কবি পরিচিতি
১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি মাসে বাংলা দেশের যশোরের সাগরদাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত | তার বাবা ছিলেন রাজনারায়ণ দত্ত এবং তার মা ছিলেন জাহ্নবী দেবী | ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দে মধুসূদন দত্ত কলকাতা হিন্দু কলেজ এর জুনিয়র বিভাগের স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন | মধুসূদন ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা ওল্ড মিশন গির্জাতে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন | ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে নভেম্বর তিনি বিসপস কলেজে ভর্তি হয়ে গ্রিক,লাতিন ও সংস্কৃত শিক্ষা গ্রহণ করে ছিলেন | এরপর তিনি কলেজ ত্যাগ করে চলে যান মাদ্রাজে | সেখানে একটি স্কুলে ইংরেজির শিক্ষক হিসেব যোগ দিয়েছিলেন | বিবাহ করেছিলেন তিনি মেরি রেবেকা মেকতেভাসকে |
এই সময় তিনি ইংরেজি পত্রপত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেছিলেন | মাদ্রাজ ক্রনিকল পত্রিকাতে তার লেখা প্রকাশিত হতে থাকে | তিনি হিন্দু ক্রনিকল নামে একটি পত্রিকার সম্পাদনাও করে ছিলেন | কিন্তু অর্থাভাবে তা কিছু দিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল | তার নাট্যকার হিসেবেই প্রথম বাংলা সাহিত্যের জগৎতে আগমন ঘটেছিল | তার লেখা উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নাটক হলো – শর্মিষ্ঠা নাটক, পদ্মাবতী ও একেই কি বলে সভ্যতা ইত্যাদি | এছাড়া ও তিনি বেশ কিছু কাব্য রচনা করেছিলেন,তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল – মেঘনাদবদ কাব্য , কৃষ্ণকুমারী, ব্রজাঙ্গনা বীরঙ্গনা , ইত্যাদি | এই বাঙালি কবির জীবন বাসন ঘটে ২৯ জুন ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ৪৯ বছর বয়সে |
সারসংক্ষেপ
পাঠ্যাংশের সূচনায় দেখা যায় রাবণ বীরবাহুর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে স্তব্ধ | কিন্তু মেঘনাদ তার সম্পর্কে অবগত নন | ইন্দিরা অর্থাৎ দেবী লক্ষী মেঘনাদের মায়ের রূপ ধারণ করে তার কাছে ছুটে গেলেন | তাকে দেখে মেঘনাদ তৎক্ষণাৎ তার কনক আসন ছেড়ে উঠে এসে জগধাত্রী মাতার চরণে প্রণাম করেন এবং লঙ্কার কুশল সম্পর্কে জানতে চান | তার মা এর ছদ্মবেশ এ দেবী লক্ষী তাকে জানান যে যুদ্ধে তার প্রিয় ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে | এছাড়াও সমগ্র লঙ্কাপুরীর শত্রু সৈন্যদল দ্বারা পরিবেষ্টিত আছে | কিন্তু তাও মেঘনাদ সেখানে যুদ্ধে না গিয়ে এই প্রমোদ উদ্যানে আমোদ-প্রমোদে মত্ত | মেঘনাদ দেশের এই বিপদের কথা শুনে হতবাক হয়ে যায় এবং নিজেকে আমোদ-প্রমোদের মেতে থাকার জন্য প্রবল ধিক্কার জানান | এবং যথাসময়ে তিনি যুদ্ধে সংকল্প গ্রহণ করলেন | মেঘনাদ যুদ্ধে যাওয়ার সংকল্প নিয়েছেন, এ কথা জানার পর তার স্ত্রী প্রমিলা ব্যাকুল হয়ে তার পথ রোধ করে দাঁড়ায় | তখন তিনি তাঁর স্ত্রীকে রামচন্দ্রকে যুদ্ধে বধ করে শীঘ্র ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাবণের সম্মুখে উপস্থিত হন যুদ্ধের অনুমতি চাইতে | কিন্তু রাবণ মেঘনাদ কে যুদ্ধে পাঠাতে রাজি নন, তার ভাগ্য বিপর্যয়ের কথা চিন্তা করে | কিন্তু মেঘনাদ তার কথায় অনড় থাকে | যেহেতু রামের সঙ্গে যুদ্ধ অনেক বীরই পরাজিত ও নিহত হয়েছেন তাই রাবণ মেঘনাদ কে অনুরোধ করেন ইস্ট দেবের পূজা ও নিকুম্ভিলা সম্পন্ন করে তবে যুদ্ধে যেতে | এরপর গঙ্গা জল দিয়ে তিনি সেনা পতির পদে ইন্দ্রজিতের অভিষেক সম্পন্ন করে |
বহু বিকল্প প্রশ্নোত্তর
1.1) ‘অভিষেক’ শীর্ষক কাব্যাংশটি মেঘনাদবধ কাব্যের কোন সর্গ থেকে গৃহীত ?
(ক) বধ
(খ) অভিষেক
(গ) প্রেতপুরী
(ঘ) সমাগম
উত্তর – (খ) অভিষেক
1.2) মেঘনাদবধ কাব্যের প্রকাশ কাল –
(ক) 1842 খ্রিষ্টাব্দ
(খ) 1847 খ্রিষ্টাব্দ
(গ) 1856 খ্রিষ্টাব্দ
(ঘ) 1861 খ্রিষ্টাব্দ
উত্তর – (ঘ) 1861 খ্রিষ্টাব্দ
1.3) মেঘনাদবধ কাব্যের সর্গ সংখ্যা কয়টি ?
(ক) পাঁচটি
(খ) আটটি
(গ) নয়টি
(ঘ) সাতটি
উত্তর – (গ) নয়টি
1.4) “ কনক-আসন তেজী,বীরেন্দ্রকেশরী… “ – ‘বীরেন্দ্রকেশরী’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ?
(ক) বিভীষণ
(খ) অভিষেক
(গ) কুম্ভকর্ণ
(ঘ) ইন্দ্রজিৎ
উত্তর – (ঘ) ইন্দ্রজিৎ
1.5) “ কি হেতু,মাত,গতি তব আজি / এ ভবনে ? “ – ইন্দ্রজিৎ একথা কাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন ?
(ক) প্রমিলাকে
(খ) প্রভাষাবেশী লক্ষ্মীকে
(গ) চিত্রাঙ্গদাকে
(ঘ) সীতাদেবী কে
উত্তর – ( খ) প্রভাষাবেশী লক্ষ্মীকে
1.6) “ কহ দাসে | “ – ইন্দ্রজিৎ কি জানতে চেয়েছিলেন ?
(ক) লঙ্কাপুরীর কুশলবার্তা
(খ) ঘোরতর যুদ্ধে বীরবাহু প্রায়ত হয়েছেন কিনা ?
(গ) বিভীষণের অবস্থা
(ঘ) রাবণ রাজার মৃত্যু হয়েছে কিনা
উত্তর – (ক) লঙ্কাপুরীর কুশলবার্তা
1.7) “ ছদ্দবেশী অম্বুরাশি – সুতা / উত্তরিলা ; “ – ‘অম্বু রাশি- সুতা’ কার সম্পর্কে বলা হয়েছে ?
(ক) চিত্রাঙ্গদা
(খ) লক্ষী
(গ) মায়াদেবী
(ঘ) সীতা
উত্তর – (খ) লক্ষী
1.8) “ ঘোরতর রণে, / হত প্রিয় ভাই তব…“ – এই ‘প্রিয় ভাই’ কে ? –
(ক) লক্ষণ
(খ) রাবণ
(গ) বীরবাহু
(ঘ) ইন্দ্রজিৎ
উত্তর – (গ) বীরবাহু
1.9) “ তার শোকে মহাশকি রাক্ষসাধিপতি “ – রাক্ষসাধিপতি রাবণ কার শোকে কাতর ছিলেন ?
(ক) বীরবাহু
(খ) লক্ষী
(গ) মন্দোদরী
(ঘ) লক্ষণ
উত্তর – (ক) বীরবাহু
1.10) “ জিজ্ঞাসিলা মহাবাহু বিস্ময় মানিয়া; “ – এই ‘মহাবাহু’ কে ?
(ক) ইন্দ্রজিৎ
(খ) রাবন
(গ) বীরবাহু
(ঘ) দেবরাজ
উত্তর – (ক) ইন্দ্রজিৎ
1.11) “ কি কহিলা,ভগবতি? “ – ভগবতি কি বলেছেন ?
(ক) ঘোরতর যুদ্ধে কুম্ভকর্ণের মৃত্যু ঘটেছে
(খ) ঘোরতর যুদ্ধে বীরবাহুর মৃত্যু ঘটেছে
(গ) ঘোরতর যুদ্ধে রাবণের মৃত্যু ঘটেছে
(ঘ) সবকটি
উত্তর – (খ) ঘোরতর যুদ্ধে বীরবাহুর মৃত্যু ঘটেছে
1.12) “ হায় ! পুত্র,…./ সীতাপতি ; তব শরে মরিয়া বাঁচিলো | “ – ‘সীতাপতি’ সম্পর্কে কি বিশেষন প্রয়োগ করা হয়েছে ?
(ক) রঘুকুলমনি
(খ) বীরবর
(গ) মহাবলী
(ঘ) মায়াবী মানব
উত্তর – (ঘ) মায়াবী মানব
1.13) “…ইন্দিরা সুন্দরী/ উত্তরিলা; “ – ইন্দিরা সম্পর্কে যে বিশেষণ টি ব্যবহৃত হয়েছে –
(ক) মিতভাষী হেমবতি
(খ) রত্নকর হেমলতা
(গ) রত্নাকর প্রিয়তমা
(ঘ) রত্নাকর রত্ন-উত্তমা
উত্তর – (ঘ) রত্নাকর রত্ন-উত্তমা
1.14) “…তব শরে মরিয়া বাঁচিলো ! “ – কে মরে গিয়ে বেঁচে উঠেছিলেন ?
(ক) রাবণ
(খ) বিভীষণ
(গ) রামচন্দ্র
(ঘ) কুম্ভকর্ণ
উত্তর – (গ) রামচন্দ্র
1.15) “ যাও তুমি ত্বরা করি ; “ – এখানে কোথায় যাওয়ার কথা বলা হয়েছে ?
(ক) পবনপথে
(খ) গহন কাননে
(গ) প্রমিলা আকাশে
(ঘ) কালসমরে
উত্তর – (ঘ) কালসমরে
1.16) “ রত্নাকর রত্নোওমা ইন্দিরা সুন্দরী / উত্তরিলা; ” – তিনি কি বলেছিলেন?
(ক) প্রকৃতই বীরবাহুর মৃত্যু হয়েছে
(খ) কনক লঙ্কা আজ শ্মশানে পরিণত হয়েছে
(গ) সীতাপতি রামচন্দ্র মায়াবী মানব, ইন্দ্রজিতের তীরে তার মৃত্যু হলেও তিনি পুনর্জীবন লাভ করেছেন
(ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর – (গ) সীতাপতি রামচন্দ্র মায়াবী মানব, ইন্দ্রজিতের তীরে তার মৃত্যু হলেও তিনি পুনর্জীবন লাভ করেছেন
1.17) “… রোষে মহাবলী / মেঘনাদ; ফেলাইয়া… ” – এখানে কি ফেলার কথা বলা হয়েছে ?
(ক) কনক বলয়
(খ) রণসাজ
(গ) কুসুম দান
(ঘ)সবকটি
উত্তর – (ক) কনক বলয়
1.18) ” তব শরে মরিয়া বাঁচিল ” – | কার মরে বেঁচে ওঠার কথা বলা হয়েছে ?
(ক) রাবণ
(খ) রামচন্দ্র
(গ) বিভীষণ
(ঘ) বিরাট পুত্র
উত্তর – (খ) রামচন্দ্র
1.19) ” ছিঁড়িলা কুসুমদাম রোষে মহাবলী ” – ‘মহাবলী’ বলা হয়েছে –
(ক) রাবণ
(খ) মেঘনাদ
(গ) বীরবাহু
(ঘ) বিভীষণ
উত্তর – (খ) মেঘনাদ
1.20) বৈরীদল বেড়ে / স্বর্ণলঙ্কা, হেথা আমি____ মাঝে? ”
(ক) বামা দল
(খ) সখি দল
(গ) কপি দল
(ঘ) সবকটি
উত্তর – (ক) বামা দল
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
2.1) মেঘনাদবধ কাব্যের প্রথম সর্গের নাম কি ?
উত্তর – মাইকেল মধুসূদন দত্ত মেঘনাদবধ কাব্যের প্রথম সর্গের নাম রেখেছিলেন ‘অভিষেক’ |
2. 2) “ ছদ্দবেশী অম্বুরাশি-সুতা “ – কাকে বলা হয়েছে ?
উত্তর – দেবী লক্ষ্মীকে বলা হয়েছে |
2.3) “ বৃহন্নলারূপী কিরিটি “ – বলতে কার কথা বলা হয়েছে ?
উত্তর – অর্জুনের কথা বলা হয়েছে |
2.4) “ ছদ্দবেশী অম্বুরাশি-সুতা “ – কার ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন ?
উত্তর – উদ্ধৃত পঙক্তিটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা ‘অভিষেক’ থেকে নেওয়া | ‘অম্বুরাশি-সূতা’ ইন্দ্রজিতের মাতা প্রভাষার ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন |
2.5 ) “কে বধিল কবে / প্রিয়ানুজে ? “ – এখানে ‘প্রিয়ানুজ’ কাকে বলা হয়েছে ?
উত্তর – উদ্ধৃতাংশটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের রচিত ‘অভিষেক’ পদ্যর অংশ | এখানে ‘প্রিয়ানুজ’ বলতে ইন্দ্রজিতের ভাই বীরবাহুর কথা বলা হয়েছে |
2.6) ছদ্দবেশী লক্ষ্মী কোন সংবাদ নিয়ে এসেছিলেন ?
উত্তর – মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘অভিষেক’ কবিতায় ছদ্দবেশী লক্ষী ইন্দ্রজিতের প্রিয় অনুজ বীরবাহুর কথা বলা হয়েছে |
2.7) “ হা ধিক মোর ! “ – বক্তা কে ? এবং কেন তিনি নিজেকে ধিক্কার দিয়েছিলেন ?
উত্তর – উদ্ধৃতাংশটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা ‘অভিষেক’ পদ্যাংশ থেকে নেওয়া হয়েছে | উদ্ধৃতাংশটির বক্তা হলেন ইন্দ্রজিৎ |
তার স্বর্ণলঙ্কা যখন শত্রু দ্বারা পরিবেষ্টিত এবং তার প্রিয়ানুজ বীরবাহু শত্রুর হাতে নিহত, তখন তিনি প্রমোদ উদ্যানে প্রমীলাদের মাঝে অবস্থান করছেন | তার এইরূপ অবস্থান বেমানান বলে মনে হওয়ায়,তিনি নিজেকে ধিক্কার দিয়েছেন |
2.8) সীতাপতি রামচন্দ্রকে ‘মায়াবি’ আখ্যান দেওয়ার কারণ কি ?
উত্তর – সমস্ত দেবতাদের আশীর্বাদ ধন্য সীতাপতি রামচন্দ্র ইন্দ্রজিতের শরে মারা গিয়েও মায়াজাল-এর দ্বারা পুনরায় জীবিত হয়ে উঠেছিলেন | তাই তাকে মায়াবি বলা হয়েছে |
2.9) “ দেহ আজ্ঞা মোরে “- কে কার কাছে আজ্ঞা প্রার্থনা করেছেন ? তিনি কেন আজ্ঞা প্রার্থনা করেছেন ?
উত্তর – উদ্ধৃতাংশটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা ‘অভিষেক’ পদ্যাংশ থেকে নেওয়া হয়েছে | উদ্ধৃতাংশটির বক্তা হলেন ইন্দ্রজিৎ,তিনি তার পিতা রাবণের কাছে আজ্ঞা প্রার্থনা করেছেন |
তিনি দ্বিতীয় বার যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে রামচন্দ্র কে পুনরায় হত্যা করার সংকল্প করেছিলেন | তাই তিনি পিতৃ আজ্ঞা প্রার্থনা করেছিলেন |
2.10) “ সেনাপতির পদে বরিনু তোমারে “ – কে কাকে সেনাপতি পদে বরণ করেছিলেন ?
উত্তর – উদ্ধৃতাংশটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা অভিষেক পদ্যাংশ থেকে গৃহীত | রাক্ষসকুলপতি রাবণ তার পুত্র ইন্দ্রজিৎকে সেনাপতি পদে বরণ করেছিলেন |
2.11) ” মহাশোকী রাক্ষসাধিপতি ” – রাক্ষসাধিপতি বলতে কার কথা বোঝানো হয়েছে ?
উত্তর – মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা ‘অভিষেক’ পদ্যাংশে রাক্ষসাধিপতি রাবণের কথা বলা হয়েছে |
2.12) ” আগে পুজো ইস্টদেবে ” – কোথায় ইস্টদেবের পূজার কথা বলা হয়েছে ?
উত্তর – মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা ‘অভিষেক’ পদ্যাংশে নিকুম্ভিলা যঙ্গাগারে ইস্ট দেবের পূজার কথা বলা হয়েছে |
2.13) তারে ডরাও আপনি রাজেন্দ্র কাকে ভয় পাওয়ার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর – মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত অভিষেক কবিতায় সীতাপতি রামচন্দ্র কে ভয় পাওয়ার কথা বলা হয়েছে
2.14) ” বৈরীদল থেকে স্বর্ণলঙ্কা ” – ‘বৈরীদল’ বলে কাদের অভিহিত করা হয়েছে ?
উত্তর – মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘অভিষেক’ কবিতায় বৈরীদল বলতে রামচন্দ্রের সৈন্যদলকে অভিহিত করা হয়েছে |
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
3.1) ” হায় , বিধি বাম মম পতি | ” – কার উক্তি এমন উক্তির কারণ কি ?
উত্তর – মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে লঙ্কা পতি রাবণ একথা বলেছিলেন |
‘বিধি বাম’ এর অর্থ হল বিধাতা অসন্তুষ্ট,অর্থাৎ তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে বিধাতা অসন্তুষ্ট হয়েছে তাদের ওপরে | তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন | আসলে রাক্ষসকূল পতি রাবণ তার সর্বপ্রধান শত্রু রাম লক্ষণ এর কাছে ক্রমাগত পরাজিত হচ্ছিলেন, অথচ অবাক বিষয় হলো এই শত্রুদল তার পুত্র মেঘনাদের বীরত্বের কাছে একেবারেই নগণ্য ছিল | রাবণ পুত্র মেঘনাদ ইতিপূর্বেই রামকে প্রহার করেছিলেন কিন্তু তাসত্ত্বেও কোন এক দৈব কৃপায় সে যেন পুনরায় জীবিত হয়ে তার প্রিয়ানূজ বীরবাহু ও কুম্ভকর্ণ কে বধ করেছিল | এইসব অপ্রত্যাশিত ঘটনা গুলির জন্য রাক্ষসকুলপতি রাবণ এমন উক্তি করেছিলেন |
3.2) ” করজোড়ে কহিলা ” – উক্ত ব্যাক্তি করজোড় করে কি বলেছিলেন?
উত্তর – মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা ‘অভিষেক’ কাব্যাংশ থেকে উদ্ধৃত উক্তিটি গৃহীত | উক্ত অংশে রাবণ পুত্র মেঘনাদ হাতজোড় করে তার পিতা রাবণকে বলেছিলেন যে,তিনি জানতে পেরেছেন রাম তার হাতে নিহত হওয়ার পরেও এক দৈবশক্তির মায়াবলে আবার জীবিত হয়ে উঠেছেন | তিনি তার পিতা রাক্ষসপতি রাবণের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করেছিলেন যে , তিনি রামের মায়া বুঝে উঠতে পারেননি তবে তাকে যদি পুনরায় যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হয় তাহলে তিনি রামকে সমূলে নির্মূল করবেন |
কিভাবে পরিকল্পনামতো শত্রু নিধন করা যায় সে কথা মেঘনাদ তার পিতাকে জানিয়েছিলেন | তিনি অগ্নিবান নিক্ষেপ করে রামকে ভস্ম করে দিয়ে তারপরে বায়ুবান মেরে সেই ভস্ম কে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন | তিনি জীবিত অবস্থায় তাকে নাগপাশে বেঁধে এনে ফেলতে চেয়েছিলেন রাক্ষসপতি রাবণের চরণতলে |
3.3) ” হেনকালে প্রমিলা সুন্দরী ” – ‘হেনকালে’ বলতে কোন সময়ের কথা বোঝানো হয়েছে ? সেই সময় কি ঘটনা ঘটেছিল তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও |
উত্তর – উদ্ধৃত অংশটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে থেকে গৃহীত | উদ্ধৃত অংশে ‘হেনকাল’ বলতে রাবণ পুত্র মেঘনাদ যখন লঙ্কায় রওনা দেওয়ার জন্য রথে চেপেছিল, সেই সময়ের কথা বলা হয়েছে |
সেই সময় মেঘনাদ পত্নী প্রমিলা এগিয়ে এসে তার স্বামীর হাত দুটি ধরে জানতে চেয়েছিল তাকে এই প্রমোদ উদ্যানে ফেলে রেখে তিনি কোথায় চলে যাচ্ছেন | সে জানিয়েছিল যে তার স্বামী মেঘনাদ কে ছাড়া সে বাঁচতে পারবে না | প্রমিলা নিজেকে মেঘনাদের দাসী বলে পরিচয় দিয়ে মেঘনাদ কে জিজ্ঞাসা করেছিল তিনি কেন তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছেন | উত্তরে মেঘনাদ তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন এই বলে যে ‘সেই বন্ধন কেউ খুলতে পারবে না’ | এছাড়াও তিনি রামকে বধ করে শীঘ্রই ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার স্ত্রী প্রমীলার কাছ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন |
3.4) ” সাজিলা রথীন্দ্রষভ ” – ‘রথীন্দ্রষভ’ কে? তার সাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও |
উত্তর – উদ্ধৃতাংশটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা ‘অভিষেক’ কাব্যাংশ থেকে গৃহীত | এখানে রাবণ পুত্র মেঘনাদ কে রথীন্দ্রষভ বলা হয়েছে |
কাব্যাংশে রণক্ষেত্রে যাওয়ার পূর্বে মেঘনাদের সাজসজ্জার কিছু বিবরণ দেওয়া আছে | ছদ্দবেশী তার মাতৃরূপে দেবী লক্ষ্মীর কাছে স্বর্ণলঙ্কার দুরবস্থা সম্পর্কে অবগত হয়ে,মেঘনাদ সত্বর লঙ্কার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার জন্য উদ্যত হয়েছিলেন | এছাড়াও তিনি জানতে পেরেছিলেন যে তার পিতা স্বয়ং যুদ্ধ যাত্রার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন | তিনি এটা কখনই চাননি যে তার বর্তমানে তার পিতা যুদ্ধযাত্রা করবেন | তাই রামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার পূর্বে তিনি বীরের অলঙ্কারে সুসজ্জিত হয়েছিলেন | কাব্যাংশে উল্লেখ আছে যে হৈমবতী পুত্র কার্তিক তারকাসুর বধ করার জন্য যেমন সেজেছিলেন,মেঘনাদও ঠিক তেমন সেজেছিলেন যুদ্ধে যাওয়ার পূর্বে | এছাড়াও বিরাট রাজার পুত্র সহ গোধন উদ্ধার করার জন্য বৃহন্নলার ছদ্দবেশী অর্জুন শমীগান্দের তলায় যেমন সেজেছিলেন মেঘনাদের সাজও ছিল তেমনই | এরপর বীর সাজে সজ্জিত হয়ে মহারথী মেঘনাদ তার প্রিয় রথে চড়েছিলেন |