Table of Contents
কবি পরিচিতি
জন্ম : পাবলো নেরুদা ছিলেন একজন বিদেশী কবি | তিনি ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে ১২ জুলাই চিলিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন | তার আসল নাম নেফতালি রিকার্দো রেয়েস বাসোয়ালতো | তিনি ”পাবলো নেরুদা” ছদ্মনামে–ই লেখালেখি করতেন|
সাহিত্য জীবন : পাবলো নেরুদার লেখা “ Twenty Love Poems and a Song of Despair “ কাব্য গ্রন্থটির জন্য তিনি কবিখ্যাতি অর্জন করেছিলেন | চিলিতে রাজনৈতিক সমস্যার কারণে নেরুদাকে আত্মগোপন করতে হয় আর সেই সময় তিনি লিখেছিলেন “ Canto General “ .১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে নেরুদা পান আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার | ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে তাকে দেওয়া হয় নোবেল পুরস্কার | তার লেখা উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হল Extravagaria , The Captains Verses , Still Another Day , World’s End ইত্যাদি |
মৃত্যু: চিলিতে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে ২৩ শে সেপ্টেম্বর পাবলো নেরুদার মৃত্যু হয়|
সারসংক্ষেপ
কবিতাটির বিষয়বস্তু হলো প্রেম বনাম যুদ্ধ | কবিতাটিতে কথক বলেছেন তিনি তাঁর প্রিয়তমাকে দরজায় দাঁড় করিয়ে রেখে চলে গিয়েছিলেন দেশ ছেড়ে অনেক দূরে | তার প্রিয়তমা দরজায় দাঁড়িয়ে তার ফেরার অপেক্ষা করছিল | তিনি যাকে প্রতীক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে এসেছিলেন,তার সেই প্রিয়তমা জানতো না তিনি আর কখনো ফিরবেন না | কথক বিদায় নেওয়ার পরের সময় স্বাভাবিক নিয়মে অতিবাহিত হতে থাকে | তিনি বিদায় নেওয়ার পরে সে রাস্তা দিয়ে উদ্দেশ্যহীনভাবে কুকুর, কখনো বা এক খ্রিষ্টান সন্ন্যাসিনী হেঁটে গিয়েছেন | তারপর কালের নিয়মে একসময় বৃষ্টি এসে মুছে দিয়েছিল কথকের পায়ের চিহ্ন | সময় বয়ে যাওয়ার চিহ্নস্বরূপ সে রাস্তায় ঘাস গজে উঠেছিল | প্রিয়জনের জন্য অপেক্ষারতা মেয়েটির মাথার ওপর নেমে এসেছিল যেন ভারী পাথরের মত এক একটি বছর | প্রতীক্ষার দুঃসহ যন্ত্রণায় সে যেন ভেঙে পড়েছিল | তারপর একদিন শহরে হঠাৎ করে যুদ্ধ শুরু হয় শহরে | এরপর চলতে থাকে তান্ডব-ধ্বংসলীলা,হত্যা, রক্তের স্রোত | এ যুদ্ধ এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল যেখানে শিশুরা ও নিস্তার পাইনি,তাদেরও হত্যা করা হয়েছিল | শহরের বাড়ি ঘরদোর সব ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল | কিন্তু তবুও কথকের প্রিয়তমার মৃত্যু ঘটেনি | মন্দিরে র অনেক প্রাচীন দেবতাদের শান্ত- হলুদ মূর্তি যারা ধ্যানরত ছিল,তারাও উল্টে পড়ে গিয়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল | যুদ্ধের ভয়াবহতায় দেবতারা নিজেদের রক্ষা করতে পারলেন না | কথকের সেই ফেলে আসা বাড়ি, বারান্দা, ঝুলন্ত বিছানা, গোলাপি গাছ, চিমনি, জল তরঙ্গ যা কিছু ছিল তার সবই যুদ্ধের দাপটে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল | প্রাণচঞ্চল শহরে শুধু পড়ে থাকে পাথরের মূর্তির মাথা ও রক্তের কালো দাগ, অর্থাৎ মৃত মানুষের ছিন্নমাথা বড় বড় পাথরের মত রাস্তায় পড়ে আছে এবং তাতে লেগে আছে শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগ |
1. সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখ:
1.1)”অসুখী একজন” কবিতাটি যে মূল কবিতার ভাষান্তর রূপ , তার কবি হলেন –
(ক) পাবলো নেরুদা
(খ)পাবলো পিকাসো
(গ)পাবলো সাকস্কি
(ঘ) পাবলো পেনিও
উত্তর- (ক) পাবলো নেরুদা
1.2) কবি পাবলো নেরুদার আসল নাম –
(ক) নেফতালি রেস বাসোআলতো
(খ) নেফতালি রিকার্দো রেইয়েস বাসোআলতো
(গ) নেফতালি রিকার্দো পাবলো নেরুদা
(ঘ) নতালি রিকার্দো পাবলো রেইয়েস বাসোআলতো
উত্তর- (খ) নেফতালি রিকার্দো রেইয়েস বাসোআলতো
1.3) পাবলো নেরুদা জন্মগ্রহণ করেছিলেন –
(ক)ফ্রান্স
(খ) জার্মানি
(গ) ইতালি
(ঘ) চিলি
উত্তর-(ঘ)চিলি
1.4) পাবলো নেরুদার রচিত একটি কাব্যগ্রন্থ হল-
(ক) Extravagaria
(খ) Extravagna
(গ) The Capital Verses
(ঘ) Intimacies
উত্তর-(ক) Extravagaria
1.5) “আমি তাকে ছেড়ে দিলাম”- কথক কাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন?
(ক) তার মা
(খ) তার বাড়ি
(গ) তার প্রেমিকা
(ঘ) তার কুকুর
উত্তর-(গ) তার প্রেমিকা
1.6) “বৃষ্টিতে ধুয়ে দিল”-বৃষ্টিতে কী ধুয়ে দিল?
(ক) রক্তের দাগ
(খ) পায়ের দাগ
(গ) উভয়ই
(ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর-(খ) পায়ের দাগ
1.7) “বছরগুলো নেমে এলো তার”-
(ক) মাথার ওপর
(খ) পায়ের ওপর
(গ) জীবনের ওপর
(ঘ) চলার পথে
উত্তর-(ক) মাথার ওপর
1.8) “ঘাস জন্মালে রাস্তায়”- ঘাস জন্মানোর কারণ-
(ক) সেই রাস্তায় কেউ চলাফেরা করে না তাই
(খ) রাস্তাটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাই
(গ) রাস্তাটি যুদ্ধে ফলে নষ্ট হয়ে যায়
(ঘ) সেই রাস্তা দিয়ে কেউ ফিরে আসেনি
উত্তর- (ঘ) সেই রাস্তা দিয়ে কেউ ফিরে আসেনি
1.9) যুদ্ধকে ‘রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মত’ মনে করা হয় কারণ-
(ক) কবির বাসস্থান ছিল এক আগ্নেয়পাহাড়ে ঘেরা অঞ্চলে
(খ) যুদ্ধ কখোনো যে হয় তাই কেউ জানত না
(গ) যুদ্ধ আগ্নেয় পাহাড়ের মত ই ভয়ঙ্কর
(ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর-(গ) যুদ্ধ আগ্নেয়পাহাড়ের মত ই ভয়ঙ্কর
1.10)”মৃত্যু হলো না”- কার মৃত্যু না হওয়ার কথা বলা হয়েছে?
(ক)রাস্তার কুকুরটির
(খ) কবির
(গ) অপেক্ষারতা মেয়েটির
(ঘ) সবকটি
উত্তর-(গ) অপেক্ষারতা মেয়েটির
1.11) “শিশু আর বাড়িরা খুন হলো”- কখন খুন হয়েছিল?
(ক) যখন মেয়েটি একা হয়ে পড়ল
(খ) যখন কবির সাধের গোলাপি গাছ,চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ সব চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল
(গ) যখন মেয়েটি একা হয়ে পড়লো
(ঘ) যখন হঠাৎই শহরে রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মত যুদ্ধ এলো
উত্তর-(ঘ) যখন হঠাৎই শহরে রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মত যুদ্ধ এলো |
1.12) হাজার হাজার বছর ধরে কারা ধ্যানে ডুবেছিলেন?
(ক) মন্দিরের ভক্তগণ
(খ) মন্দিরের দেবতাগণ
(গ) শান্ত হলুদ দেবতারা
(ঘ) সবকটি
উত্তর- (গ) শান্ত হলুদ দেবতারা
1.13) “তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারলো না | “- এখানে কাদের কথা বোঝানো হয়েছে বলা হয়েছে?
(ক) শিশুরা
(খ) দেবতারা
(গ) রাস্তার কুকুররা
(ঘ) সৈনিকরা
উত্তর- (খ) দেবতারা
1.14) কবিতায় কবিতার কথক ঘুমিয়ে ছিলেন-
(ক) ঝুলন্ত বিছানায়
(খ) বিছানায়
(গ) মেঝেতে
(ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর-(ক) ঝুলন্ত বিছানায়
1.15) যুদ্ধের ভয়াবহ আগুনের দাবদাহে কবির যে বাদ্যযন্ত্রটি নষ্ট হয়ে গেল,সেটি হল-
(ক) বিনা
(খ) হারমোনিয়াম
(গ) জল তরঙ্গ
(ঘ) তবলা
উত্তর- (গ) জল তরঙ্গ
1.16) “সেখানে ছড়িয়ে রইল কাঠকয়লা”- কাঠকয়লা ছড়িয়ে রইল যেখানে –
(ক) শহর ছিল
(খ) নগরী ছিল
(গ) উভয়ই
(ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর- (ক) শহর ছিল
1.17) “আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়”-সেই মেয়েটির আজও অপেক্ষায় থাকার কারণ –
(ক) সে জানতো না যে কথক আর কখনো ফিরে আসবে না তার কাছে
(খ) সে জানতো যুদ্ধ শেষ হলে কথক ঠিকই তার কাছে ফিরে আসবে
(গ) সে সবসময় দুঃখ পেতে ভালোবাসতো
(ঘ) কোনাটিই নয়
উত্তর-(ক) সে জানতো না যে কথক আর কখনো ফিরে আসবে না তার কাছে
2. সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর:
2.1)“ অসুখী একজন “ কবিতাটি কার লেখা?
উত্তর- পাবলো নেরুদা |
2.2) যুদ্ধের ফলে কাদের মৃত্যু ঘটেছিল ?
উত্তর- যুদ্ধের ফলে শিশু এবং বাড়ি দের মৃত্যু ঘটেছিল |
2.3) কবি কাকে কোথায় দাঁড় করিয়ে রেখে চলে গিয়েছিলেন?
উত্তর- কবিতার প্রেয়সীকে দরজায় অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে চলে গিয়েছিলেন |
2.4) কবির ফেলে আসা বাড়িটির বর্ণনা দাও |
উত্তর- কোভিদ সেই ফেলে আসা বাড়ির বারান্দায় ছিল ঝুলন্ত একটি বিছানা , ছড়ানো করতালের মতো পাতাযুক্ত একটি গোলাপি গাছ , চিমনি এবং প্রাচীন একটি জল তরঙ্গ (বাদ্যযন্ত্র) |
2.5) ”বৃষ্টিতে ধুয়ে দিল আমার পায়ের দাগ” – উক্তিটির দ্বারা কবি কি বোঝাতে চেয়েছেন ?
উত্তর- অসুখী একজন কবিতায় কবি পাবলো নেরুদা উক্ত লাইনের মাধ্যমে সময়ে প্রবাহমান কাকে বোঝাতে চেয়েছেন |
2.6) “ শিশু আর বাড়িরা খুন হলো “ – শিশু আর বাড়িরা খুন হয়েছিল কেন ?
উত্তর- এক ভয়াবহ যুদ্ধের পরিণাম হিসেবে শিশু আর বাড়িরা খুন হয়েছিল |
2.7) কবি পাবলো নেরুদার প্রকৃত নাম কি ?
উত্তর– অসুখী একজন কবিতার লেখক কবি পাবলো নেরুদার প্রকৃত নাম নেফতালি রিকার্ডো রেইয়েস বাসোআলতো |
2.8) “ তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারলো না “ – কারা আর স্বপ্ন দেখতে পারলো না ?
উত্তর- পাবলো নেরুদার লেখা অসুখী একজন কবিতায় উল্লেখিত মন্দিরের প্রাচীন শান্ত হলুদ দেবতারা আর স্বপ্ন দেখতে পারলেন না |
2.9) “ সব চূর্ণ হয়ে গেল “ – কিসের কারনে কি কি চূর্ণ হয়ে গিয়েছিল ?
উত্তর– পাবলো নেরুদার লেখা অসুখী একজন কবিতায় ভয়াবহ যুদ্ধের ফলে কবি র ফেলে আসা মিষ্টি বাড়ি এবং সেই বাড়িতে থাকা তার প্রিয় কিছু জিনিসপত্র ,যেমন – তার ঝুলন্ত বারান্দা , গোলাপি গাছ , চিমনী এবং একটি প্রাচীন জল তরঙ্গ সবই চূর্ণ হয়ে গিয়েছিল |
2.10) “ সেখানে ছিল শহর “ – সেখানে তখন শহর ছিল এখন সেখানে কি আছে ?
উত্তর– পাবলো নেরুদার লেখা অসুখী একজন কবিতায় সেখানে একসময় প্রাণচঞ্চল একটি শহর ছিল | ভয়াবহ যুদ্ধের ফলে সেইসব অঞ্চল পরিণত হয়েছে এক নির্জীব শ্মশান পুরীতে | সেখানে যুদ্ধের পরে অবশিষ্ট ছিল কাঠ কয়লা , দোমড়ানো লোহা , মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা ও রক্তের কালো দাগ |
2.11) ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি বাংলায় কে অনুবাদ করেছিলেন ?
উত্তর– কবি নবারুণ ভট্টাচার্য |
2.12) “ নেমে এলো তার মাথার ওপর “ – কার মাথার ওপর কি নেমে এলো ?
উত্তর- পাবলো নেরুদার লেখা অসুখী একজন কবিতায় কথক এর জন্য দরজায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষারতা তার প্রিয়তমার মাথায় নেমে এলো একের পর এক কেটে যাওয়া বছরগুলো অর্থাৎ সময়ের বোঝা নেমে এলো তার মাথার ওপর পাথরের ন্যায় ভারী হয়ে |
2.13) “ ঘাস জন্মালে রাস্তায় “ – কোন রাস্তার কথা বলা হয়েছে ?
উত্তর- পাবলো নেরুদার লেখা অসুখী একজন কবিতায় কবি যে রাস্তা দিয়ে তার বাড়ি ছেড়ে অনেক দূরে পথে পাড়ি দিয়েছিলেন সেই রাস্তার কথাই বলা হয়েছে |
2.14) “ সে জানতো না আমি আর কখনো ফিরে আসবো না “ – কে জানতো না ? কার ফিরে আসার কথা বলা হয়েছে এখানে ?
উত্তর– পাবলো নেরুদার লেখা অসুখী একজন কবিতায় কথকের প্রিয়তমা জানতেন না যে কখনো ফিরে আসবেন না |
এখানে কবিতার কথক এর ফিরে আসার কথা বলা হয়েছে |
2.15) শান্ত হলুদ দেবতারা হাজার হাজার বছর ধরে কি করছিলেন ? উত্তর- শান্ত হলুদ দেবতারা ধ্যানে ডুবে থেকে স্বপ্ন দেখছিলেন |
3. ব্যাখ্যা ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর:
3.1 ” সেই মেয়েটির মৃত্যু হলো না “- মেয়েটি কে? তার মৃত্যু না হওয়ার কারণ কী?
উত্তর– চিলিয়ান কবি পাবলো নেরুদার লেখা অসুখী একজন কবিতায় কথক বলেছেন ভয়াবহ যুদ্ধের ফলে শহর ধ্বংস হয়ে গেছে | শিশুরা খুন হয়ে গিয়েছে কেবল একটি মাত্র মেয়ের ই মৃত্যু হয়নি | উদ্ধৃতাংশটিতে উল্লেখিত সেই মেয়েটি হল কথকের প্রিয়তমা |
কবিতাটিতে কথক নিজের বাড়ি ও প্রিয়তমা কে ছেড়ে যখন চলে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি জানতেন না যে তার হয়তো আর ফেরা হবেনা | কিন্তু তার চলে যাওয়ার সময় তার প্রিয়তমা তার জন্য দরজায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল তিনি কবে আবার ফিরে আসবেন | কারণ তিনি জানতেন না যে সে আর কখনো ফিরবে না | কবিতা সূত্রে আমরা অনুমান করতে পারি কথক ছিলেন একজন যোদ্ধা | মেয়েটি তার প্রিয়জনের ফিরে আসার দিন গুনতে শুরু করে | আস্তে আস্তে একটা সপ্তাহ,একটা মাস ও একটি একটি করে বছরও পেরিয়ে যায় | কিন্তু মেয়েটির কথক এর জন্য অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষার শেষ হয় না | কিন্তু এদিকে সময় বয়ে যায় সময়ের মত | এরপর শহরে ভয়াবহ যুদ্ধ নেমে এলো | শহরের সমস্ত জায়গায় আগুন লেগে গেল | যুদ্ধ এতটাই ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছিলো যে , তার রোশ থেকে শিশুরাও রেহাই পেল না | শহরের সমস্ত ঘরবাড়ির সঙ্গে সঙ্গে মন্দির গুলি ও ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল | মন্দিরে হাজার বছর ধরে ধ্যানে মগ্ন থাকা শান্ত হলুদ দেবতারাও নিজেদের রক্ষা করতে পারলেন না যুদ্ধের কবল থেকে | কিন্তু তবুও অপেক্ষারতা মেয়েটির মৃত্যু হলো না,কারণ মেয়েটি হল কবিতাতে প্রেমের প্রতীক আর বলাবাহুল্য ভালোবাসার কখনো ধ্বংস বা মৃত্যু হয় না,তাই মেয়েটির মৃত্যু হয়নি|
3.2) “তারপর যুদ্ধ এলো”- যুদ্ধ কিভাবে এসেছিল?যুদ্ধ আসার পরবর্তী অবস্থার বর্ণনা দাও|
উত্তর– পাবলো নেরুদার লেখা অসুখী একজন কবিতাটি রচিত হয়েছিল কোন এক যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে | কবিতায় কবির মতে যুদ্ধ এসেছিল “রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মত” |
কবিতাটি তে আলোচিত হয়েছে এক সর্বগ্রাসী ভয়াবহ রক্তক্ষরণকারি যুদ্ধ নিয়ে | একসময় যে শহরটি ছিল প্রাণবন্ত,হঠাৎই যুদ্ধে নির্মম আঘাতে কিভাবে সবকিছু ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে তা কবি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন | যুদ্ধকে তিনি কবিতায় আগ্নেয়গিরির সাথে তুলনা করেছিলেন | এই ভয়ংকর যুদ্ধের দামামা বাজার ফলে পাল্টে গিয়েছিল কবির পরমপ্রিয় চেনা শহরের ছবি | যুদ্ধের ফলে আগুন লেগে যায় সমস্ত শহরে,সমস্ত কিছু পুড়ে ছাই হয়ে ধ্বংস পুরীতে পরিণত হয় | বহু নিরীহ প্রাণী,মা,শিশু,মানুষ প্রান হারায় | এমনকি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল দেবতাদের মন্দির ও মূর্তি | ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় কবির ফেলে যাওয়া নির্দিষ্ট বাড়িটিও | শহরের রাস্তায় শুধু পড়ে থাকে থাকে মৃত মানুষের পাথরের মত নিস্তেজ হয়ে যাওয়া মাথা ও শরীর | আর থাকলো রক্তের শুকিয়ে যাওয়া কালো দাগ |
3.3) “আর একটার পর একটা পাথরের মত / পরপর পাথরের মত,বছরগুলো / নেমে এল তার মাথার ওপর”-পাথরের সঙ্গে কিসের তুলনা করা হয়েছে ? তার বলতে কার কথা বোঝানো হয়েছে ? কেন এরূপ বলা হয়েছে ?
উত্তর- পাবলো নেরুদার রচিত ‘অসুখী একজন’ কবিতায় বছরকে অর্থাৎ সময়কে পাথরের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে |
কবি এখানে ‘তার’ বলতে নিজের প্রিয়তমাকে বুঝিয়েছেন |
কবি যখন বাড়ি ছেড়ে তার প্রিয়তমাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাচ্ছিলেন,তখন তিনি মনে মনে জানতেন যে তার আর কখনো ফেরা হবেনা | তার প্রিয়তমা তার আসার প্রতীক্ষা করে যাচ্ছিলেন দিনের পর দিন | এভাবে এক সপ্তাহ,এক মাস,এক বছর আস্তে আস্তে বছরের পর বছর যেতে লাগলো কিন্তু তার প্রতিক্ষার অবসান ঘটানোর জন্য তিনি আর ফিরে এলেন না | প্রতীক্ষার যন্ত্রণায় তার প্রেয়সি এতটাই কাতর হয়ে পড়েছিল যে এক একটি বছর যেন হয়ে উঠেছিল তার কাছে পাথর সম এবং দুঃসহনীয় কষ্টের | তাই কবি প্রশ্নোদ্ধৃত উক্তিটি করেছিলেন তার প্রেয়সির উদ্দেশ্যে |