নিরস্ত হওয়ার আদেশ প্রদান করেছিলেন।
৫.১২ ‘অ্যান্টিগোনস লজ্জায় শির অবনত করিলেন’। – তাঁর এহেন লজ্জিত হওয়ার কারণ কী?
উঃ- অ্যান্টিগোনস ছিলেন একজন সাধারণ সেনাধ্যক্ষ। গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার তাঁর সামনে গ্রিক সেনাপতি সেলুকসকে তিনি বিশ্বাসঘাতক বলেছেন এবং তরবারি নিক্ষেপ করে আক্রমনের চেষ্টা করেছেন। সম্রাটের অনুমতি না নিয়ে তিনি চন্দ্রগুপ্তকেও আক্রমণ করেছিলেন। একজন সামান্য সেনাধ্যক্ষ হয়ে তাঁর এই যে দুঃসাহস সেটি যথার্থ ছিল না। একজন সেনাধ্যক্ষের যে আচরণ করা উচিৎ ছিল তিনি তা করেননি তাই সম্রাট তাঁকে আদেশ করেছিলেন নিরস্ত হওয়ার জন্য। প্রথমবার তিনি সম্রাটের আদেশ না শুনে দ্বিতীয়বার চন্দ্রগুপ্তকে আক্রমণ করেছেন এরপর সম্রাট যখন আদেশ দিলেন শান্ত হওয়ার জন্য তখন তিনি তাঁর এই আচরণের জন্য লজ্জিত হয়েছিলেন।
৫.১৩ নাট্যাংশ অবলম্বনে গ্রিক সম্রাট সেকেন্দারের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের পরিচয় দাও।
উঃ- চন্দ্রগুপ্ত নাটকে গ্রিক সম্রাট সেকেন্দারের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পেয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে প্রকৃতি মুগ্ধতা, ভারতের বৈচিত্র্যপূর্ন রূপ দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি বীর বলেই সমগ্র এশিয়াকে পদানত করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি দিকবিজয়ে বের হয়েছিলেন আবার একই সঙ্গে তিনি বিচক্ষন রাজাও ছিলেন। তিনি রাজা পুরুর চরিত্রে বীরের পরিচয় পেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন, কেননা সম্রাট সেকেন্দার নিজেও একজন বীর ছিলেন। তাই বীরের প্রতি যোগ্য সম্মান রেখে তিনি পুরুকে শাস্তি প্রদান করেননি, তাঁকে মুক্তি দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে চন্দ্রগুপ্তের সাথে তাঁর যে কথোপকথন হয়েছিল তাতে সেকেন্দার বীরত্বের পরিচয় পেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং বীর চন্দ্রগুপ্তকেও তিনি মুক্তি দিয়েছিলেন। সেনাধ্যক্ষ অ্যান্টিগোনস এবং সেলুকসের মধ্যে যে জটিল সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল তা সম্রাট সেকেন্দার সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন। এইভাবেই তাঁর দূরদর্শিতার পরিচয় এখানে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন নাট্যকার।
৫.১৪ চন্দ্রগুপ্তের প্রতি সেকেন্দারের কীরূপ মনোভাবের পরিচয় নাট্যদৃশ্যে ফুটে উঠেছে, তা উভয়ের সংলাপের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
উঃ- দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখা চন্দ্রগুপ্ত নামক ঐতিহাসিক নাট্যাংশে আমরা দেখতে পাই যে গ্রিক সেনাধ্যক্ষ অ্যান্টিগোনস চন্দ্রগুপ্তকে গুপ্তচর সন্দেহে ধরেছেন এবং সেকেন্দার ও সেনাপতি সেলুকসের কাছে এনেছেন। সেকেন্দার কখনই মনে করেননি যে অ্যান্টিগোনস যথার্থ কাজ করেছেন তাই তিনি চন্দ্রগুপ্তকে শাস্তি দেননি। তিনি প্রথমে তাঁর পরিচয় জানতে চেয়েছিলেন, চন্দ্রগুপ্ত জানিয়েছিলেন তিনি মগধের রাজপুত্র, কোনো গুপ্তচর নন, তিনি তাঁর শত্রু নন্দকে পরাজিত করে তাঁর পিতৃরাজ্যকে উদ্ধার করতে এসেছিলেন, তাই তিনি সেলুকসের কাছে অস্ত্র শিক্ষা করেছিলেন। চন্দ্রগুপ্তকে শাস্তি প্রদান করার কথা উঠলে চন্দ্রগুপ্ত জানিয়েছিলেন যে তাঁকে হত্যা না করে বন্দি করতে পারবে না, এই ঘটনায় সেকেন্দার সাহ তাঁর যে বীরত্ব বা সাহস দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। এরপর তিনি চন্দ্রগুপ্তকে মুক্তি দেন এবং তিনি যথার্থই বুঝতে পেরেছিলেন চন্দ্রগুপ্ত একদিন সারা ভারতবর্ষের বিখ্যাত রাজা হয়ে উঠবেন। এখানে নাট্যঘটনায় চন্দ্রগুপ্তের প্রতি সেকেন্দারের এক ভালোবাসাপূর্ন নমনীয় মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।
৬. নীচের বাক্যগুলির থেকে সন্ধিবদ্ধ পদ খুঁজে নিয়ে সন্ধিবিচ্ছেদ করোঃ
৬.১ আমি নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে দেখি।
উঃ- নির্বাক = নিঃ + বাক।
৬.২ বিশাল নদ-নদী ফেনিল উচ্ছ্বাসে উদ্দাম বেগে ছুটেছে।
উঃ- উচ্ছ্বাস = উৎ + শ্বাস, উদ্দাম = উৎ + দাম।
৬.৩ সে নির্ভীক নিষ্কম্পস্বরে উত্তর দিলো, ‘রাজার প্রতি রাজার আচরণ’।
উঃ- নির্ভীক = নিঃ + ভীক, নিষ্কম্প = নিঃ + কম্প।
৬.৪ আমি এসেছি শৌখিন দিগবিজয়ে।
উঃ- দিগবিজয়ে = দিক + বিজয়ে।
৬.৫ তুমি হৃতরাজ্য উদ্ধার করবে।
উঃ- উদ্ধার = উৎ + হার।
৭. ব্যাসবাক্য সমাসের নাম লেখোঃ
দৈত্যসৈন্য = যিনি দৈত্য তিনি সৈন্য (সাধারণ কর্মধারয় সমাস)
নদনদী = নদ ও নদী (দ্বন্দ্ব সমাস)
স্নেহছায়া = স্নেহের ছায়া (সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস)
অসম্পূর্ন = নয় সম্পূর্ন (নঞ্তৎপুরুষ সমাস)
বিজয়বার্তা = বিজয়ের বার্তা (সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস)
অভ্রভেদী = অভ্রভেদ করে যা (উপপদ তৎপুরুষ সমাস)
৮. ক্রিয়ার কাল নির্দেশ করোঃ
৮.১ হেলেন সেলুকসের হস্ত ধরিয়া তাঁহার পার্শ্বে দণ্ডায়মান।
উঃ- সাধারণ বর্তমান কাল।
৮.২ এই মরুভূমি স্বেচ্ছাচারের মতো তপ্ত বালুরাশি নিয়ে খেলা করছে।
উঃ- ঘটমান বর্তমান কাল।
৮.৩ চমকিত হলাম।
উঃ- পুরাঘটিত অতীত কাল।
৮.৪ আমার শিবিরে তুমি গুপ্তচর হয়ে প্রবেশ করেছ।
উঃ- পুরাঘটিত বর্তমান কাল।
৮.৫ নির্ভয়ে তুমি তমার রাজ্যে ফিরে যাও।
উঃ- বর্তমান অনুজ্ঞা।
৯. নিম্নরেখাঙ্কিত শব্দগুলির কারক-বিভক্তি নির্দেশ করোঃ
৯.১ কী বিচিত্র এই দেশ!
উঃ- কর্তৃকারকে শূন্য বিভক্তি।
৯.২ আমি বিস্মিত আতঙ্কে চেয়ে থাকি।
উঃ- করণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি।
৯.৩ মদমত্ত মাতঙ্গ জঙ্গমপর্বতসম মন্থর গতিতে চলেছে।
উঃ- কর্তৃকারকে শূন্য বিভক্তি।
৯.৪ বাধা পেলাম প্রথম সেই শতদ্রুতীরে।
উঃ- অধিকরণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি।
৯.৫ আমি যা শিখেছি তা এই পত্রে লিখে নিচ্ছিলাম।
উঃ- অধিকরণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি।
১০. নীচের শব্দগুলির দল বিশ্লেষণ করোঃ
স্থিরভাবে = স্থির – ভা – বে (তিনটি দল, স্থির = রুদ্ধদল, ভা = মুক্তদল, বে = মুক্তদল)
নিষ্কম্পস্বরে = নিষ – কম – পো – স্ব – রে (পাঁচটি দল, নিষ = রুদ্ধদল, কম = রুদ্ধদল, প = মুক্তদল, স্ব = মুক্তদল, রে = মুক্তদল)
বিজয়বাহিনী = বি – জয় – বা – হি – নী (পাঁচটি দল, বি = মুক্তদল, জয় = রুদ্ধদল, বা = মুক্তদল, হি = মুক্তদল, নী = মুক্তদল)
চন্দ্রগুপ্ত = চন – দ্রো – গুপ – তো (চারটি দল, চন = রুদ্ধদল, দ্রো = মুক্তদল, গুপ = রুদ্ধদল, তো = মুক্তদল)
আর্যকুলরবি = আর – যো – কু – ল – রো – বি (ছয়টি দল, আর = রুদ্ধদল, যো = মুক্তদল, কু = মুক্তদল, ল = মুক্তদল, র = মুক্তদল, বি = মুক্তদল)
১১. নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করোঃ
১১.১ নদতটে শিবির-সম্মুখে সেকেন্দার ও সেলুকস অস্তগামী সূর্যের দিকে চাহিয়া ছিলেন। (দুটি বাক্যে ভেঙে লেখো)
উঃ- নদতটে শিবির-সম্মুখে সেকেন্দার ও সেলুকস ছিলেন। তাঁরা অস্তগামী সূর্যের দিকে চাহিয়া ছিলেন।
১১.২ ‘আমার কাছে কীরূপ আচরণ প্রত্যাশা করো?’ (পরোক্ষ উক্তিতে)
উঃ- বক্তা শ্রোতাকে জিজ্ঞাসা করিলেন যে, তিনি তাঁর কাছে কীরূপ আচরণ প্রত্যাশা করেন।
১১.৩ জগতে একটা কীর্তি রেখে যেতে চাই। (না-সূচক বাক্যে)
উঃ- জগতে একটা কীর্তি না রেখে যেতে চাই না।
১১.৪ আমি যা শিখেছি তা এই পত্রে লিখে নিচ্ছিলাম। (সরল বাক্যে)
উঃ- আমার শেখা বিষয়গুলি এই পত্রে লিখে নিচ্ছিলাম।
১১.৫ তোমার অপরাধ তত নয়। (হ্যাঁ-সূচক বাক্যে)
উঃ- তোমার অপরাধ বেশ কম।
১১.৬ এক গৃহহীন নিরাশ্রয় হিন্দু রাজপুত্র ছাত্র হিসাবে তাঁর কাছে উপস্থিত, তাতেই তিনি ত্রস্ত। (নিম্নরেখ শব্দের বিশেষ্যরূপ ব্যবহার করে বাক্যটি লেখো)
উঃ- এক গৃহহীন নিরাশ্রয় হিন্দু রাজপুত্রের ছাত্রের উপস্থিতিতেই তিনি ত্রস্ত।
১১.৭ ‘কী বিচিত্র এই দেশ”! (নির্দেশক বাক্যে)
উঃ- বড়োই বিচিত্র এই দেশ।
১১.৮ ‘সত্য সম্রাট’। (না-সূচক বাক্যে)
উঃ- মিথ্যা নয় সম্রাট।
১১.৯ এ দিগবিজয় অসম্পূর্ণ রেখে যাচ্ছেন কেন সম্রাট? (পরোক্ষ উক্তিতে)
উঃ- বক্তা সম্রাটের কাছে এ দিগবিজয় অসম্পূর্ণ রেখে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলেন।
১১.১০ ‘ভারতবাসী মিথ্যা কথা বলতে এখনও শিখে নাই’। (হ্যাঁ-সূচক বাক্যে)
উঃ- ভারতবাসী এখনও সত্য কথা বলে।
১১.১১ আমি এরূপ বুঝি নাই (হ্যাঁ-সূচক বাক্যে)
উঃ- আমি অন্যরূপ বুঝিয়াছি।
১১.১২ ‘সেকেন্দার সাহা এত কাপুরুষ তাহা ভাবি নাই’। (নিম্নরেখাঙ্কিত শব্দের বিশেষ্যের রূপ ব্যবহার করো)
উঃ- সেকেন্দার সাহার কাপুরুষতার পরিচয় পাব, তা ভাবি নাই।
১১.১৩ সম্রাট আমায় বধ না করে বন্দি করতে পারবেন না। (যৌগিক বাক্যে)
উঃ- সম্রাট আমায় বধ করুন না হলে বন্দি করতে পারবেন না।
১১.১৪ আমি পরীক্ষা করছিলাম মাত্র। (জটিল বাক্যে)
উঃ- আমি যা করছিলাম তা শুধুমাত্রই পরীক্ষা।
১১.১৫ ‘নির্ভয়ে তুমি তোমার রাজ্যে ফিরে যাও’। (না-সূচক বাক্যে)
উঃ- ভয় না করে তুমি তোমার রাজ্যে ফিরে যাও।
অতিরিক্ত প্রশ্ন-উত্তর
১. সিন্ধু নদের তটে কারা দাঁড়িয়ে ছিলেন?
উঃ- সিন্ধু নদের তটে সেকেন্দার শাহ, সেলুকস ও হেলেন দাঁড়িয়ে ছিলেন।
২. অ্যান্টিগোনস কে ছিলেন?
উঃ- অ্যান্টিগোনস ছিলেন একজন গ্রিক সেনাধ্যক্ষ।
৩. অ্যান্টিগোনস কার কাছে পরাস্ত হয়েছিলেন?
উঃ- অ্যান্টিগোনস চন্দ্রগুপ্তের কাছে পরাস্ত হন।
৪. সেলুকস কে ছিলেন?
উঃ- সেলুকস ছিলেন একজন গ্রিক সেনাপতি।
৫. সেলুকস সেকেন্দারকে কে কী প্রশ্ন করেছিলেন?
উঃ- সেলুকস সেকেন্দারকে প্রশ্ন করেছিলেন যে কেন তিনি দিকবিজয় অসম্পূর্ণ রেখে যাচ্ছেন।
৬. অ্যান্টিগোনস কী দেখে চন্দ্রগুপ্তকে ধরে এনেছিল?
উঃ- অ্যান্টিগোনস চন্দ্রগুপ্তকে নির্জনে শুষ্ক তালপত্রে কিছু লিখতে দেখেছিল, তাতে সে ভেবেছিল চন্দ্রগুপ্ত গুপ্তচর। তাই অ্যান্টিগোনস চন্দ্রগুপ্তকে ধরে এনেছিল।
৭. হেলেন কে?
উঃ- হেলেন হলেন সেলুকসের মেয়ে।
৮. হেলেন কার হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন?
উঃ- হেলেন সেলুকসের হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
৯. সেকেন্দার প্রথম কোথায়, কার কাছে বাধা পেয়েছিলেন?
উঃ- সেকেন্দার ভারতে এসে শতদ্রু নদীর তীরে রাজা পুরুর কাছে প্রথম বাধা পেয়েছিলেন।