Class 8 Bengali chapter 19 নাটোরের কথা - অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর

নাটোরের কথা – অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লেখক পরিচিতি

খ্যাতনামা ভারতীয় চিত্রশিল্পী এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্র অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৭১ সালের ৭ আগস্ট কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। শিশুসাহিত্য রচনায় তাঁর দক্ষতা প্রশংসনীয়। ভার বিখ্যাত গ্রন্থ হল রাজ কাহিনী, নালক, শকুন্তলা, ক্ষীরের পুতুল, আলোর ফুলকি, বুড়ো আংলা, ঘরোয়া,  ইত্যাদি।

 

হাতে কলমে

১.১ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা দুটি বইয়ের নাম লেখো।

 উত্তর- ‘রাজ কাহিনী’ ও ‘ক্ষীরের পুতুল’ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা দুটি বই।

 ১.২ তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে কোন সম্পর্কে সম্পর্কিত।

উত্তর- তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইপো ছিলেন।

২. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :

 ২.১ ‘আজ সকালে মনে পড়ল একটি গল্প’—লেখকের অনুসরণে সেই ‘গল্প’টি নিজের ভাষায় বিবৃত করো।

উত্তর- স্বদেশিযুগে ভূমিকম্পের বছরে নাটোরের প্রভিনশিয়াল কনফারেন্সের কথা এখানে বলা হয়েছে। নাটোরের মহারাজা জগদিন্দ্রনাথের সভাপতিত্বে সে বছর নাটোরে প্রভিনসিয়াল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রস্তাব অনুযায়ী সেবারের কনফারেন্স বাংলা ভাষায় হবার কথা। যুবকেরা রবীন্দ্রনাথের দলে হলেও প্রবীণরা ইংরেজির পক্ষে ছিলেন। প্রেসিডেন্ট সাহেব ইংরেজিতে ভাষণ শুরু করায় ছেলের দল বাংলা বাংলা বলে চেঁচাতে লাগলেন। ফলে কেউই প্রায় বাংলা বলতে পারলেন না। শেষে পার্লামেন্টারি বক্তা লালমোহন ঘোষ চমৎকার বাংলায় ভাষণ দিলেন।

২.২ লেখকের বর্ণনা অনুযায়ী তখনকার নাটোরের মহারাজার নাম কী ছিল?

উত্তর- তখনকার নাটোরের মহারাজার নাম ছিল জগদিন্দ্রনাথ।

২.৩ তিনি কোন রিসেপশন কমিটি’র প্রেসিডেন্ট ছিলেন?

উত্তর- স্বদেশিযুগে ভূমিকম্পের বছরে নাটোরের প্রভিনসিয়াল কনফারেন্সের রিসেপশন কমিটির সভাপতি ছিলেন তিনি।

২.৪ ‘নাটোর নেমন্তন্ন করলেন সেই নেমন্তন্নের তালিকায় কাদের নাম ছিল বলে লেখক স্মরণ করতে পেরেছেন।

উত্তর- লেখকের মনে পড়ে ঠাকুরবাড়ির সকলকেই তিনি নিমন্ত্রণ করেছিলেন। লেখকের ন-পিসেমশাই জানকীনাথ ঘোষাল, ভবলিউ. সি. বোনার্জি, মেজোজ্যাঠামশাই, লালমোহন ঘোষ ও সুরেন্দ্র বাড়ুজ্যের নাম লেখক মনে করতে পারেন।

 ২.৫ ‘রওনা হলুম সবাই মিলে হই হই করতে করতে,—কোথায় রওনা হলেন? কীভাবেই বা রওনা হলেন?

উত্তর- লেখকেরা নাটোরের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। তাঁরা ট্রেনে চেপে সুসজ্জিত ধুতি, চোগাচাপকান পরে হই করতে রওনা হলেন।

২.৬ সরাঘাট থেকে লেখক ও তাঁর সঙ্গীরা কোন নদীতে স্টিমার চড়েছিলেন?

উত্তর- লেখক ও তাঁর সঙ্গীরা সরাঘাট থেকে পদ্মা নদীতে স্টিমারে চড়েছিলেন।

২.৭ স্টিমারে খাওয়া-দাওয়ার প্রসঙ্গ আলোচনায় লেখকের সরস মনের পরিচয় কীভাবে দেদীপ্যমান হয়ে উঠেছে তা বুঝিয়ে দাও।

উত্তর- স্টিমারের ডেকের ওপর চেয়ার টেবিল সাজিয়ে সবাই একটা লম্বা টেবিলে খেতে বসেছিলেন। একদিকে হোমরা চোমরা চাইরা আর অন্যদিকে দীপুদার পাশে লেখক আর ছোকরারা বসে খাচ্ছিলেন। খাওয়া শুরু হলে বয়রা চাইদের দিক থেকে শুরু করায় এবং মাঝে বসা এক চাই অত্যন্ত খাইয়ে হওয়ায় লেখকের দিক পর্যন্ত কোনো খাবারই ঠিকঠাক পৌঁড়াচ্ছিল না। একসাথে ছ-সাতখানা কাটলেট, অর্ধেক পুডিং সেই ভোজনরসিক চাই তুলে নেওয়ায় লেখক ও দীপুদা মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলেন। লেখক অমন জাইগ্যানটিক খাওয়া কখনও দেখেননি।

২.৮ ‘যেন ইন্দ্রপুরী’—কীসের সঙ্গে ইন্দ্রপুরীর তুলনা করা হয়েছে? কেনই বা লেখক এমন তুলনা করেছেন?

 উত্তর- নাটোরের রাজবাড়ি, যেখানে প্রভিনশিয়াল কনফারেন্স হবার কথা সেই বাড়ির সঙ্গে ইন্দ্রপুরীর তুলনা করা হয়েছে।নাটোরের রাজবাড়ি ও বৈঠকখানাকে সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছিল ঝাড়লণ্ঠন, তাকিয়া, দামি ফুলদানি ও কার্পেট দিয়ে। রাজবাড়িতে যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা, আন্তরিকতা, চাকর-বাকরদের সদা উপস্থিতি লক্ষ করা যায় তা কনফারেন্স হলে পাওয়ার ফলে লেখক এমন তুলনা করেছিলেন।

২.৯ ‘একেই বলে রাজসমাদর’—উদ্ধৃতিটির আলোকে নাটোরের মহারাজার অতিথি-বাৎসল্যের পরিচয় দাও।

উত্তর- অত্যন্ত আন্তরিক, আদরযত্ন ও ব্যবস্থাকে লেখক রাজসমাদর বলে অভিহিত করেছেন। সুশিক্ষিত চাকর বাকররা সবকিছু হাতের কাছে পৌঁছে দিচ্ছিল। সকলের জন্য ধুতি চাদর তৈরি ছিল। এ থেকে বোঝা যায় নাটোরের মহারাজা অত্যন্ত অতিথিবৎসল ছিলেন।

২.১০ ‘নাটোরের খুব আগ্রহ—কোন প্রসঙ্গে তাঁর আগ্রহের কথা এখানে বলা হয়েছে?

উত্তর- শিল্পী লেখক অবনীন্দ্রনাথ নাটোরের গ্রাম, পুরোনো বাড়িঘর, মন্দির দেখে স্কেচ করছিলেন। লেখকের স্কেচ করার বিষয়ে নাটোরের আগ্রহের কথা এখানে বলা হয়েছে।

২.১১ আগে থেকেই ঠিক ছিল’—আগে থেকে কী ঠিক থাকার কথা বলা হয়েছে। সেই উপলক্ষ্যে কোন পরিস্থিতি তৈরি পাঠ্যাংশে রয়েছে, তা আলোচনা করো।

উত্তর- নাটোরের প্রভিনশিয়াল কনফারেন্সের সমস্ত কাজকর্ম ও ভাষণ বাংলা ভাষায় হবে বলে আগে থেকে ঠিক করে রাখার কথা বলা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের নেতৃত্বে ছেলে ছোকরারা বাংলায় কাজকর্মের প্রস্তাব করলেও প্রবীণরা ইংরেজি ভাষার পক্ষে ছিলেন। প্রেসিডেন্ট ইংরেজিতে ভাষণ শুরু করায় ছেলের দল বাংলা বাংলা বলে চিৎকার শুরু করল। ফলে কেউই প্রায় ভালো করে বলতে পারলেন না এবং বাংলাভাষাতেই সভা পরিচালিত হলো।

 ২.১২ নাটোরের প্রভিনসিয়াল কনফারেন্সে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোন গানটি পরিবেশন করেছিলেন?

উত্তর- প্রভিনসিয়াল কনফারেন্সে রবীন্দ্রনাথ সম্ভবত ‘সোনার বাংলা’ গানটি পরিবেশন করেছিলেন।

২.১৩ আমাদের তো জয়জয়কার।’——কী কারণে লেখক ও তাঁর সঙ্গীদের জয়জয়কার হলো?

উত্তর- লেখক ও তাঁর ছোকরা সঙ্গী তৎসহরবীন্দ্রনাথের সমর্থনে নাটোর প্রভিনিশিয়াল কনফারেন্সের কাজকর্ম বাংলা ভাষায় পরিচালিত হয়। প্রবীণদের ইংরেজি ভাষার দাবিকে নস্যাৎ করে বাংলা ভাষার জন্য লেখক ও তাঁর সঙ্গীদের প্রথম প্রকাশ্য লড়াই জয়লাভ করেছিল।

২.১৪ ‘সেই প্রথম আমরা পাবলিকলি বাংলা ভাষার জন্য লড়লুম’—লেখকের অনুসরণে সেই ‘লড়াই’ এর বিশদ বিবরণ

উত্তর- নাটোরের প্রভিনসিয়াল কনফারেন্স বাংলা ভাষায় করার জন্য রবীন্দ্রনাথের নেতৃত্বে লেখক ও তাঁর সমবয়সি ছেলেছোকরার দল সক্রিয় ছিল। প্রবীণরা ইংরেজি ভাষার পক্ষে সওয়াল করায় উপস্থিত সদস্যরা দুভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। সভার শুরুতে সভাপতি ইংরেজি ভাষায় ভাষণ শুরু করে নবীনদের বাংলা বাংলা চিৎকারের মাধ্যমে বাধার সম্মুখীন হন। তারপরে আর কোনো বক্তাই ভালো বাংলা বলতে না পারার কারণে সংক্ষেপে ভাষণ দিলেন। পরিশেষে ঈসাধারণ বাগ্মী লালমোহন ঘোষ বাংলায় সুন্দর ভাষণ দেন।

৩. নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করো :

৩.১ আজ সকালে মনে পড়ল একটি গল্প – সেই প্রথম স্বদেশি যুগের সময়কার, কী করে আমার বাংলা ভাষার প্রচলন করলুম। (জটিল বাক্যে)

 উত্তর- আজ সকালে মনে পড়ল একটি গল্প—যেটি সেই প্রথম স্বদেশি যুগের সময়কার, সেখানে কী করে আমার বাংলা ভাষার প্রচলন করলুম।

৩.২ ভূমিকম্পের বছর সেটা। প্রভিনশিয়াল কনফারেন্স হবে নাটোরে। (বাক্যদুটিকে জুড়ে লেখো)

উত্তর- ভূমিকম্পের বছর প্রভিনশিয়াল কনফারেন্স হবে নাটোরে।

৩.৩ নাটোর নেমন্তন্ন করলেন আমাদের বাড়ির সবাইকে। (যৌগিক বাক্যে)

উত্তর- নাটোর নেমন্তন্ন করলেন আমাকে এবং আমাদের বাড়ির সবাইকে।

৩.৪ আরও অনেকে ছিলেন সবার নাম কি মনে আসছে এখন। (না-সূচক বাক্যে)

উত্তর- আরও অনেকে ছিলেন সবার নাম এখন মনে আসছে না।

৩.৫ নাটোর বললেন, কিছু ভেবো না। সব ঠিক আছে। (পরোক্ষ উক্তিতে)

উত্তর- নাটোর উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে কিছু ভাবতে নিষেধ করলেন কারণ সব ঠিক আছে।

 ৩.৬ অমন ‘জাইগ্যানটিক’ খাওয়া আমরা কেউ কখনো দেখিনি। (নিম্নরেখ শব্দটির পরিবর্তে বাংলা শব্দ ব্যবহার করে বাক্যটি আবার লেখো)

উত্তর- অমন বিশাল খাওয়া আমরা কেউ কখনও দেখিনি।

৩.৭ ছোকরার দলের কথায় আমলই দেন না। (হাঁ-সূচক বাক্যে)

 উত্তর- ছোকরার দলের কথা উপেক্ষা করে।

৩.৮ ন-পিসেমশাই জানকীনাথ ঘোষাল রিপোর্ট লিখছেন আর কলম ঝাড়ছেন। (বাক্যটিকে দুটি বাক্যে ভেঙে লেখো)

উত্তর- ন-পিসেমশাই জানকীনাথ ঘোষাল রিপোর্ট লিখছেন। তিনি লিখতে লিখতে কলম ঝাড়ছেন।

৩.৯ গরম গরম সন্দেশ আজ চায়ের সঙ্গে খাবার কথা আছে যে অবনদা। (নিম্নরেখ শব্দের প্রকার নির্দেশ করো এবং অর্থ এক রেখে অন্য শব্দ ব্যবহার করে বাক্যটি আবার লেখো।)

উত্তর- গরম গরম—শব্দদ্বৈত। নরম নরম সন্দেশ আজ চায়ের সঙ্গে যাবার কথা আছে যে অবনদা।

৩.১০ হাতের কাছে খাবার এলেই তলিয়ে দিতেন। (জটিল বাক্যে)

উত্তর- যখন হাতের কাছে খাবার আসত, তখন তলিয়ে দিতেন।

৪. নীচের বাক্যগুলি থেকে সন্ধিবদ্ধ শব্দগুলি খুঁজে নিয়ে সন্ধি বিচ্ছেদ করো :

৪.১ স্টিমারে নির্ভাবনায় উঠে গেলুম।

উত্তর- নির্ভাবনায় = নিঃ+ ভাবনায়।

 ৪.২ তিনি অর্ধেকের বেশি নিজেরপ্লেটে তুলে নিলেন।

 উত্তর- অর্ধেকের = অর্থ এক-এর।

৫. নীচের শব্দগুলির ধ্বনিতাত্ত্বিক বিচার করো: হাঙ্গাম, আপসোস, চান, তক্কাতক্কি, জিজ্ঞেস

উত্তর-

হাঙ্গাম- হাঙ্গামা >  হাঙ্গাম স্বরলোপ।
তক্কাতক্কি- তর্কাতর্কি >তক্কাতক্কি–সমীভবন।
আপসোস– আফসোস > আপসোস-বর্ণবিকার।
জিজ্ঞেস— জিজ্ঞাসা> জিজ্ঞেস – স্বরসংগতি।
চান– স্নান > চান–বর্ণবিকার।

৬. নীচের শব্দগুলির প্রকৃতি-প্রত্যয় নির্দেশ করো : স্বদেশি, জিজ্ঞাসা, ঢাকাই।

উত্তর-

স্বদেশি— স্বদেশ + ই
জিজ্ঞাসা- জ্ঞা +সন + অ + আ
ঢাকাই— ঢাকা + আই।

৭. ব্যাসবাক্যসহ সমাসের নাম লেখো : চোগাচাপকান, বিছানাবাক্স, ইন্দ্রপুরী, রাজসমাদর, গল্প-গুজব, অন্দরমহল।

উত্তর-

চোগাচাপকান— চোগা ও চাপকান দ্বন্দ্ব সমাস।
রাজসমাদর- রাজার সমাদর সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস।
বিছানাবাক্স– বিছানা ও বাক্স দ্বন্দ্ব সমাস।
ইন্দ্রপুরী— ইন্দ্রের পুরী সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস।
গল্প-গুজব- গল্প ও গুজব খন্দু সমাস।
অন্দরমহল- অন্দরের মহল সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস।

৮। কোনটি কী ধরনের সর্বনাম তা লেখো: আমরা, সেটা, তাঁকে, সবাই, তিনি, আমি, এটা।

উত্তর-

আমরা- ব্যক্তিবাচক সর্বনাম।
সবাই – সমষ্টিবাচক সর্বনাম।
তিনি- ব্যক্তিবাচক সর্বনাম।
এটা – নির্দেশক সর্বনাম।
সেটা – নির্দেশক সর্বনাম।
তাঁকে – ব্যক্তিবাচক সর্বনাম।

About The Author

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top